কলকাতা: নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশে নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ করার সময়সীমা বাড়ল। নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার সময়সীমা বাড়ল সুপ্রিম কোর্ট। আগামী বছর ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত চাকরি করতে পারবেন 'যোগ্য' চাকরিহারারা। ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের বদলে সময়সীমা বেড়ে ২০২৬ সালের ৩১ অগাস্ট হল। আগামী বছর ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত চাকরি করতে পারবেন 'যোগ্য' চাকরিহারারা। ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত বেতনও পাবেন। (SSC Case)

Continues below advertisement

ইতিমধ্যেই নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশের নিয়োগ চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সেরে ফেলতে হবে বলে এর আগে জানিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত 'যোগ্য' চাকরিহারারা সবেতন চাকরি করতে পারবেন বলেও জানানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সেই সময়সীমা বাড়িয়ে আগামী বছর ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত বাড়িয়ে দিল শীর্ষ আদালত। (SSC Recruitment Case)

সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন নিয়ে আদালতে গিয়েছিল রাজ্যের শিক্ষা দফতর। তাদের সেই আবেদনে সায় দিল আদালত। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ জানিয়েছিল, যে পদ্ধতিতে নিয়োগ চলছে, তাতে আরও কিছুটা সময় প্রয়োজন। আর তাতেই আরও আটমাস সময়সীমা বৃদ্ধি করে আদালত। যাঁরা নির্দিষ্ট ভাবে 'অযোগ্য' বলে চিহ্নিত হননি, এবং আদালতের নির্দেশেই 'যোগ্য' হিসেবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছিলেন, তাঁদের কাজের সময়সীমাও বাড়ানো হল। ওই সময়কালে বেতন পাবেন তাঁরা।

Continues below advertisement

সুপ্রিম কোর্ট যখন চাকরি বাতিল করে, সেই সময়ই মধ্যশিক্ষা পর্ষদ জানায়, এখনই সকলকে সরিয়ে দিলে স্কুলের পঠনপাঠন বিঘ্নিত হবে এবং শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। সেই নিরিখে 'যোগ্য' শিক্ষক-শিক্ষিকারা কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই নতুন করে নিয়োগ সেরে ফেলতে হবে রাজ্যকে। সেই সময়সীমাই এদিন বাড়ল।

আদালতের এই নির্দেশে রাজ্য সরকার এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনও স্বস্তি পেল বলে মনে করা হচ্ছে। দুর্নীতির জেরে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলেছিল আদালত। এবছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই সেই প্রক্রিয়া শেষ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ওই সময়সীমার মধ্যে যে সবকিছু সম্পন্ন হওয়া সম্ভব নয়, সেকথা জানায় পর্ষদ। তাদের সেই আবেদনে অনুমোদন মিলল। 

আদালতের নির্দেশ মেনে ইতিমধ্যেই নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশের পরীক্ষা নিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। গত ৭ এবং ১৭ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা হয়, বেরিয়েছে লিখিত ফল। একাদশ-দ্বাদশের ইন্টারভিউ-ও শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে নবম-দশমের ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া এবং ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। একাদশ-দ্বাদশের মেধাতালিকাও প্রকাশিত হয়নি এখনও। কাউন্সেলিং, নিয়োগের সুপারিশ, স্কুলে সুপারিশপত্র পাঠানোর কাজও বাকি আছে। তাই প্রায় ৫.৫ লক্ষ পরীক্ষার্থী যেখানে পরীক্ষা দিয়েছেন, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গোটা প্রক্রিয়া কী ভাবে সম্ভব হবে, প্রশ্ন উঠছিল। কমিশন একাদশ-দ্বাদশের ক্ষেত্রে ১৫ দিন এবং নবম-দশমের ক্ষেত্রে তিন মাস বাড়তি সময়সীমা চাইছিল। সেই মতো মধ্যশিক্ষা পর্ষদ আগামী বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বৃদ্ধি করার আবেদন জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত অগাস্ট পর্যন্ত সময়সীমা বাড়িয়েছে আদালত।

দুর্নীতির কারণে যে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা বঞ্চিত হয়েছেন, যে শিক্ষক-শিক্ষিকারা চাকরি হারিয়েছেন, তাঁরা অন্তত বড় স্বস্তি পেলেন আদালতের এই নির্দেশে। সেই সঙ্গে হাতে সময় পেল পর্ষদও। চাকরিহারা এক শিক্ষক বলেন, "এটা সাময়িক বন্দোবস্ত, যা হওয়ারই ছিল। আমরা স্থায়ী সমাধান চাইছি। ২০১৬ প্যানেলে যেখানে অযোগ্যরা চিহ্নিত, সেখানে যোগ্যদের কেন ফেরাচ্ছে না রাজ্য, কেন আদালতে তালিকা দিচ্ছে না? পরীক্ষা যখন হয়, সেই সময় সময় চেয়েছিলাম আমরা। তখন বলা হল সময় নেই, এখন আবার সময়সীমা বৃদ্ধি চাইছে। সুপ্রিম কোর্ট সুযোগ দিয়েছে আবারও। রাজ্য এবার নিষ্কলঙ্কদের চাকরি ফেরাক। আর আদালতও বার বার অবস্থান বদল করছে। কখনও বলছে, একসঙ্গে পরীক্ষা নিতে বলছি না, কখনও আবার বলছে ৩১ ডিসেম্বর নয়। এখনও সুযোগ আছে। যোগ্য শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের তালিকা দিলেই চাকরি বেঁচে যাবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী অযোগ্যদের বাঁচাতে চাইছেন। যোগ্যরা রসাতলে যান, অনাহারে মরে যান। ১৮০৬ জন অযোগ্য শিক্ষককে জনগণের করের টাকা দেওয়া হয়েছে। আমি বিচারপতিদের বলব, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত ব্য়বস্থা নিন। জনগণের করের টাকা খরচ করে বেতন দিয়েছেন অযোগ্যদের। কেন চাকরি চুরির দায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হবে না? সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, বোর্ড, এসএসসি, রাজ্য চাকরি চুরি করেছে। তিনটি সংস্থার মাথায় কে? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই চাকরি চুরির দায় কার? কেন শুক্লা বিশ্বাসদের এখানে বসে থাকতে হচ্ছে? মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে এর জবাব দিতে হবে।"

যদিও রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু লেখেন, 'নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষক নিয়োগ মামলায় গুরুত্বপূর্ণ রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালত নিয়োগ প্রক্রিয়া ৩১ অগাস্টের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে, যা আমাদের রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঠিক দিক নির্দেশের প্রতি আস্থার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই সময়সীমার মধ্যে আগের আগের শিক্ষকরা আগের মতোই কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। বিচারপতি সঞ্জয়কুমারের বেঞ্চের এই নির্দেশে পরিষ্কার, কমিশন স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতার সঠিক পথেই এগোচ্ছে'।