সৌভিক মজুমদার, আবির ইসলাম, অমিতাভ রথ, কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatgterjee) প্রাক্তন দেহরক্ষীরও। বেআইনিভাবে ১০ জনকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। যে দশ জনকে চাকরি পাইয়ের দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সেই দশ জনকে সিবিআইয়ের (CBI) মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট (Kolkata Highcourt)। দুর্নীতি মামলায়, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকেও মেধাতালিকা (Merit List) সংক্রান্ত নথি পেশের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিত্‍ গঙ্গোপাধ্যায়।


অনুব্রত কন্য়াকে হাজিরার নির্দেশ:
টেট (TET) পাস না করেই, শিক্ষকতার চাকরি পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে  অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondal) কন্যা সুকন্যা মণ্ডল এবং তাঁর ৫ ঘনিষ্ঠের। মামলাকারীর এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৬ জনকেই বৃহস্পতিবার আদালতে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিত্‍ গঙ্গোপাধ্যায়। হাইকোর্টের তলব পেয়েই বীরভূমের বাড়ি থেকে বৃহস্পতিবার সকালে বেরিয়েছেন অনুব্রত-কন্যা সুকন্যা। বোলপুরের বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন অনুব্রতর ভাইপো ও এই মামলায় অপর অভিযুক্ত সাত্যকি মণ্ডলও। গতকালই স্কুলে চাকরিতে বেনিয়মের অভিযোগে সুকন্যা মণ্ডল-সহ ৬ জনকে হাজিরার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। সূত্রের খবর, আজ আদালতে সুকন্যার হাজিরা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনুব্রতর আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠরাও আজ হাইকোর্টে হাজির হবেন বলে সূত্রের খবর। চাকরি পাওয়ার পর একদিনও স্কুলে যাননি সুকন্যা। এমনও অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, বাড়িতেই পাঠিয়ে দেওয়া হত রেজিস্টার। তার প্রেক্ষিতেই অনুব্রত-কন্যাকে হাইকোর্টে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।


এর আগেই তলব পাওয়া অনুব্রত মণ্ডলের আত্মীয় সুমিত মণ্ডল বলেন, 'আদালতে যেতে হলে আমি যাব। আমার সব সার্টিফিকেট আছে।' টেট পাসের সার্টিফিকেট রয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তরে সুমিক বলেন, 'আমি ডাউনলোড করে দেখেছি আমি পাস করেছি, আমার হাতে সার্টিফিকেট নেই।'


ফের জড়াল পার্থ-ঘনিষ্ঠর নাম:
একদিকে যখন অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে, আত্মীয়, ঘনিষ্ঠদের বেআইনিভাবে শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। তখন এই মামলাতেই বুধবার উঠে এল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রাক্তন দেহরক্ষীর একাধিক আত্মীয়কেও বেআইনিভাবে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রাক্তন দেহরক্ষী বিশ্বম্ভর মণ্ডলের ১০ ঘনিষ্ঠকে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিচারপতি অভিজিত্‍ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দেহরক্ষী বিশ্বম্ভর মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ ১০ জনকে সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হবে। পয়লা সেপ্টেম্বর সিবিআই অফিসে যোগাযোগ করতে হবে তাঁদের। এঁদের নিয়োগ সংক্রান্ত নথি যাচাই করবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।  


কাদের চাকরি:
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রাক্তন দেহরক্ষী বিশ্বম্ভর মণ্ডলের বিরুদ্ধে, প্রভাব খাটিয়ে যে দশজনকে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তার মধ্যে রয়েছেন তাঁর এক ভাই বংশীলাল মণ্ডল। তিনি প্রাথমিকের শিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি চণ্ডীপুর পঞ্চায়েত সমিতির বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ। তালিকায় রয়েছেন, বিশ্বম্ভরের মেসো ভীষ্মদেব মণ্ডল, মাসতুতো ভাই পূর্ণ মণ্ডল। আরও দুই আত্মীয় সমব্রত মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রী গায়ত্রী মণ্ডল। অমলেশ রায় নামে বিশ্বম্ভর মণ্ডলের এক প্রতিবেশীকেও প্রভাব খাটিয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদের অনেকেই অবশ্য ইতিমধ্যেই বেআইনি নিয়োগের অভিযোগ খারিজ করেছেন।


বুধবার, এই মামলা প্রসঙ্গে এজলাসে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দেহরক্ষীর ঘনিষ্টরা হয়ত, সরাসরি আত্মীয়ও নন, তাঁরা কী করে চাকরি পেলেন? এর তদন্ত হওয়া দরকার।


প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকেও নির্দেশ:
এদিন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকেও একাধিক নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। বিচারপতি বলেন, ২০১৪ সালের টেটের ভিত্তিতে ২০১৬ এবং ২০২০ সালে যে দুটি মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল, তা হাইকোর্টে পেশ করেতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে।' গত ২০শে জুন আদালতে বেশ কিছু নথি পেশ করেছিল পর্ষদ। সেই নথি বৃহস্পতিবারের মধ্যে দিল্লির ফরেন্সিক ল্যাবে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। 


আরও পড়ুন: বীরভূমে বসেই পাচার নিয়ন্ত্রণ? আরও বিস্ফোরক তথ্য গরুপাচার মামলায়!