কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: সরকারি চাকরি। স্কুল শিক্ষক হওয়ার, স্কুলে শিক্ষাকর্মী হিসেবে কাজের সম্মান। সব এক নিমেষে ধূলিসাৎ। সম্প্রতি ২০১৬-র SSC-র ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের প্যানেল বাতিল করে দিয়েছে হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ। আর তারপরেই ধাক্কা চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষা কর্মীদের জীবনে। এমন পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওই শিক্ষক-শিক্ষা কর্মীরা।


২০১৬-র SLST-র সব চাকরি বাতিল করে দিয়েছে হাইকোর্ট। আর তারপরেই শহিদ মিনারে জড়ো হয়েছিলেন চাকরিহারারা। দিন দুয়েক আগেও শিক্ষকতা করেছেন যাঁরা, তাঁরা নেমেছেন রাস্তায়। হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ, ২০১৬-র SSC-র ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের প্যানেল বাতিল করার পর এই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জীবনটাই বদলে গেছে। নিজের ক্লাসরুম, ব্ল্যাক বোর্ড, চক-ডাস্টার আর নিশ্চিত চাকরির চেনা জীবন ছেড়ে তাঁরা কার্যত রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছেন। 


ওই চাকরিহারাদেরই একজন সল্টলেকের বাসিন্দা অঙ্কিতা ঘোষ। রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে শারীরবিদ্যায় স্নাতক হওয়ার পর বিএড করেছেন। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে বসিরহাটের একটি স্কুলে জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষকতা করেছেন তিনি। আজ হঠাৎ চাকরি হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন অঙ্কিতা। তিনি বলেন, 'আমরা তো যোগ্য। যাঁরা যোগ্য তাঁরা কেন রাস্তায় বসতে হবে। পুলিশ ভেরিফিকেশন, মেডিক্যাল ভেরিফিকেশন, সবই তো হয়েছে। অনেকেই তো পরিবারে একমাত্র রোজগেরে, তাঁদের কী হবে।'


একই অবস্থা, সুচেতা সাউয়েরও। বেহালা বাণীতীর্থ গার্লস স্কুলের ভৌত বিজ্ঞানের শিক্ষিকা তিনি। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে স্কুলে যোগ দেন। NIT দুর্গাপুর থেকে MSC-তে ফার্স্টক্লাস পাওয়া ছাত্রী, আচমকা চাকরি হারিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, 'আমি দোষী হলাম কী করে?' তাঁর অভিযোগ, 'যাঁরা অযোগ্য তাঁদের বাঁচাতে গিয়ে আমরাই কষ্ট পেলাম। আমাদের চাকরি কেন যাবে? নতুন করে কেন পরীক্ষা দেব? আজ পর্যন্ত কতবার ফর্ম ফিলাপ করেছি। নথি জমা দিয়েছি। আর কতবার দেব?


অর্পণ বসু ও পারমিতা শীল স্বামী-স্ত্রী, দুজনেই স্কুল শিক্ষক। অর্পণ ২০১১ সাল থেকে নবম-দশমের শিক্ষকতা করেছেন। এরপর, ২০১৬ সালে পরীক্ষা দিয়ে, একাদশ-দ্বাদশে পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের একটি স্কুলে চাকরি নেন। তাঁর স্ত্রী পারমিতা সাগরদিঘি গার্লস হাইস্কুলের ভৌতবিজ্ঞানের শিক্ষিকা। হাইকোর্টের নির্দেশে দুজনেই চাকরি হারিয়েছেন। পারমিতা শীল বলেন, 'আমাদের ওএমআর ঠিক আছে। কয়েকজন দুর্নীতি করেছে. বাকিদের কেন এই সমস্যা হল?' তাঁর স্বামী চাকরিহারা শিক্ষক অর্পণ বসু বলেন, 'একবার ২০১১ তে যোগ্যতা প্রমাণ করেছি। তারপরে আবার ২০১৬ তে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছি। ১৩ বছরের চাকরি করার পরে হঠাৎ জানতে পারছি চাকরি নেই।' সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই চাকরিহারারা।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে। 


আরও পড়ুন: দুই মেদিনীপুরে তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস! কবে হবে বৃষ্টি?