শুভেন্দু ভট্টাচার্য ও রাজা চট্টোপাধ্যায় : নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শিক্ষকের চাকরি থেকে বরখাস্তের পাশাপাশি আদালতের নির্দেশে আপাতত মেখলিগঞ্জের স্কুলেও ঢুকতে পারবেন না পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা। এই পরিস্থিতিতে তাঁর পাশে দাঁড়ালেন না স্কুলের ছাত্রী ও অভিভাবকদের প্রায় সকলেই।


স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় সহকারী শিক্ষকের চাকরি থেকে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীকে বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। কাজে যোগ দেওয়ার পর থেকে অঙ্কিতা এতদিন বেতন হিসেবে যত টাকা পেয়েছেন, তার সবটাই দু’টি কিস্তিতে ফেরত দেওয়ার জন্য সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছেন বিচারপতি। পুরো বিষয়টি সামনে আসার পর, মন্ত্রীর মেয়ের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না স্কুলের ছাত্রী ও অভিভাবকদের কেউই। 


কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের ইন্দিরা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। ২০১৮ সালের ২৪ নভেম্বর এখানেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারি শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা।


শিক্ষক হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। কিন্তু যে শিক্ষকের নিয়োগ ঘিরেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে অন্যায়ভাবে, যোগ্য প্রার্থীকে বঞ্চিত করে যাঁকে নিয়োগ করার অভিযোগ উঠেছে, এখন তাঁর বিরুদ্ধেই মুখ খুলছেন স্কুলে ছাত্রীরা। মেখলিগঞ্জের ইন্দিরা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সাজানা খাতুন বলেন, ম্যাডাম এটা ঠিক করেননি। যে দুর্নীতি করে স্কুলে ঢুকেছেন, তাঁর যেন শাস্তি হয়। যে ভাল পড়াতে পারবে তাঁরই যেন চাকরি হয়। আমরা পড়াশনা করে ভাল কিছু করতে চাই। ম্যাডামই যদি এরকম করেন, তাহলে আমরা কী শিখব।


একাদশ শ্রেণির অপর এক ছাত্রী রুপালি সরকার বলেন, ম্যাডাম ভুল করেছেন। এভাবে কারোর জীবন নিয়ে খেলা করা উচিত নয়। যেভাবে চাকরি পেয়েছেন, এতে তো আমাদেরও ক্ষতি হয়েছে। আমরাও তো ভুল শিখব। কোর্ট যেটা বলেছে, সেটা ঠিকই বলেছে। 


আদালতের নির্দেশে আপাতত আর এই স্কুলে ঢুকতে পারবেন না অঙ্কিতা অধিকারী। এরকম শিক্ষক থাকার থেকে না থাকাই ভাল, মত অভিভাবকদের একাংশের। মমতা সরকার নামে এক অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে এই স্কুলে পড়ে। ম্যাডাম যেটা করেছেন সেটা অন্যায় করেছেন। পরীক্ষায় না বসেও পাস করে গেছেন। যদি ওঁরই যোগ্যতা না থাকে তাহলে কী করে পড়াবেন ? এরকম শিক্ষক থাকার থেকে না থাকা ভাল।


মেখলিগঞ্জের বাসিন্দা ও চাকরিপ্রার্থী আবু সালেম মহম্মদ বলেন, আমরা এর আগেই জানতে পেরেছিলাম চাকরিটা স্বচ্ছ নয়। যোগ্য প্রার্থীকেই চাকরি দেওয়া উচিত। আমি নিজেও একজন চাকরিপ্রার্থী। এসএসসি দেব। আমি চাই, স্বচ্ছভাবে নিয়োগ হোক।


মেখলিগঞ্জের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাজি সরণিতে তিনতলা বাড়িতে থাকেন মন্ত্রী কন্যা অঙ্কিতা অধিকারী। এদিন সেখানে গিয়ে দেখা গল, গেট বন্ধ। সব মিলিয়ে নিয়োগ দুর্নীতি ঘিরে সরগরম মেখলিগঞ্জ।