অরিত্রিক ভট্টাচার্য, রাজীব চৌধুরী এবং আশাবুল হোসেন, কলকাতা: দু-একটি বিক্ষিপ্ত অশান্তি ছাড়া, শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। চার পুরসভার ভোট নিয়ে জানাল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। গড়ে ভোট পড়েছে ৭২ শতাংশ। শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে বলে দাবি তৃণমূলেরও। যদিও মানতে নারাজ বিরোধীরা।
গুলি চলার অভিযোগ!!! বোমার আওয়াজ!! পুলিশের দিকে মুড়ি মুড়কির মতো উড়ে এলে ইট!! ঝরল রক্ত!! দাপিয়ে বেরাল বহিরাগতরা!! জমায়েত হটাতে লাঠিও চালাতে হল পুলিশকে। ৪টি কর্পোরেশনের ভোট ঘিরেও, শনিবার দিনভর সেই অশান্তির ছবিই ফিরে এল বাংলায়। যদিও, তৃণমূলের বক্তব্য, ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে!!
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফেও দাবি করা হয়েছে, দু-একটি বিক্ষিপ্ত অশান্তি ছাড়া, যথেষ্ট শান্তিপূর্ণ হয়েছে ভোট। আসানসোলের জামুড়িয়ায় গুলি চলার ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে কয়েকটি ভুয়ো অভিযোগও জমা পড়েছে। আসানসোলে একজন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, "রাজ্য নির্বাচন কমিশন তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে। ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। এ ভোট গণতন্ত্রের সমাধি। কমিশনে নয়, প্রয়োজনে আদালতে যাব।"
অন্যদিকে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, "আমরা এই বাংলায় ক্ষমতায় নেই। শূন্য আসন। আমাদের এত ভয় কিসের? বহরমপুরে বিজেপি জিতেছে। তাহলে আমাদের নিয়ে ভয় কীসের? ২০১৮ সাল থেকে দিদি ক্ষমতায় আছেন। ২০১৬ সালের পর বোর্ড আমাদের হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। আপনারা এত উন্নয়ন করেছেন। তারপরও এমন অবস্থা কেন? ভোটে হারলে প্রমোটারি বন্ধ হয়ে যাবে। নিজেদের উন্নয়নে ভরসা নেই, ভরসা গুলি, ভোটলুঠে।
এদিকে, রাজ্য নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, শনিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত, সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে বিধাননগরে। ৭২ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ। শিলিগুড়িতে ভোট পড়েছে ৭১ দশমিক আট সাত শতাংশ। আসানসোলে ভোটের হার ৭১ দশমিক ছয় সাত শতাংশ। চন্দননগরে ভোট পড়েছে ৭১ দশমিক চার নয় শতাংশ। সূত্রের খবর, এদিন কালীঘাটে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠক চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে প্রশাসনের তরফে রিপোর্ট আসে। সূত্রের খবর, সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, এদিনের ভোটে বড় কোনও গন্ডগোল হয়নি। মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।
যার প্রেক্ষিতে দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে তৃণমূলনেত্রী বলেন, আগামী দিনেও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট করতে হবে। সেই সঙ্গে দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়ার বার্তাও দেন মমতা। কিন্তু বিকেলে যখন তৃণমূলের বৈঠক শুরু হয়েছিল, তখন ভোটের শেষলগ্নে বিধাননগরে আক্রান্ত হন, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থীর স্বামী। ছাপ্পা ভোটে বাধা দেওয়ায় তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
বিধাননগর পুরভোটে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে পথে নামে বিজেপি ও সিপিএম।
পুনর্নির্বাচনের দাবিতে শনিবার সন্ধেয়, মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হন বিজেপি প্রার্থী ও দলের নেতা-কর্মীরা। পুরভোটে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে, করুণাময়ী মোড় অবরোধ করে সিপিএম। সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব বলেন, "অনেক জায়গায় এজেন্টদের বসতে দেওয়া হয়নি। সব জায়গায় গন্ডগোল হলেও, চন্দননগরে সেভাবে হয়নি। এখনও দাবি করছি একসঙ্গে ভোটের ফলাফল প্রকাশ করা হোক। না হলে চারটে পুরভোটের ফল আগে প্রকাশিত হলে, সেখানে শাসকদল প্রভাব খাটাতে পারে।"