পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা : গণধর্ষণ, খুন, ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে থাকা বিকৃত একটা শরীর, হাড়হিম করা ঘটনার স্মৃতি কামদুনিকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেরিয়েছে। আর এক দশক পর ফাঁসির সাজাপ্রাপ্তকে বেকসুর খালাস করা হয়েছে, ২ দোষীকে ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত ( Kamduni Case )।

  কামদুনি-মামলায় ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে স্পেশাল লিভ পিটিশন দাখিল করল রাজ্য। সূত্রের খবর, কামদুনি মামলায় নির্যাতিতার পরিবার যাতে সুবিচার পায়, সেজন্য় আইনজীবীদের সঙ্গে ব্য়ক্তিগতভাবে যোগাযোগ রাখছেন মুখ্য়মন্ত্রী। কামদুনির পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। 


হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ জারির আবেদন জানিয়ে দ্রুত শুনানির আর্জি জানানো হয়েছে। বিচারপতি বি আর গাভাই, বিচারপতি পিএস নরসিমা ও বিচারপতি পিকে মিশ্রর বেঞ্চে রাজ্য সরকারের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বল সওয়াল করেন, ৩ জনকে নিম্ন আদালত মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। হাইকোর্ট সেই নির্দেশ পরিবর্তন করেছে। রাজ্য সরকারের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, আমিন আলি, যে বেকসুর খালাস হয়েছে সে আজ মুক্তি পাবে। অন্যদেরও মুক্তি দেওয়া হবে। রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হতে পারে। আমরা চাই সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত তাঁদের মুক্তি না দেওয়া হোক। শুক্রবার হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, আমরা আজ সুপ্রিম কোর্টে এসেছি। তখন বিচারপতিরা সিব্বলকে ফের প্রশ্ন করেন, কেউ বেকসুর খালাস হয়ে গেলে, আমরা কেন নোটিস জারি করব? যেখানে তদন্ত শেষ। বেকসুর খালাস পাওয়া অভিযুক্তের মুক্তি আটকাতে CRPC-তে কি কোনও বিধান আছে?তখন, রাজ্য সরকারের তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, ৩৯০ CRPC-তে আদালত এটা করতে পারে। খালাস স্থগিত করুন, আমরা মঙ্গলবার এই মামলা নিয়ে সওয়াল-জবাব করতে পারি। আমরা আশঙ্কা করছি আজকে তাঁরা মুক্তি পেলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমস্য়া হবে।  


২০১৩ সালের কামদুনি গণধর্ষণ-খুনের মামলায় গত ৬ অক্টোবর রায় ঘোষণা করে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চ। ওই দিনই সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের স্ট্যান্ডিং কাউন্সিলের কাছে মামলা সংক্রান্ত সমস্ত নথি ও হাইকোর্টের নির্দেশের কপি পাঠানো হয় স্পেশাল লিভ পিটিশন দাখিলের জন্য।  


শুক্রবার কামদুনিকাণ্ডে এই রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।  আর তারপর থেকেই তদন্ত নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে কামদুনি। সিআইডি আর রাজ্য সরকারের গাফিলতিকেই দায়ী করছে নিহত নির্যাতিতার পরিবার। রায় ঘোষণার রাতেই কামদুনিতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখেও পড়ে সিআইডি। শুক্রবার রায় ঘোষণার পরই সিআইডি-র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কামদুনির প্রতিবাদীরা। এরপর রাতে মৌসুমী কয়ালের বাড়িতে গিয়ে প্রায় আধ ঘণ্টা কথা বলেন সিআইডি আধিকারিকরা। তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ তুলে তাদের সামনেই ক্ষোভ উগরে দেয় হতাশ পরিবার ও কামদুনির প্রতিবাদীরা।  ১০ বছরে কেন ১৪ বার আইনজীবী বদল হল, প্রশ্ন তুলেছে তারা। রায় ঘোষণার পর রাতে কামদুনিতে CID।১০ বছর আগে কেন তৎপরতা দেখাল না CID, প্রশ্ন কামদুনির বাসিন্দাদের।