কলকাতা : পল্লবী দে , বিদিশা দে মজুমদার , মঞ্জুষা নিয়োগী । খ্যাতি-যশের জন্য দৌড় আর দৌড় । কোথাও কি ইঁদুর দৌড়ে পিছিয়ে পড়তেই মোহভঙ্গ হচ্ছে? তার থেকে ডিপ্রেসন? সেই কারণেই কি অল্প বয়সে জীবনের ইতি? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরপর মৃত্যু, অনেকটা সংক্রামক ব্যাধির মতো যাকে পরিভাষায় বলে সুইসাইড কন্টাজিয়ান ও কপিক্যাট সুইসাইড।


কী এই সুইসাইড কন্টাজিয়ান? 



  • কোনও প্রভাবশালী বা খ্যাতনামা কারও সুইসাইডের পর, তাঁর পেশার মধ্যে সংক্রমিত হয়ে পড়ে আত্মহননের প্রবণতা। তাকেই বলে সুইসাইড কন্টাজিয়ান। আর কপিক্যাট সুইসাইড হল আত্মহত্যার একই পদ্ধতি অনুসরণ। যেমনটা হয়েছিল, হলিউডের গ্ল্যামারাস নায়িকা মেরিলিন মনরো মৃত্যুর পর একই পদ্ধতি অনুসরণ করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তাঁর অনুরাগী অনেক অভিনেতা অভিনেত্রী ও গায়ক-গায়িকা। 

    গত ১৫ মে, গড়ফার ঘর থেকে উদ্ধার হয় অভিনেত্রী পল্লবী দে’র মৃতদেহ। পরিবার থেকে দূরে এসে, কলকাতায় বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে লিভ ইন করতেন। বহুমূল্য ফ্ল্যাট, অডি গাড়ি, বিলাসবহুল জীবনযাপন। মাত্র, ২৫ বছর বয়সেই জীবনের ইতি। এর ১০ দিনের মাথায়, বুধবার, নাগেরবাজারের ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় মডেল-অভিনেত্রী বিদিশা দে মজুমদারের ঝুলন্ত দেহ!  পুলিশ সূত্রে দাবি, তাঁর ঘর থেকে পাওয়া সুইসাইড নোটে উল্লেখ রয়েছ আর্থিক অনটনের কথা। নতুন কেনা মোবাইল ফোনের EMI দিতে পারছি না। প্রত্যেক মাসে ফ্ল্যাটের ভাড়া মেটাতেও সমস্যা হচ্ছিল। এর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে, বিদিশার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মঞ্জুষা নিয়োগীর অস্বাভাবিক মৃত্যু। পরিবার সূত্রে দাবি, মঞ্জুষা কেরিয়ার নিয়ে উচ্চাকাঙ্খী হলেও, তিনি কাজ করুন, চাইতেন না তাঁর স্বামী। 


    কলকাতাতেও কোনওভাবে সুইসাইড কনটাজিয়ান বা কপিক্যাট সুইসাইডের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না তো? তিন তিনটে মৃত্যুর পর, উঠছে সেই প্রশ্ন। 


    সুইসাইড কনটাজিয়ানের সম্ভাবনা 

  • মনোবিদ জয়রঞ্জন রাম জানাচ্ছেন , কারও সুইসাইডের পর, তাঁর পেশার মধ্যে যদি সংক্রমিত হয়ে পড়ে আত্মহননের প্রবণতা, তাকেই বলে সুইসাইড কন্টাজিয়ান। আর কেউ যদি অন্য কারও সুইসাইড করার পদ্ধতি অনুকরণ করে সুইসাইড করে, তাহলে তাকে কপিক্যাট সুইসাইড বলা হয়। নিজের মধ্যে চেপে না রেখে সমস্যা ভাগ করে নিতে হবে। আপন কাউকে বলার না থাকলে হেল্পলাইনে ফোন করে সাহায্য চাইতে হবে। সুইসাইড যে কোনও সমস্যার সমাধান নয়, এটা বোঝানো দরকার। 



মনোবিদ প্রশান্ত রায় জানাচ্ছেন, সুইসাইড কিন্তু অনেক সময় ছোঁয়াচ রোগের মতো মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। যেহেতু সেলিব্রিটিদের প্রভাব বেশি মানুষের উপর, তাই  এরকম আশঙ্কা থাকে। তাই সমস্যাচা অবহেলা না করে, বিভিন্ন ভাবে ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম করার কথা ভাবতে হবে। 

চিকিৎসকরা বলছেন , 



  • অবসাদগ্রস্তর সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে হবে।

  • তাঁকে সময় দিতে হবে।

  • তাঁর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।

  • এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিতে পারে সেই ব্যক্তির পরিবার বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব।

  • অবসাদগ্রস্তর মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব জাগাতে হবে। 


সম্পর্ক-অর্থ-খ্যাতি-সাফল্য....এসবের মধ্যে ওঠা-পড়া থাকবেই! তাই বলে এভাবে নিজেকে শেষ করে দেওয়া কেন? এটাই আসল প্রশ্ন।