উজ্জ্বল মুখোপাধ্য়ায়, কলকাতা : 'নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেখে কলেজে চাকরির আবেদন করেছিলাম। তখন লিখিত পরীক্ষার নিয়ম ছিল না। নিয়ম মেনে, প্রিন্সিপালের ঘরে ইন্টারভিউ দিয়ে ওই চাকরি পেয়েছিলাম। এতে যদি কারও সুপারিশ থাকে, তাহলে তার নাম বলা হোক।' চাকরি-বিতর্কে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে, এভাবেই তৃণমূলের দিকে চ্য়ালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন সুজন চক্রবর্তীর (Sujan Chakraborty) স্ত্রী মিলি চক্রবর্তী (Mili Chakraborty)।


তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আপনার নিয়োগ কি নিয়ম মেনে হয়নি ?


এর উত্তরে মিলি চক্রবর্তী জানান, "বাড়ির আর্থিক সঙ্কট ছিল। গ্র্যাজুয়েশন করার আগে টিউশন করি। গ্র্যাজুয়েশন করার পর বিএডে ভর্তি হই। তখন দিনের বেলায় চাকরি এবং বিকালের দিকে বিএড। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএডে লিখিত পরীক্ষা দিই। পরে আমার নাম বের হয়। আমি ভর্তি হই। এদিকে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে চাকরির আবেদন করি। চাকরির জন্য দীনবন্ধু অ্যান্ড্ুজ কলেজে আবেদন করি। সেখানে একটা ইন্টারভিউ বোর্ড হয়। ইন্টারভিউ বোর্ড আমার পরীক্ষা নেয়। তার ভিত্তিতে আমার কাছে আবেদনপত্র আসে। অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পেয়ে জয়েনিং লেটার নিয়ে জয়েন করি। যে জয়েনিং লেটার নিয়ে এত বাজার গরম করা হচ্ছে। পরে শুনেছিলাম, প্রিন্সিপাল বলেছেন, ইন্টারভিউতে আমি ফার্স্ট ব়্যাঙ্ক করেছি।" 


কিন্তু, কোনওরকম কি লিখিত পরীক্ষা হয়েছিল ? শুধু কি তিনিই চাকরি পেয়েছিলেন নাকি তাঁর সঙ্গে আরও অন্যরা চাকরি পেয়েছিলেন ?


এর উত্তরে সুজন-পত্নী বলেন, " তখনকার দিনে সিস্টেমের মধ্যেই লিখিত পরীক্ষা ছিল না। ইন্টারভিউ ছিল। অনেকে মিলে ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন। প্রিন্সিপালের ঘরে অনেকগুলো প্রশ্ন করা হয়েছিল। ফলে, তখন লিখিত পরীক্ষার সিস্টেম ছিল না। তাই ইন্টারভিউ করেই নেওয়া হয়েছিল। আমার সঙ্গে আরও অনেকে চাকরি পেয়েছিলেন। জয়েনিং লেটারের ইংরাজিটা পড়ে অন্তত তার মানে বোঝা উচিত। সেখানে তো মিলি ভট্টাচার্য আছে। আমি বিয়ের অনেক আগে চাকরি করি। সুজন চক্রবর্তীর নামটা কীভাবে এখানে যুক্ত হল ? ওঁরা যখন বলছেন, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, কে সুপারিশ করেছিল সেটা বের করুন। আমি তাঁর মুখোমুখি হতে রাজি আছি!"


স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় যখন বিরোধীদের সাঁড়াশি আক্রমণে নবান্ন, তখনই বাম আমলের নিয়োগ নিয়ে পাল্টা নিশানা করতে শুরু করেছে তৃণমূল। প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী, মিলি চক্রবর্তীর কলেজে চাকরি পাওয়া নিয়েও। যিনি ২০২১ সালে গড়িয়ার দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজ থেকে অবসর নিয়েছেন।


রীতিমতো নথিপত্র হাতে নিয়ে সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ময়দানে নেমেছিলেন পার্থ ভৌমিক এবং কুণাল ঘোষরা। এর পর থেকে জল্পনা শুরু হয়েছিল, তাহলে কি এবার মিলি চক্রবর্তীর নিয়োগ নিয়ে তদন্ত শুরু করবে রাজ্য সরকার ? কিন্তু আপাতত যে তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই, তা কার্যত বুঝিয়ে দিলেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী। তবে ১২ বছর পর বাম আমলে স্কুলের নিয়োগ নিয়ে, দলগতভাবে তেড়েফুঁড়ে নামছে তৃণমূল। হাতিয়ার করা হচ্ছে, ২০০৯-১০ সালের ক্যাগ (CAG) রিপোর্টকে।