কলকাতা: জল, বিদ্যুৎ নেই, বাড়ির দেওয়ালে চওড়া হচ্ছে ফাটল। হাওড়ায় ক্রমেই বাড়ছে আশঙ্কা। এরই মধ্যে এদিন ভেঙে পড়ল একটি বাড়ি। আতঙ্কের প্রহর গুনছেন হাওড়ার বেলগাছিয়ার বাসিন্দারা। অনেকেই বাড়ি ছেড়ে রওনা দিচ্ছেন নতুন ঠিকানায়। এই বিপর্যয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ সুকান্ত মজুমদারের।
চার দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। বাড়ির দেওয়ালে চওড়া হচ্ছে ফাটল। আরও ভেঙেচুরে যাচ্ছে রাস্তা। যে কোনও মুহূর্তে ফেটে যাওয়া বাড়ি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা। সব মিলিয়ে আতঙ্কের প্রহর গুনছেন হাওড়ার বেলগাছিয়ার বাসিন্দারা। এদিন সুকান্ত মজুমদার বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী যখন বিদেশ সফরে ব্যস্ত, তখন হাওড়ায় বহু মানুষ ঘরছাড়া। নবান্ন থেকে কিছু দূরেই ধসের জেরে দুর্ভোগে বহু মানুষ। প্রথমবার নয়, বাংলার মানুষ আগেও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। তবুও মমতার জনবিরোধী সরকার এই ট্র্যাজেডি রোধে কিছুই করেনি। দুর্নীতিগ্রস্ত নেতারা সিন্ডিকেটের টাকা দিয়ে তাঁদের পকেট ভরতে ব্যস্ত ছিলেন। মানুষের জীবন রক্ষা করার পরিবর্তে, অবৈধ কারবারে যুক্ত তৃণমূল নেতারা। এটা কেবল ব্যর্থতা নয় - এটি অপরাধমূলক অবহেলা। বাংলার জনগণ এর জবাব পাওয়ার যোগ্য।''
দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করেন বেলগাছিয়া ভাগাড় সংলগ্ন এলাকায়। ফল বিক্রি করে চালান সংসার। বুধবার রাতের বিপর্যয়, তাঁকে ঠেলে দিয়েছে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। ফাটল ধরলেও দাঁড়িয়ে ছিল বাড়িটা। রবিবার সকলে তাও শেষ। বেলগাছিয়ার বাসিন্দা বিশ্বনাথ সাউ বলেন, "আমার পরিবারে ২জন অসুস্থ আছে। তাদেরকে ওষুধ করাই। চারটে ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করাই। আর আমি কিছু করতে পারলাম না।'' যদিও তৃণমূলের দাবি, এলাকার বাসিন্দাদের জন্য থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু কোনও ব্যবস্থাই পর্যাপ্ত নয়, এই অভিযোগে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে রওনা দিচ্ছেন নতুন ঠিকানায়। বেলগাছিয়ার বাসিন্দা বছর ৩০-এর রাজ। টুকটাক কাজ করে সংসার চালান এক ঝটকায় ওলটপালট হয়ে গেছে সব কিছু। বাড়ি ছেড়ে পা দিচ্ছেন অনিশ্চয়তার দিকে। এদিন তিনি বলেন, "আমরা কোথায় যাব। এটা ভেঙে পড়লে তো মরে যাব। কিন্তু যাব তো যাব কোথায়? ভাড়া নিয়ে থাকতে হবে। আমরা এমনিতে খাবার না পেয়ে মরছি। কাজ পাচ্ছি না। কোথায় যাব?''
এরই মধ্যে রবিবার ভোরে শেষ হয়েছে, বেলগাছিয়া মোড়ের পাইপ মেরামতির কাছ। পাইপলাইন জোড়ার পর বের করা হচ্ছে ভেতরের নোংরা জল। উত্তর হাওড়ার ১৪টি ওয়ার্ড এদিনও ছিল নির্জলা। বালি পুরসভার ৩টি ওয়ার্ডেও তীব্র জলসঙ্কট। অন্য পুরসভা থেকে জলের ট্যাঙ্কার এনে পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হলেও বাসিন্দাদের অভিযোগ, তা পর্যাপ্ত নয়। প্রতিবাদে এদিন এলাকায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার মহিলারা। বুধবার রাতে, হাওড়া পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বেলগাছিয়া ভাগাড়ের কাছে, ভূগর্ভস্থ পাইপ লাইনে বড়সড় ফাটল দেখা যায়। এরপরই, পদ্মপুকুর জল প্রকল্পের রিজার্ভার থেকে জল সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। তীব্র জলসঙ্কট দেখা দেয় বিস্তীর্ণ এলাকায় বিকল্প পাইপ লাইন বসাতে গিয়ে নামে ধস, নেমে আসে অন্য বিপর্যয়। ধসের জেরে ফাটল ধরে ৮০-৯০টি বাড়িতে। এদিন এলাকা পরিদর্শনে যান বিশেষজ্ঞরা।