প্রকাশ সিনহা, সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতারির ৫৮ দিনের মাথায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য ও তাঁর ছেলে সৌভিক ভট্টাচার্যর বিরুদ্ধে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করতে চলেছে ইডি। খবর সূত্রের। গত ১০ অক্টোবর ইডি-র হাতে গ্রেফতার হন মানিক। ইডি সূত্রে খবর, দেড়শো পাতার সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে মানিককেই দুর্নীতির কিংপিন বলে উল্লেখ। ইডি সূত্রে খবর, নিয়োগ দুর্নীতিতে মানিক কীভাবে জড়িত ছিলেন, কীভাবে অনলাইন ক্লাস ও অফলাইন রেজিস্ট্রেশনের নামে বেসরকারি ডিএলএড কলেজ থেকে কোটি কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে এবং মানিক ভট্টাচার্যর ছেলে সৌভিকের সংস্থা কীভাবে লাভবান হয়েছে তার উল্লেখ রয়েছে চার্জশিটে। ইডি-র সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে মানিকের স্ত্রীরও নাম রয়েছে বলে খবর সূত্রের। 


বেসরকারি আইন ও ফার্মাসি কলেজের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট দেওয়ার পরিবর্তে নেওয়া হত কলেজ প্রতি ১০ তেকে ১২ লক্ষ টাকা। এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করা হয় ইডি সূত্রে। কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রে আরও দাবি, তত্‍কালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে ছাড়পত্রের জন্য সুপারিশ আসত মানিক ভট্টাচার্যের তরফ থেকে। এই চক্রে খোঁজ মিলেছে এক মানিক-ঘনিষ্ঠেরও। D-El-Ed কলেজে টাকার বিনিময়ে অফলাইনে ভর্তির পর, এবার বেসরকারি আইন ও ফার্মাসি কলেজের অনুমোদনেও সামনে উঠে এল পার্থ-মানিক যোগ!


এ ক্ষেত্রেও কি লুকিয়ে রয়েছে কোটি কোটি টাকার বেআইনি লেনদেন? বুধবার নগর দায়রা আদালতে ED’র তরফে দাবি করা হয়, বিপুল টাকার বিনিময়ে একাধিক বেসরকারি আইন কলেজ এবং ফার্মাসি কলেজকে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ বা NOC দিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এই পরিস্থিতিতে ED সূত্রে দাবি, বেসরকারি আইন ও ফার্মা কলেজের অনুমোদন বা নো অবজেকশন সার্টিফিকেট ইস্যু করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি ও তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য এবং প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। 

NOC’র নামে কীভাবে তোলা হয়েছিল টাকা? পর্ষদের সভাপতি হওয়ার পাশাপাশি কলকাতার একটি আইন কলেজের অধ্যক্ষও ছিলেন মানিক ভট্টাচার্য। সেই সুবাদে একাধিক আইন কলেজের আধিকারিকদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল। ED সূত্রে দাবি, সেই সূত্র ধরেই বেসরকারি আইন কলেজের NOC দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব খাটিয়েছিলেন মানিক। এমনকি NOC দেওয়ার ক্ষেত্রে তত্কালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে একাধিক সুপারিশ এসেছিল মানিক ভট্টাচার্যর তরফ থেকে।


ED সূত্রে আরও চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, প্রতিটি বেসরকারি আইন অথবা ফার্মাসি কলেজের NOC বা অনুমোদন দেওয়ার জন্য ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা করে নেওয়া হত। এই চক্রে একাধিক মধ্যস্থতাকারী বা মিডলম্যান এবং এক মানিক ঘনিষ্ঠের খোঁজ মিলেছে বলে সূত্রের দাবি। বেসরকারি আইন ও ফার্মাসি কলেজের NOC দেওয়ার নামেও টাকা! ED সূত্রে দাবি, ইতিমধ্যেই সেই বেসরকারি আইন ও ফার্মা কলেজগুলির তালিকা তৈরি করে সেগুলি চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে সেই কলেজের মালিকদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। NOC’র বিনিময়ে ঠিক কত টাকা করে দেওয়া হত? কার হাতে সেই টাকা দেওয়া হত? কোথায় পৌঁছত সেই বেআইনি টাকা? এখন এসব প্রশ্নেরই উত্তর পেতে মরিয়া এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের অফিসাররা।