কলকাতা: মহুয়া মৈত্রকে (Mahua Moitra) সংসদ থেকে বহিষ্কার-মামলায় লোকসভার সেক্রেটারি জেনারেলের জবাব তলব। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে জবাব পেশের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court)। টাকা নিয়ে সংসদে আদানিদের নিয়ে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ ছিল মহুয়ার বিরুদ্ধে, তার জেরে তৃণমূলের হয়ে কৃষ্ণনগর থেকে জিতে আসা মহুয়াকে সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। লোকসভার নীতি কমিটির সুপারিশেই বহিষ্কার করা হয় তাঁকে, যার বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে আবেদন জানান মহুয়া। সেই আবেদনের শুনানি চলাকালীনই বুধবার লোকসভার সেক্রেটারি জেনারেলের জবাব চাইল আদালত। 


লোকসভার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্যও আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন মহুয়া। কিন্তু এদিন তাঁর সেই আবেদন গৃহীত হয়নি। তবে মহুয়ার আবেদন অনুযায়ী লোকসভার সেক্রেটারি জেনারেলের জবাব চাওয়া হয়েছে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১১ মার্চ। বুধবার মহুয়া মৈত্রের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করেন আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। লোকসভার সেক্রেটারি জেনারেলের হয়ে আদালতে সওয়াল করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। সংসদের তরফে মহুয়াকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের অধিকার নেই, এর সঙ্গে দেশের সার্বভৌমিকতার প্রশ্ন জড়িয়ে বলে দাবি করেন তিনি।


যদিও শুনানি চলাকালীন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং দীপঙ্কর দত্তের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, দু'টির মধ্যে একটিতে হস্তক্ষেপ করার এক্তিয়ার রয়েছে আদালতের, তার আওতায়ই লোকসভার জেনারেল সেক্রেটারির জবাব তলব করা হয়েছে। মহুয়াকে লোকসভার কাজ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টিতে অনুমোদন দেয়নি আদালত। সব দিক খতিয়ে দেখে তবেই এ ব্যাপারে এগনো হবে বলে জানান হয়। মহুয়াকে অন্তর্বর্তীকালীন স্বস্তি দেওয়া নিয়ে মার্চ মাসে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছে আদালত।


আরও পড়ুন: Indian Science Congress: কলকাতা থেকে সূচনা, শতবর্ষ ধরে টিকে, কেন্দ্রের সঙ্গে টানাপোড়েনে এবার হল না বিজ্ঞান মহাসভা


নিজের আবেদনে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকেও পক্ষ করেছিলেন মহুয়া। পক্ষ করা হয়েছিল লোকসভার নীতি কমিটিকেও। কিন্তু স্পিকার এবং নীতি কমিটিকে নোটিস ধরাতে রাজি হয়নি আদালত।  নীতি কমিটির সুপারিশ মেনে গত ৮ ডিসেম্বর মহুয়াকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়। 'অনৈতিক আচরণে'র কথা উল্লেখ করে বহিষ্কার করা হয় মহুয়াকে। সেই নিয়ে সংসদে জোর বিতর্কও হয়। কিন্কু সেখানে কথা বলার সুযোগ পাননি মহুয়া।


সংসদে জ্বালাময়ী ভাষণের জন্য বরাবর পরিচিত ছিলেন মহুয়া। নিয়ম বহির্ভূত ভাবে আদানিদের হাতে একাধিক বন্দর তুলে দেওয়া থেকে গৌতম আদানির সঙ্গে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সম্পর্ক নিয়ে লাগাতার সুর চড়াতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেও এ নিয়ে ফের সরব হবেন বলে জানিয়েছিলেন, তার আগেই মহুয়ার বিরুদ্ধে নীতি কমিটিতে অভিযোগ জানান বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির থেকে টাকা এবং দামি উপহারের বিনিময়ে মহুয়া সংসদে আদানিদের বিরুদ্ধে সরব হন বলে অভিযোগ করেন। এমনকি সংসদে প্রশ্ন জমা দেওয়ার ওয়েবসাইটের আইডি-পাসওয়র্ডও অন্যকে দেন বলে অভিযোগ করেন নিশিকান্ত।


টাকা নেওয়ার কথা আগাগোড়া অস্বীকার করে এসেছেন মহুয়া। এমনকি জিজ্ঞাসাবাদের সময় নীতি কমিটির সদস্যরা তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অশালীন প্রশ্ন করেন বলেও অভিযোগ করেন। মহুয়াকে যেভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে, তা নিয়ে একজোটে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরাও। তদন্তে যখন কিছু প্রমাণই হয়নি, সেখানে মহুয়ার সাংসদপদ বাতিল হল কোন যুক্তিতে, প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।