নয়াদিল্লি: পালকের মতো চাঁদের মাটি ছোঁয়া থেকে প্রথম সৌরযান উৎক্ষেপণ, কৃষ্ণগহ্বর নিরীক্ষণে মহাকাশযান পাঠানো, গত কয়েক মাসে বিজ্ঞানের জগতে একের পর এক মাইলফলক তৈরি করেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO. চিকিৎসা, কৃষি এবং বিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রেও রীতিমতো সাড়া জাগাচ্ছেন ভারতীয় গবেষকরা। কিন্তু গত ১০০ বছর ধরে চলে আসা Indian Science Congress বা বিজ্ঞান মহাসভা এবার ধাক্কা খেল। গত এক শতকেরও বেশি সময় ধরে ওই বিজ্ঞান মহাসভা চলে আসছে। সাধারণত, প্রতিবছর ৩ জানুয়ারি থেকে পাঁচ দিন ধরে বিজ্ঞান মহাসভা চলে, সেখানে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ভারতের কৃতিত্ব তুলে ধরা হয়। বিজ্ঞান মহাসভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির থাকেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজ্ঞান মহাসভার আয়োজনকারীদের মধ্যে টানাপোড়েনে এবারে নির্ধারিত দিনে বিজ্ঞান মহাসভা হল না। পরে, অন্য কোনও দিন ওই বিজ্ঞান মহাসভার উদ্বোধন হবে কিনা, সে ব্যাপারেও কিছু জানানো হয়নি। (Indian Science Congress)


এর আগে, ২০২১ এবং ২০২২ সালেও Indian Science Congress বিজ্ঞান মহাসভার আয়োজন হয়নি। কিন্তু সেই সময় নোভেল করোনাভাইরাসের জেরে উদ্ভুত অতিমারি পরিস্থিতি ছিল দায়ী। তার পর ২০২৩ সালে ১০৮তম বিজ্ঞান মহাসভার আয়োজন হয়েছিল নির্ধারিত দিনেই। সেবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন নরেন্দ্র মোদি। তার আগে যতগুলি বিজ্ঞান মহাসভা হয়েছিল, সশরীরে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু এ বছর বিজ্ঞান মহাসভাই হল না। Indian Science Congress Association (ISCA) দেশের প্রথম সারির বিজ্ঞান সংক্রান্ত সংগঠন, যার সদর দফতর কলকাতায়। ১৯১৪ সালে কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটিতে প্রথম বিজ্ঞান মহাসভাটি হয়। প্রায় ৩০ হাজার বিজ্ঞানী সংগঠনের সদস্য। এটি একটি নথিভুক্ত সংস্থা, প্রতিবছর তারাই বিজ্ঞান মহাসভার আয়োজন করে। ISCA  বিজ্ঞান মহাসভার জন্য অর্থ বরাদ্দ করে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ। কিন্তু টাকা-পয়সার লেনদেনে অনিয়মের অভিযোগ ঘিরে গত বছর সেপ্টেম্বর মাস থেকে দুই পক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। তার জেরেই এবারের বিজ্ঞান মহাসভা ধাক্কা খেল। (Indian Science Congress Association)


টাকাপয়সার লেনদেনে অনিয়মের অভিযোগ আগেই অস্বীকার করেছে ISCA. বিজ্ঞান মহাসভাে সরকারি তহবিলের টাকা ব্যবহার করা যাবে না বলে কেন্দ্রের তরফে যে নির্দেশিকা এসেছিল, তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতেও যায় তারা, তার জেরে টানাপোড়েন আরও চরম আকার ধারণ করে। আদালতে বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়নি এখনও। ISCA-র জেনারেল সেক্রেটারি রঞ্জিতকুমার বর্মা জানিয়েছেন, দুর্ভাগ্যক্রমে এ বছর বিজ্ঞান মহাসভা হচ্ছে না। তাই বলে সম্মেলেনের শেষ নয় এখানেই। ৩১ মার্চের আগে বিজ্ঞান মহাসভার আয়োজন করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী তিনি। মোদিও নিশ্চয়ই আসবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন। কেন্দ্রের তরফে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, এবছরের খরচ-খরচা নিয়ে মতবিরোধ হয়েছে। তাই বলে বিজ্ঞান মহাসভা বন্ধ হয়ে যাবে, এমন নয়। বরং ২০২৫ সালের বিজ্ঞান মহাসভা নিয়ে আলোচনা চলছে বলে সূত্রের খবর।


আরও পড়ুন: Zhangjiajie National Forest Park: ‘অবতার’ ছবির Pandora বলে ভ্রম জাগে, শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই নয়, আউটডোর লিফ্টের জন্যও পরিচিত এই পার্ক


বিজ্ঞান মহাসভায় ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করে কেন্দ্র। এর পাশাপাশি, অন্য সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থা, সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমেও টাকা ঢোকে। কিন্তু সরকারি টাকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাঁচ দিন ব্যাপী বিজ্ঞান মহাসভা চালানো সম্ভব হয়নি ISCA-র পক্ষে। খরচ বাঁচাতে লখনউয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভলি প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটিতে বিজ্ঞান মহাসভা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাও ভেবেছিল তারা। ২০১৯ সালেও সেখানেই বিজ্ঞান মহাসভার আয়োজন হয়। কিন্তু তা নিয়েও কেন্দ্রের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়। কেন্দ্রের তরফে একজন প্রতিনিধির উপস্থিতিতেই এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যেখানে, সেখানে আপত্তির কী কারণ আছে প্রশ্ন তোলো ISCA-ও। এমনকি বিজ্ঞান মহাসভা কোথায় হবে, তা নিয়ে কেন্দ্রের অনুমতির প্রয়োজন নেই বলেও জানায় তারা, তাতে পরিস্থিতির অবনতি হয় আরও।


তবে এমনটা হওয়ারই ছিল বলে মনে করছেন বিজ্ঞানজগতের মানুষজন। তাঁদের মতে, গত কয়েক বছরে বিজ্ঞান মহাসভার গুণমান ক্রমশ নেমেছে। যে সে এসে, যেমন খুশি দাবি করে চলে যান। বিজ্ঞানীরাও মুখ ফিরিয়েছেন। সাম্প্রতিক কালে বার বার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে এই বিজ্ঞান মহাসভা। মহাভারতের কৌরবরা আসলে টেস্ট টিউব বেবি, রামায়ণের রাবণের কাছে ২৪টি বিমান এবং বিমানবন্দর ছিল বলে দাবি শোনা গিয়েছে সেখানে। এমনকি আইজ্যাক নিউটন, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সম্পর্কে ভুল বুঝিয়েছেন, শীঘ্রই নরেন্দ্র মোদি ঢেউ বিজ্ঞানের জগতে বৈধতা পাবে বলেও দাবি শোনা যায়। সেই নিয়ে তীব্র সমালোচনা এমনকি প্রতিবাদ, বিক্ষোভও দেখা যায়।