কলকাতা: ফের বিস্ফোরক অভিযোগ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari)। তাঁর দাবি, মুকুল রায়কে (Mukul Roy) রাজ্যের বিরোধী দলনেতা দেখতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তার জন্য প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের (Jagdeep Dhankhar) মধ্যস্থতাও চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কেন্দ্রের বিজেপি (BJP) নেতৃত্ব মমতার সেই সুপারিশ খারিজ করে দেন। 


মুকুলকে বিরোধী দলনেতা করতে ধনকড়ের মধ্যস্থতা চান মমতা!


সোমবার এই চাঞ্চল্যকর দাবি করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, "মুকুল রায়কে বিরোধী দলনেতা করতে ধনকড়ের মধ্যস্থতা চেয়েছিলেন মমতা। ধনকড়ের মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের কাছে।" নাম না করে বিজেপি ত্যাগী প্রাক্তন এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর উল্লেখও করেন শুভেন্দু। বলেন, "এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, যিনি এখন আর দলেই নেই, তাঁর সঙ্গে ছিলাম। তাঁর সামনেই মমতার বার্তার কথা জানিয়েছিলেন ধনকড়। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মমতার সেই বার্তা প্রত্যাখ্যান করেন। তাই এত রাগ।"


২০২১ সালের ৫ মে তৃতীয় বারের জন্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মমতা। শুভেন্দুর দাবি, তার দু'দিন আগে, ৩ মে ধনকড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মমতা। জানান, মুকুলকে বিরোধী দলনেতা করতে দিল্লিতে তাঁর বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। তৎকলীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সামনেই বিষয়টি খোলসা করেন ধনকড়। কিন্তু বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মমতার আর্জিতে সাড়া দেননি। 


তৃণমূলে মমতার পুরনো সৈনিক মুকুল। সারদা মামলায় তাঁকে নিয়ে জলঘোলা চলাকালীন, ২০১৭ সালে তৃণমূল ছেড়ে বেরিয়ে যান মুকুল। তার পর যোগ দেন বিজেপি-তে। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেন মুকুল এবং কৃষ্ণনগর উত্তর থেকে জলাভও করেন। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল সামনে আসার মাস খানেক পরও ফের তৃণমূলে তাঁর প্রত্যাবর্তন ঘটে। মমতা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে ছেলে শুভ্রাংশুকে সঙ্গে নিয়ে জোড়াফুল পতাকা হাতে তুলে নেন মুকুল। 


আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: 'আমি বাড়ির বউদের খুব প্রশংসা করি', নজরুল মঞ্চে অকপট মমতা


তৃণমূলে মুকুলের এই প্রত্যাবর্তন পর্বও বিতর্কিত। কারণ জোড়াফুলে ফেরার পরই বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয় তাঁকে, এ যাবৎকলীন বিরোধী দলের সদস্যরাই ওই পদে থেকেছেন। তাই বিজেপি অভিযোগ তোলে, বিধানসভায় পিএসি-র সদস্য হিসেবে বিজেপি যে ছয় বিধায়কের নাম সুপারিশ করেছিল, তার মধ্যে মুকুলের নাম ছিল না। পিএসি-তে মুকুলের নামের প্রস্তাবক এবং সমর্থক ছিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এবং তৃণমূলের দুই বিধায়ক। কিন্তু তাঁরা বিজেপি-র বিধায়কই নন। সে ক্ষেত্রে তাঁকে কী ভাবে বিরোধী দলের প্রতিনিধি হিসেবে পিএসি-র মাথায় বসানো হল, প্রশ্ন তোলে বিজেপি।


এর পর দলত্যাগ বিরোধী আইনে মুকুলের বিধায়ক পদ খারিজের দাবি তোলে বিজেপি। তা নিয়ে আদালতে মামলা গড়ালে, মুকুল তৃণমূল না বিজেপি, তা নিয়ে নানা তত্ত্ব উঠে আসে। শেষ মেশ শারীরিক অসুস্থতার জেরে ২০২২ সালের জুন মাসে পিএসি-র চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে আসেন মুকুল। ব্যক্তিগত ঝঞ্ঝা, শারীরিক অসুস্থতার জেরে দীর্ঘ সময় বাংলার রাজনীতিতে আগের মতো আর সক্রিয় ভূমিকা নেই মুকুলের। তবে ইদানীং মমতার কালীঘাটের বাড়িতে এসে ভাইফোঁটা নেওয়া থেকে তৃণমূলে যোগদান অনুষ্ঠানে প্রতিনিধিত্ব করায় ফের সক্রিয় রাজনীতিতে মুকুলের প্রত্যাবর্তন ঘিরে জল্পনা শুরু হয়েছে। 


পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ফের চাঞ্চল্যকর দাবি শুভেন্দুর


আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুকুলকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যেতে পারে কিনা, তা নিয়েও নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। আর সেই আবহেই মুকুলকে নিয়ে চাঞ্চল্য়কর দাবি সামনে আনলেন বাংলার বর্তমান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু। তৃণমূল যদিও শুভেন্দুর এই দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছে। দলের রাজ্য় সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষের দাবি, মস্তিষ্কবিকৃতি থেকেই ভুল বকছেন শুভেন্দু।