মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, ঋত্বিক প্রধান, পশ্চিম বর্ধমান: কেন্দ্রের প্রকল্প রাজ্যের নামে করা নিয়ে, ফের সরব হলেন শুভেন্দু অধিকারী। পাণ্ডবেশ্বরে জল প্রকল্পের উদ্বোধন নিয়ে নিশানা করলেন এলাকার তৃণমূল বিধায়ককে। অন্যদিকে বার্ধক্য ভাতার প্রকল্প নিয়ে, এগরার তৃণমূল বিধায়ককে আক্রমণ করেছেন বিরোধী দলনেতা। দুই ক্ষেত্রেই পাল্টা জবাব দিয়েছেন তৃণমূল বিধায়করা।


বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন সেই লড়াই যত এগিয়ে আসছে, বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের তরজার পারদও চড়ছে।এই প্রেক্ষাপটেই সোশাল মিডিয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রসঙ্গ তুলে ফের, রাজ্য় সরকার ও তৃণমূলের দুই বিধায়ককে বিঁধলেন শুভেন্দু অধিকারী। শুক্রবার পাণ্ডবেশ্বরের ইছাপুরে, একটি গ্রামে, বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়ার কাজের সূচনা করেন তৃণমূল বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। পাণ্ডবেশ্বর তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক   নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেছেনআরতি গ্রামে আজকের যে জল, এই জল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'জলস্বপ্ন'। আরতি গ্রামে ৫৫ লক্ষ টাকা খরচ করে বাড়ি বাড়ি ট্যাপ ও নতুন পাইপলাইন সংস্কারের কাজ শুরু হল। 


তৃণমূল বিধায়ক এই প্রকল্পের সূচনা করার আগেই, শুভেন্দু অধিকারী সোশাল মিডিয়ায় লেখেন,সাধু সাবধান! পশ্চিমবঙ্গে আবার কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম ও কৃতিত্ব চুরি! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদিজির স্বপ্নের প্রকল্প হল "জল জীবন মিশন"।  শুরু থেকেই এই রাজ্যে সেই কাজের কৃতিত্ব কেড়ে নেওয়ার চেষ্টায় কোনও খামতি নেই।


প্রথমে "জল স্বপ্ন" নাম দিয়ে রাজ্য সরকারের প্রকল্প বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়। কেন্দ্রীয় জল শক্তি মন্ত্রক ও মাননীয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করায়, রাজ্য সরকার বাধ্য হয়ে পিছপা হয়। এখন আবার শাসক দলের বিধায়কদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, প্রকল্পের কৃতিত্ব চুরি করে নেওয়ার। এই যেমন পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ইছাপুর অঞ্চলের আরতি গ্রামের বাড়িগুলিতে জল সরবরাহ করার কৃতিত্ব নেওয়ার জন্য পৌঁছে যাচ্ছেন !


এনিয়ে পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কিছু বলতে চাননি। শুধু জল প্রকল্প নয়, বার্ধক্য ভাতা নিয়েও এদিন সোশাল মিডিয়ায় আক্রমণ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। এগরার তৃণমূল বিধায়ক তরুণ মাইতির নামে একটি বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করেন তিনি। যেখানে একটি নির্দিষ্ট ফোননম্বর উল্লেখ করে লেখা আছে,যাদের নাম বার্ধক্য ভাতার তালিকায় এসেছে, তাদেরকে ওই নম্বরে ফোন করে জানাতে হবে। আবেদনকারীদের উদ্দেশে আরও বলা হয়েছে, সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী-র অফিস খুলবে। ফোন করা শুরু করে দিন।


এই বিজ্ঞপ্তিকে কটাক্ষ করে বিরোধী দলনেতা লিখেছেন, ভারত সরকার, NSAP (National Social Assistance Programme) প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক ভাবে দুর্বল ব্যক্তিদের বার্ধক্য ভাতা প্রদান করে থাকেন। নিয়মানুসারে এই প্রকল্পের আওতায় থাকা ব্যক্তিদের বছরে একবার সশরীরে যাচাই করতে হয়।শুভেন্দু অধিকারী আরও লিখেছেন, রাজ্যে বিগত বেশ কয়েকটি "দুয়ারে সরকার" ক্যাম্পে, কয়েক লক্ষ মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ফর্ম পূরণ করেছেন এই ভাতা পাওয়ার জন্য। অথচ মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের বঞ্চিত করে, শুধুমাত্র নিজে কৃতিত্ব অর্জন করার লক্ষ্যে প্রশাসনিক কর্তাদের নির্দেশ দেন যে, একমাত্র যাঁরা "সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী" হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে নাম অথবা আবেদন নথিভুক্ত করবেন শুধু তাঁরাই যেন এই ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হন।


আরও পড়ুন, আলুর মরশুমে সারের কালোবাজারি, হুগলিতে এবার EB হানা


যদিও বিরোধী দলনেতার এই অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছেন এগরার তৃণমূল বিধায়ক।এগরা তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক তরুণ মাইতি বলেছেন, 'আরে ওইটা তো আমার পোস্ট করা নয়, একজন কেউ বানিয়ে ওটা পোস্ট করেছে। এবং বিজেপির কোনও ছেলেই পোস্ট করেছে, দিয়ে ওটা ট্যুইট করেছে। আমি যখন ফোন করে খোঁজ নিলাম, একটা বিজেপির ছেলে, কাটিং করে আমার নামে পোস্ট করেছে। এটার দায় আমি নিচ্ছি না। এটা আমার অজ্ঞাতে হয়েছে, আমার জানা ছিল না।'