বিজেন্দ্র সিংহ, কলকাতা: রাজ্যের করা মামলা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে নালিশ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। শাহের হাতে মামলার তালিকা-সহ পুস্তিকা তুলে দিলেন তিনি। তা নিয়ে বিস্ময়প্রকাশ শাহের। রাজ্যের প্রত্যেক প্রান্তে কেন মামলা শুভেন্দুর নামে, শাহ এমনই প্রশ্ন করে বসেন বলে খবর সূত্রের। শাহের কাছে বেশ কয়েক জন আইপিএস অফিসারের বিরুদ্ধেও শুভেন্দু নালিশ জানিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। 


মঙ্গলবার দিল্লিতে শাহের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড় এবং বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার সঙ্গেও দেখা করেন শুভেন্দু। তবে শাহের সঙ্গে শুভেন্দুর বৈঠকের দিকেই তাকিয়েছিলেন সকলে। কারণ শাহ কলকাতা সফরে এলে, তখনই দেখা করার আর্জি জানান শুভেন্দু। তাতে দিল্লিতে আধ ঘণ্টার জন্য সময় দিতে রাজি হন শাহ।


সেই মতো মঙ্গলবার দু'জনের সাক্ষাৎ হয়। সেখান থেকে বেরিয়ে শুভেন্দু জানান, বাংলায় তাঁর নামে দায়ের হওয়া বিভিন্ন মামলার বিশদ তথ্য-সহ আট পাতার পুস্তিকা নিয়ে শাহের সঙ্গে দেখা করেন। শাহের হাতে ওই পুস্তিকা তুলে দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন ভুয়ো মামলায় তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে। পুলিশ এবং আইপিএস অফিসাররা আসলে তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে, তাঁর কাজে বাধা সৃষ্টি করছেন বলেও অভিযোগ করেন শুভেন্দু। ওই পুস্তিকা পেয়ে শাহ বিস্ময় প্রকাশ করেন বলে জানিয়েছেন শুভেন্দু। তাঁর দাবি, মামলার ফিরিস্তি দেখে শাহ বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করেন, 'রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেই তো আপনার বিরুদ্ধে মামলা!'



শাহের সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু বলেন, "আমি ওঁকে তথ্য দিয়ে জানিেছে, বাংলায় একশ্রেণির আইপিএস অফিসার, পুলিশ অফিসার, তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর ভাইপোর নির্দেশে আমার স্বাভাবিক রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করছে। প্রচুর মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। আপাতত কলকাতা হাইকোর্টের রক্ষাকবচ পেয়েছি। রাজ্য সরকার একাধিক বার সুপ্রিম কোর্টে এসেছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট মামলা ফের হাইকোর্টেই ফিরিয়েছে। অর্থাৎ সর্বোচ্চ আদালতেরও মনে হয়েছে, যে আমার বিষয়টি বিচার্য বিষয়।"


তবে মামলার ফিরিস্তি তুলে ধরা নিয়ে শুভেন্দুকে কটাক্ষ করেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, "শুভেন্দু অধিকারী সেই তালিকায় সিবিআই-এর ওই এফআই রেখেছেন তো! যাতে শাহের সিবিআই নারদের তোলাবাজিতে শুভেন্দুর নামে এফআইআর করে রেখেছিল, যেটা থেকে বাঁচতে শাহের জুতো পালিশ করতে গিয়েছেন! যে তালিকা দিয়েছেন, সিবিআই-এর এফআইআর রয়েছে তো! ওটা তো সবার আগে দিয়ে বলা উচিত, আমি বিজেপি-তে এসে গিয়েছে। বাঁচান। বাংলার কেন শুধু, দিল্লির সিবিআই-এর এফআইআর-এর তালিকা দিলেন না কেন! আসলে ওটা থেকেই বাঁচতে যাচ্ছেন উনি।"


উল্লেখ্য, দিল্লিতে এ দিন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড় এবং কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের সঙ্গেও দেখা করেন শুভেন্দু। ধনকড় এবং নাড্ডার হাতেও তিনি ওই পুস্তিকা তুলে দেন বলে জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, এ দিন শুভেন্দু যখন সেন্ট্রাল হলে বলে অপেক্ষা করছেন, সেই সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। শুভেন্দুকে দেখে তিনি এগিয়ে আসেন এবং বলে ওঠেন, "শুভেন্দু ক্যায়সা হ্যায়!" এর পর দু'জনের মধ্যে সৌজন্য় বিনিময় হয়। এ ছাড়াও. ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা, গ্রাম সড়ক যোজনা-সহ একাধিক প্রকল্পের বরাদ্দ টাকা নিয়ে গিরিরাজের সঙ্গে বিশদ আলোচনা হয় তাঁর।