কলকাতা: লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে ৩০টি আসনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়ে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেনি বিজেপি। সেই ফলাফল নিয়ে ইতিমধ্যেই কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে বিজেপি-তে। দলের রাজ্য নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আগেই। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেই নিয়ে এবার মুখ খুললেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা স্বতন্ত্র ছিল না বলে যেমন মন্তব্য করলেন, তেমনই জানালেন, দলের সংগঠনের বিষয়ে তাঁর কোনও ভূমিকা নেই। (Suvendu Adhikari)


রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার সাম্প্রতিক কালে একাধিক মন্তব্য করেছেন। কখনও দলের অন্দরে অন্তর্ঘাতের রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন, কখনও আবার সংগঠন নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। বুধবার কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও সরব হয়েছেন তিনি। তৃণমূলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন নিযুক্ত পর্যবেক্ষক এবং CISF-এর একাংশের 'সেটিং' ছিল বলে দাবি করেছেন জগন্নাথ। (West Bengal BJP)


বুধবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন শুভেন্দু। সেখানে জগন্নাথের মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে তিনি বলেন, "আমি বিজেপি করি। সবাই আমাকে পুরস্কার দেয় না। তিরস্কারও দিতে পারে। অনেকে অনেক কিছু পোস্ট করতে পারেন, তির্যক মন্তব্যও করতে পারেন।  ভাল হলে নিজেদের ক্রেডিট দেন, আর খারাপ হলে আমার ঘাড়ে চাপান। দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বাইরে কথা বলতে চাই না আমি।"


আরও পড়ুন: Suvendu Adhikari: ডায়মন্ড হারবার, ঘাটালের ফল নিয়ে আদালতে BJP, চাওয়া হতে পারে CBI তদন্তও


কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে বিজেপি থেকে যে প্রশ্ন উঠছে, সেই নিয়ে শুভেন্দুর বক্তব্য, "নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে এখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছিল. খানে স্বতন্ত্র ভূমিকা ছিল না তাদের। কাশ্মীর বা মণিপুরের মতো এখানে স্বতন্ত্র ভূমিকা ছিল না। রাজ্য পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণ করেছে। ক্যুইক রেসপন্স টিম-কেও নিয়ন্ত্রণ করেছে রাজ্য পুলিশ। জগন্নাথ সরকারের মন্তব্য নিয়ে কিছু বলার নেই আমার। আমার কিছু বলার থাকলে, তা ফোরামে বলি। সরাসরি সেই কথা বলার সুযোগ রয়েছে আমার। কারও মাধ্যমে যেতে হয় না।"


আগামী ১০ জুলাই রাজ্যের চার বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন রয়েছে। তৃণমূলের তরফে প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলেও, বিজেপি-র অন্দরে তেমন কোনও শোরগোল চোখে পড়ছে না। বরং সুকান্ত মজুমদার কেন্দ্রে মন্ত্রী হওয়ার পর রাজ্য বিজেপি-র পরবর্তী সভাপতি কে হবেন, সেই নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। এ প্রসঙ্গে শুভেন্দু জানিয়েছেন, প্রার্থী নির্বাচন, প্রচার কৌশল, সব কিছুই বিজেপি-র সংগঠন ঠিক করে। তিনি কোর কমিটির সদস্য। বৈঠকে কিছু বলতে বলা হলে কথা বলেন। অনেক সময় চুপ করেও থাকেন। কিছু জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেন।


সামগ্রিক ভাবে তিনি দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন না বলে জানান শুভেন্দু। তাঁর কথায়, "প্রার্থী ঠিক হওয়ার পর দলের রাজ্য দফতর আমাকে যখন প্রচারের দায়িত্ব দেয়, আমি নিজের গাড়ি নিয়ে বেরোই। সরকারি গাড়ি চড়ি না, দলের থেকে তেলও নিই না। আমাদের বাড়ির পেট্রোল পাম্প থেকে কয়েক লক্ষ টাকা বৈধ রোজগার রয়েছে। রায়গঞ্জে প্রচারে গেলে সেখানে থাকতে হবে। হোটেল ভাড়াও আমি নিজে দেব। আমাকে বলা হলে প্রচারে যাইয সংগঠিত করার কাজটা আমার নয়। আমার জেলায় শুধু সংগঠনের লোকেরা রাজ্যের নির্দেশিকা মেনে চলে, আমার পরামর্শও মেনে চলে। এর বাইরে সংগঠনের ব্যাপারে কোনও হস্তক্ষেপ করি না আমি,আগামী দিনে করার ইচ্ছেও নেই।"


দলের সংগঠনে কোনও ভূমিকা নেই বলে যদিও জানিয়েছেন শুভেন্দু। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের চারকেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে তিনি আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। শুভেন্দু জানিয়েছেন, বসিরহাট, ঘাটাল, জয়নগর এবং ডায়মন্ড হারবারের ফল নিয়ে আদালতে যাচ্ছেন তাঁরা। কলকাতা হাইকোর্টে আগামী সপ্তাহেই পিটিশন দায়ের করবেন ওই চার কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীরা। বসিরহাটে সদ্য নির্বাচিত তৃণমূল সাংসদের প্রার্থী পদ বাতিলের আবেদন করা হবে। জয়নগর, ডায়মন্ড হারবারের একাধিক বুথের সিসি ফুটেজ কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে পরীক্ষার আবেদন জানাবেন। ঘাটালের একাধিক বুথের সিসিটিভি ফুটেজও কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে পরীক্ষার আবেদন করা হবে। প্রয়োজনে সিবিআই তদন্তও চাইতে পারে বিজেপি।