কলকাতা : বরাবরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থাভাজন তিনি। যতই বিতর্ক হোক, যা-ই অভিযোগ উঠুক, বারবার অনুব্রত মণ্ডলের পাশে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। এবারও বীরভূমের নেতার পাশে দাঁড়িয়েই কেন্দ্রীয় এজেন্সির তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাঁর ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। 



 'অনুব্রত মণ্ডলের স্রষ্টা কে ?'
বুধবার একদিকে যখন হন্যে হয়ে বোলপুরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছে সিবিআই, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নিশানা করলেন শুভেন্দু অধিকারী। প্রশ্ন তুললেন, এই অনুব্রত মণ্ডলের স্রষ্টা কে ? তিনি বলেন, অনুব্রতকে তৈরি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু বলেন, এককালে অনুব্রত ছিলেন বোলপুর বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী। সেখান থেকে তাঁর উত্থান। 

' বোলপুরের বাজারে মাগুর বিক্রি করা অনুব্রত ' 
শুভেন্দু বলেন, সিবিআই কোন বাড়িতে যাবে না যাবে, তা তো তাদের তদন্তের অংশ। কিন্তু বোলপুরের বাজারে মাগুর বিক্রি করা অনুব্রত কীভাবে আজ হাজার-হাজার কোটি টাকার মালিক ? তাঁর অভিযোগ, অনুব্রতর বেআইনি সম্পত্তির উৎস শাসকদলের আশীর্বাদ । স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় বিধানসভার বিরোধী দলনেতা দাবি করেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই দুর্নীতির কিং পিন' !
' শুভেন্দুর রাজনৈতিক পরিচিতি কার দয়ায় ', পাল্টা প্রশ্ন তুললেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন। 

প্রেক্ষাপট 

গত ১৪ অগাস্ট কার্যত অনুব্রত পাশে দাঁড়িয়ে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'কেষ্টরা ভয় পাবে না। একটা কেষ্টকে ধরলে। লক্ষ কেষ্ট রাস্তায় তৈরি হবে। 'এভাবেই বীরভূমের তৃণমূল সভাপতিকে কার্যত ক্লিনচিট দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় এজেন্সিকেও ফের নিশানা করেন তিনি। তিনি বলেন,  ' কেষ্টকে গ্রেফতার করলেন কেন? কেষ্ট কী করেছিল? একটা ইলেকশনেও বেরোতে দেননি। নরেনকেও বেরোতে দেয়নি। কেষ্টকে তো আটকে রেখে দেয়। ছেলেটা গত ২ বছর কষ্ট পেয়েছে। ' 

সেদিনও তৃণমূলনেত্রীকে কটাক্ষ করে শুভেন্দু অধিকারী ট্যুইট করেন, ' চোরে চোরে মাসতুতো ভাই, কেষ্ট দিদির প্রিয় তাই। ' 



বীরভূমের রাজনীতিতে অনুব্রত মণ্ডলের উত্থান চমকপ্রদ! মুদির দোকান, মাছের ব্যবসা, গ্রিলের কারখানা থেকে জেলা রাজনীতির সর্বময় নেতা হয়ে ওঠা ৩ ভাইয়ের মধ্যে অনুব্রত মণ্ডল ছিলেন মেজ। অষ্টম শ্রেণির পরে আর পড়াশোনা করেননি। নানুরের হাটসেরান্দি গ্রামে বাবার ছিল মুদির দোকান। সঙ্গে ছিল গ্রিলের কারখানা ও মাছের ব্যবসা। সেই সব কাজই দেখাশোনা করতেন অনুব্রত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৯৮ সালে যোগ দেন তৃণমূলে। ২০০৪ সাল থেকে অনুব্রত মণ্ডলই বীরভূম জেলা তৃণমূলের দায়িত্বে। এখন তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য তিনি। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একের পর এক সরকারি দায়িত্ব। রাজ্য গ্রাম উন্নয়ন পর্ষদ, রাজ্য সড়কগার যোজনা, এবং ময়ূরাক্ষী কটন মিলের সভাপতি তিনি। সবমিলিয়ে অনুব্রত মণ্ডলের জীবন বর্ণময়।