কলকাতা : ২৩৭ দিন অতিবাহিত। এখনও চলছে আন্দোলন। এই পরিস্থিতিতে ডিএ (Dearness Allowance) আন্দোলনকারীদের সংগ্রামী যৌথ মঞ্চে ফের হাজির হলেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। বিধায়ক হিসেবে নিজের বর্ধিত বেতন আন্দোলনকারীদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দিলেন বিরোধী দলনেতা। এর পাশাপাশি মঞ্চ থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে নিলেন একহাত। একাধিক ইস্যুতে চড়ালেন সুর।
মুখ্যমন্ত্রীকে একহাত শুভেন্দু বলেন, "আমাদের মতামতের বাইরে, আমাদের অনুপস্থিতিতে আপনি বিধানসভায় একতরফা ঘোষণা করেছেন, ৫০ হাজার টাকা করে বেতন বৃদ্ধি করলাম মন্ত্রীদের। আর প্রতিমন্ত্রী, এমএলএদের ৪০ হাজার টাকা করে। আমি বিরোধী দলনেতা যিনি ক্যাবিনেট মন্ত্রীর সমান। আমাকে পূর্ণ মন্ত্রীর মতোই ভাতা এবং বেতন দেওয়া হয়। বাড়তি যে অর্থ দিয়েছেন, সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ এবং তার সঙ্গে থাকা অনুমোদিত সংগঠনের ডিএ আন্দোলনের যে আইনি লড়াই, তাছাড়াও দমন-পীড়নের কারণে এবং নানা বিষয়ে জর্জরিত এই আন্দোলনকারী যাঁদের আন্দোলনের ২৩৭ দিন অতিবাহিত, আমি আমার যে বাড়তি অর্থ সেই অর্থ তাঁদের অ্যাকাউন্টে চেকের মাধ্যমে প্রদান করার জন্য প্রস্তাব এখানে দিয়েছি। কারণ, আমার প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ নেই। সরকার আমায় টাকা পাঠিয়ে দেয়। আমি আমার চেক এদের পাঠিয়ে দেব। আমি তাঁদের বলব, আপনাদের লড়াই আপনাদের মতো করে করুন। আপনাদের বলব, আমার এই অর্থ আপনারা পারলে আইনি লড়াইয়ের জন্য আইনজীবীদের দিয়ে দেবেন। প্রাথমিকভাবে তাঁরা আমার এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন।"
শুভেন্দুর এই প্রস্তাব প্রসঙ্গে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ বলেন, "প্রথমেই জানিয়ে রাখি যে, সরকারি কর্মচারী ছাড়া কারও কাছে টাকা-পয়সার আবেদন করিনি। উনি সহযোগিতা করতে চেয়েছেন। আমরা সেটা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করছি। দ্বিতীয় হচ্ছে, যেভাবে উনি আমাদের বিষয়টিকে বিভিন্ন ফোরামে তুলে ধরছেন, আমরা তার জন্য ওঁকে আলাদা করে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমরা চাই, উনি আমাদের এভাবে সাহায্য করে চলুন। কারণ, গণতন্ত্রে সাধারণ মানুষের কথা সরকারের কাছে তুলে ধরার মাধ্যম হচ্ছে বিরোধী যাঁরা নেতৃত্ব আছেন তাঁরা। উনি, কোনও রাজনৈতিক দলের বলেও আমরা মনে করি না। কারণ, বিরোধী দলনেতা একটা সাংবিধানিক পদ। আমাদের ডিএ-র দাবির থেকেও রাজ্যটাকে বাঁচানোর লড়াই।"
এদিন ডিএ আন্দোলনকারীদের দাবিদাওয়ার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি একাধিক ইস্যুতে রাজ্যের বিরুদ্ধে সুর চড়ান শুভেন্দু। তিনি বলেন, "বিস্তীর্ণ লালমাটি এলাকাতে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ প্রকৃতি মা দিয়েছেন। সেখান থেকে কী হচ্ছে ? এই যে বীরভূমে ডিসিআর , ভূমি দফতর যদি ২০০টি ডিসিআর কাটে, ৮০০টি নন-ডিসিআর পাথর চলে যাচ্ছে। বালি, কয়লা। একইভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা রেভিনিউ ভূমি দফতর থেকে আসার কথা। রাজ্যের কোষাগারে ১ হাজার কোটি জমা হচ্ছে। ৯ হাজার কোটি টাকা আপনার ভাইপো খেয়ে ফেলছেন। নিয়ে চলে যাচ্ছে। লাইন দিয়ে ওভার লোডিং গাড়ি স্লিপ দেখিয়ে যাচ্ছে।" মুখ্যমন্ত্রীকে একহাত নিয়ে বিরোধী দলনেতা বলেন, "এই রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থা বেহাল। শিক্ষা শেষ করেছেন। ২০২৩ সালে রেজিস্ট্রেশন করার পরেও ৪ লক্ষ ছেলে-মেয়ে মাধ্যমিকে পরীক্ষা দিতে আসেনি। ২ লক্ষ উচ্চ মাধ্যমিকে অ্যাডমিট কার্ড নিয়েও পরীক্ষা দিতে আসেনি। কারণ, আগের দিনে ছিল শিক্ষিত হও, জ্ঞানার্জন করো। নিজেকে মানুষ হিসাবে তৈরি করো। আজ উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে গেলে অর্থ লাগে। বাবা-মাকে অভিভাবককে খরচ করতে হয়। প্রত্যেকে চায়, কেরানি বা চতুর্থ শ্রেণির কাজ বা প্রাইমারি শিক্ষকতা বা চুক্তিভিত্তিক কাজ হলেও একটা লো-পেড এমপ্লয়ির কাজ করে ছেলে পরিবারের অর্থনৈতিক দায়িত্ব নিক। কিন্তু, আপনার রাজ্যে চাকরি নেই !"
তাঁর প্রশ্ন, "কী দিয়েছেন রাজ্যে ? গত ১২ বছরে ২১ হাজার মদের দোকান দিয়েছেন। ছেয়ে গেছে মদের দোকানে। মমতা ব্যানার্জির সরকার কী দিয়েছে ? ডিয়ার লটারি এবং মাটির লটারি। যে ডিয়ার লটারি গত '২২-'২৩ অর্থবর্ষে সাদা টাকায় তৃণমূলের ফান্ডে ইলেক্টোরাল বন্ডে ৩০০ কোটি টাকা এসবিআই থেকে চাঁদা দিয়েছে। সাদা টাকায়, কালো টাকায় কী করেছে জানি না। এমনকী ডিয়ার লটারি ১ কোটি টাকা চিফ মিনিস্টার রিলিফ ফান্ডে '২২-'২৩ অর্থবর্ষে মুখ্যমন্ত্রীকে টাকা দিয়েছে। অনরেকর্ড আমি বিরোধী দলনেতা বলছি। ডকুমেন্টারি এভিডেন্স নিয়ে বলছি। তার পরেও আপনি এদের (ডিএ আন্দোলনকারীদের) বঞ্চিত করছেন।"