কলকাতা: সাঁইথিয়া, বজবজের পর বিনা প্রতিন্দ্বন্দ্বিতীয় দিনহাটা পৌরসভাও দখল করেছে তৃণমূল (TMC)। সেই নিয়ে এ বার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের (West Bengal Election Commission) দ্বারস্থ হলেন রাজ্য বিধানসভা বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি (BJP) বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। গায়ের জোরে বিজেপি প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে হয়নি বলে অভিযোগ তাঁর। অবিলম্বে ওই তিনটি পৌরসভার নির্বাচন বাতিল করতে হবে বলেও কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছেন শুভেন্দু।
পৌরসভা নির্বাচনের আগে সম্প্রতি সাঁইথিয়া, বজবজ এবং গতকাল দিনহাটা পৌরসভার দখল নিয়েছে তৃণমূল। বিরোধী দলগুিল প্রার্থী দিতে না পারাতেই, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জোড়াফুল শিবিরের হাতে পৌরসভার দখল উঠেছে বলে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছেন দলের নেতারা। সেই নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই বৃহস্পতিবার কমিশনে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন শুভেন্দু।
এ দিন এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শুভেন্দু বলেন, ‘‘বাংলার পরিস্থিতি কী, কাল থেকে তার খণ্ডচিত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে গোটা দেশে। বাংলার মানুষও দেখেছেন যে, ডিসিআর কাটা সত্ত্বেও, বিজেপি প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হচ্ছে না। কয়লা চোর, ভোট পরবর্তী হিংসা খুনে নেতৃত্ব দেওয়া বীরভূমে তৃণমূলের কালো হাতের অঙ্গুলিহেলনে বোলপুরে এসডি অফিসের কাছে দোকানে বিজেপি নেতাদের আটকে রাখা হয়েছে। মানুষ সেই ভিডিয়ো ফুটেজ দেখেছেন।’’
আরও পড়ুন: Kolkata : লেক গার্ডেন্সে ফুটপাথ দখল করে ক্যাফেটেরিয়া, ভাঙার নির্দেশ কলকাতা পুরসভার
শাসকদলের চোখরাঙআনিতে বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র (WB Municipal Polls 2022) জমা নেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, ‘‘একই কায়দায় সাঁইথিয়া, গুসকরায় ৩টের আগে এসে রসিদ সংগ্রহ করা স্ত্ত্হেও মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি বিজেপি প্রার্থীদের। ওমওআর জানান, ওঁরা নাকি সওয়া ৪টেয় এসেছেন! একই কায়দায় ভোট পরবর্তী হিংসায় খুনি, ভাইপোর আশীর্বাদধন্য জাহাঙ্গির খান দাঁড়িয়ে থেকে বিরোধীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেয়নি।’’
তাঁদের কাছে এর সপক্ষে সমস্ত প্রমাণ রয়েছে বলেও জানান শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ আসনগুলিতে ৫০০ টাকা এবং সংরক্ষিত আসনগুলিতে ২৫০ টাকা দিয়ে ডিসিআর কেটে রাখা হয়েছিল। সব রসিদ রয়েছে আমাদের কাছে। কমিশনকে বলে দিয়েছি, ভোট বাতিল করতেই হবে। ২০১৮ সালে যেমন ৩৪ শতাংশ পঞ্চায়েতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল, ২০১৯-এ কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে তার যোগ্য জবাব দিয়েছিলেন মানুষ। আশা করি এ বারও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিরোধীদের আটকে রাখার জবাব দেবেন সকলে।’’
উল্লেখ্য, গত বিধানসভা উপ নির্বাচনে কোচবিহারের দিনহাটায় রেকর্ড ভোটে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের উদয়ন গুহ। পুরভোটেও দিনহাটার পৌরসভা নির্বাচনকে ১৬-০ করবেন বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সেই পরিস্থিতিতেই বুধবার, মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে সেখানকার ১৬টি ওয়ার্ড বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল করে তৃণমূল। বিজেপি নেতা মিহির গোস্বামী মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে তাঁকে লক্ষ্য করে পচা ডিম এবং ইট ছোড়া হয় বলে অভিযোগ।
এ দিন শুভেন্দুর কথাতেও মিহিরের কথা উঠে এসেছে। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের লুম্পেনরা মিহির গোস্বামীর মতো সিনিয়র বিধায়কের গায়ে পচা ডিম ছুড়ছেন। বাবার বয়সি এক জন মানুষকে কদর্য ভাষায় আক্রমণ করছে। লাল চুল, কানে দুল, তার নাম যুব তৃণমূল। এ লুম্পেনগুলো নিজেদের নাম বা পরিবারের নাম লিখতে পারে কি না সন্দেহ রয়েছে। কয়লা, বালি, চন্দনকাঠ এবং গরুপাচারই এদের কাজ। তারা মিহির গোস্বামীর সঙ্গে কী করেছে, রাজ্যের মানুষ দেখেছেন।’’
এর আগে, বিজেপি-র দিলীপ ঘোষও বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। বাংলায় গণতন্ত্র নেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। বাম শিবিরের অভিযোগ, তাঁদের প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু তৃণমূলের দাবি, বিরোধীরা প্রার্থীই দিতে পারেনি। তাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পৌরসভার দখল তাদের হাতে গিয়েছে।