ভাস্কর ঘোষ, হাওড়া : রামকৃষ্ণলোকে পাড়ি দিয়েছেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী স্মরণানন্দ। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ষোড়শ অধ্যক্ষ ছিলেন তিনি।  তাঁর পরবর্তী অধ্যক্ষ হলেন স্বামী গৌতমানন্দ। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অন্তর্বর্তীকালীন অধ্যক্ষ  হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন স্বামী গৌতমানন্দ। বেলুড় মঠের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বেলুড় মঠে আয়োজিত রামকৃষ্ণ মঠের অছি পরিষদ ও রামকৃষ্ণ মিশনের পরিচালন সমিতির ২৪ এপ্রিল ২০২৪ তারিখের বৈঠকে এই সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা হয়েছে।  স্বামী গৌতমানন্দ রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের ১৭তম সঙ্ঘাধ্যক্ষ নির্বাচিত হলেন। গত ২৬ মার্চ স্বামী স্মরণানন্দজী মহারাজ মহাসমাধি লাভ করেন, তারই দায়িত্ব এবার কাঁধে তুলে নিলেন স্বামী গৌতমানন্দজী মহারাজ । 


মহারাজ দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁকে সোশ্যাল মিডিয়ায় শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি লিখেছেন, 'আমি নিশ্চিত যে তিনি আমাদের সমাজকে বৃহত্তর জ্ঞান এবং সহানুভূতির দিকে পরিচালিত করবেন। '




মিশন সূত্রে খবর, স্বামী গৌতমানন্দজীর জন্ম কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুতে। ১৯২৯ সালে, তাঁর পূর্বপুরুষেরা তামিলনাডুতে বসবাস করতেন। যৌবনে তিনি রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের অন্যতম সহ-সঙ্ঘাধ্যক্ষ এবং বেঙ্গালুরু মঠের তৎকালীন অধ্যক্ষ স্বামী যতীশ্বরানন্দজী মহারাজের সংস্পর্শে আসেন। ১৯৫৫ সালে স্বামী যতীশ্বরানন্দজীর কাছ থেকে তিনি মন্ত্রদীক্ষা লাভ করেন তিনি। পরের বছর  গুরুর নির্দেশে তিনি রামকৃষ্ণ সঙ্ঘ দিল্লি আশ্রমে যোগদান করেন । রামকৃষ্ণ মিশন, দিল্লিতে তিনি ৬ বছর সেবামূলক কাজ করেছিলেন। 


মিশনের তরফে জানানো হয়েছে, 



  • ১৯৬২ সালে স্বামী বিশুদ্ধানন্দজী মহারাজের কাছ থেকে তিনি ব্রহ্মচর্য্য দীক্ষা লাভ করেন এবং ১৯৬৬ সালে রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের দশম সঙ্ঘাধ্যক্ষ স্বামী বীরেশ্বরানন্দজী মহারাজের কাছ থেকে সন্ন্যাস-দীক্ষা লাভ করেন।

  • ১৯৬৪ সালে তিনি দিল্লী থেকে সোহরা (পূর্বে চেরাপুঞ্জি) আশ্রমে যান। কয়েক বছর সেখানে সেবা কাজে ব্রতী থাকার পর তাঁকে মুম্বই আশ্রমে পাঠানো হয়।

  • এই কেন্দ্রগুলিতে থাকাকালীন তিনি নানা সেবাকাজে অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৭৬ সালে অরুণাচল প্রদেশের আদিবাসী অধ্যুষিত প্রত্যন্ত গ্রামে অবস্থিত আলো (পূর্বে আলং) কেন্দ্রের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন গৌতমানন্দজী। সুদীর্ঘ ১৩ বছর তিনি সেখানে আদিবাসীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারের কাজে নিযুক্ত ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে আলং কেন্দ্রটি নানা দিক দিয়ে উন্নত হয়ে জাতীয় স্তরে খ্যাতি লাভ করে।

  • তাঁর প্রেরণায় পদুচেরি (কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল), অন্ধ্রপ্রদেশে কাড়াপা ও তিরুপতি, তামিলনাডুতে তাঞ্জাভুর, বিষ্ণুপুরম, চেঙ্গম, থিরুম্মুকুডল প্রভৃতি স্থানে মঠ ও মিশনের নতুন কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে।

  • রামকৃষ্ণ মঠের অছি পরিষদের অনুমোদনে ২০১২ সাল থেকে গৌতমানন্দজী মন্ত্রদীক্ষা দান করা শুরু করেন। এর কয়েক বছর পর ২০১৭ সালে তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের অন্যতম সহ-সঙ্ঘাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন।


স্বামী গৌতমানন্দ ভক্তমহলে প্রণম্য।  সুবক্তা, বাগ্মী হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তাও রয়েছে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ভাবাদর্শে চলা মানুষের মধ্যে।