কলকাতা: পর পর ভোটে হারলেও, এত দিনে নাকি জীবাণুমুক্ত হল বঙ্গ বিজেপি (West Bengal BJP)! মঙ্গলবার জয়প্রকাশ মজুমদার (Jay Prakash Majumdar) তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর এমনই মন্তব্য করলেন বিজেপি-র বর্ষীয়ান নেতা তথাগত রায় (Tathagata Roy)। আর তারই সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপি-র দায়িত্বে থাকা নেতাদের কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘কি এক পদার্থ জোগাড় করে তাকে সহ-সভাপতি বানিয়েছিল কেডিএসএ গ্যাং’।
বিজেপি-তে দীর্ঘ বিদ্রোহ-পর্ব কাটিয়ে মঙ্গলবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee), অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) এবং ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের (Prashant Kishor) উপস্থিতিতে জোড়াফুল (TMC) পতাকা হাতে তুলে নেন জয়প্রকাশ। তা নিয়েই টুইটারে জয়প্রকাশ, ছেলের প্রশিক্ষণের সূত্রে পিকে-র সঙ্গে তাঁর সংযোগ নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দেন তথাগত।
তৃণমূলে যোগ দিয়ে জয়প্রকাশ যখন মমতাকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিচ্ছেন, সেই সময় টুইটারে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডাকে ট্যাগ করে তথাগত লেখেন, ‘বিজেপি ত্যাগ এবং তৃণমূলে যোগদান জয়প্রকাশ মজুমদারের। এই প্রক্রিয়ায় ওঁর ছেলেরও যোগদান, বাবা বিজেপি-র সহ সভাপতি থেকে দলে যখন পচন ধরাচ্ছেন, সেই সময় ওই ছেলে প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে কাজ করছিলেন। কেডিএসএ গ্যাং কী ভাবে বিজেপি-র নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছে দেখুন। এটা সর্বসমক্ষে বলা প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন: BJP: 'যুদ্ধ জয়ের ক্ষেত্রে নিয়ম না মানা সেনা কাজে আসে না', জয়প্রকাশের তৃণমূলযোগে কটাক্ষ সুকান্তর
বিধানসভা নির্বাচনের আগে টলিপাড়া থেকে দলে দলে তারকাদের দলে যোগদান করানো নিয়ে আগেও কটাক্ষ করেছিলেন তথাগত। এ দিনও তার পুনরাবৃত্তি ঘটে। তিনি লেখেন, ‘কেডিএসএ গ্যাংয়ের এ সব নিয়ে ভাবার সময় ছিল না। তারা কামিনী-কাঞ্চন নিয়েই মশগুল। শোনা যায়, জয়প্রকাশ নাকি লাথি খাওয়ার জন্য বেশ কিছু টাকা খরচ করেছিল। শ্রাবন্তী, সব্যসাচী দত্ত, বাবুল সুপ্রিয়, রাজীব, তার পর এই! যাই হোক বিদায় তো হয়েছে’ আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে!’
জয়প্রকাশ যদিও জানিয়েছেন, তিনি বিজেপি ছাড়েননি। বরং তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তার প্রেক্ষিতে রাজ্য বিজেপি-র প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ জানিয়েছেন, এমন দু’এক জন চলে গেলে দলের কোনও ক্ষতি হয় না। তা নিয়ে তথগতর বক্তব্য, ‘জয়প্রকাশ তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র এই দৈন্যদশার মধ্যেও একটি জীবাণু খসে যাওয়ায় একটু শক্তি বাড়ল। কিন্তু কি এক পদার্থ যোগ করে তাকে সহ সভাপতি বানিয়েছিল কেডিএসএ গ্যাং’ ওর ছেলে প্রশান্ত কিশোরের কাছে চাকরি করত। আর বাবা সহ-সভাপতি পদে থেকে খবর সরবরাহ করত।’
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ১৮টি আসন পেয়ে তখন উৎসাহে ফুটছে বিজেপি। সেই সময় করিমপুরের পিপুলখোলায় উপনির্বাচন চলাকালীন আক্রান্ত হন জয়প্রকাশ। তাঁকে মারধর, লাথি মেরে ঝোপে ফেলে দেওয়ার দৃশ্য ধরা পড়ে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায়। সেইসময় তৃণমূলের বিরুদ্ধেই আঙুল তুলেছিলেন জয়প্রকাশ। আজ সেই তৃণমূলেই গিয়ে উঠলেন তিনি। কিন্তু তথাগতর দাবি, প্রচার পেতে নিজেই টাকা দিয়ে তৃণমূলের লোকেদের কাছ থেকে লাথি খেয়েছিলেন জয়প্রকাশ। জয়প্রকাশকে নিয়ে আক্রমণ করতে গিয়ে তথাগত যদিও সরাসরি রাজ্য বিজেপি নেতাদের নাম উল্লেখ করেননি। তবে কেডিএসএ গ্যাং বলতে তিনি আসলে কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষ, শিবপ্রকাশ এবং অরবিন্দ মেননকেই নিশানা করেছেন বলে জল্পনা গেরুয়া শিবিরে। কারণ রাজ্যে বিজেপি-র ভরাডুবি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অহরহ এই শব্দবন্ধ ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে তথাগতকে। তার পাল্টা দিলীপকেও জবাব দিতে শোনা গিয়েছে।