পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া: সাগরদিঘিতে ধাক্কা খেয়ে তৃণমূল বিধায়কের আত্মশুদ্ধির ডাক? 'দলীয় কর্মীদের বার্তা দিয়ে তালডাংরার তৃণমূল বিধায়ক অরূপ চক্রবর্তী বলেন, মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার জন্যই আমরা নির্বাচিত হয়েছি। সেই দায়িত্ব আমাদের পালন করতে হবে। তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের ব্যবহার হবে ভাল। আমরা কাউকে লাল চোখ দেখাব না। কাউকে কড়া কথা নয়, বস্কদের শ্রদ্ধা করতে হবে। মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে হবে'। এরপরই এ নিয়ে পাল্টা কটাক্ষ ছুঁড়েঠে বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকারও, তিনি বলেন, 'তৃণমূল মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এসব বলে আর ড্যামেজ কন্ট্রোল করা সম্ভব নয়'।  


পঞ্চায়েত ভোটের আগে সতর্ক বাঁকুড়ার তৃণমূল নেতৃত্ব। দলীয় কর্মীদের জন্য আচরণবিধি বেঁধে দিলেন তালডাংরার বিধায়ক। শেষ মুহূর্তের প্যাচওয়ার্কে কাজ হবে না, কটাক্ষ বিজেপি সাংসদের। সাগরদিঘির এফেক্ট, শাসকদলকে কটাক্ষ করেছে বামেরাও। 


মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির উপনির্বাচনে ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল। S প্রেক্ষাপটে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে সতর্ক তারা। সোমবার দলীয় কর্মীদের জন্য এমনই আচরণবিধি বেঁধে দিলেন বাঁকুড়ার তালডাংরার তৃণমূল বিধায়ক। নিজের বিধানসভা এলাকায় দিদির সুরক্ষাকবচ কর্মসূচিতে গিয়ে তৃণমূল কর্মীদের ভাল ব্যবহার করার নির্দেশ দিলেন তিনি। স্বীকার করলেন, বিরোধীদের মোকাবিলা করতেই এই উদ্যোগ। বিরোধীরা অবশ্য় কটাক্ষের সুরে বলছে, এসব করে তৃণমূলের কোনও লাভ হবে না! সামনে পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে বাঁকুড়ায় হারানো জমি উদ্ধারে মরিয়া তৃণমূল। পাল্টা শাসকদলকে বিঁধতে দুর্নীতি-অস্ত্রে শান দিচ্ছে বিরোধীরা। 


কী কারণে সাগরদিঘিতে দলের হার? কারণ খুঁজতে দলীয় স্তরে তদন্তের নির্দেশ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, সংখ্যালঘুরা তৃণমূলের থেকে মুখ ফেরাচ্ছে কিনা, তা নিয়েও একটি সামগ্রিক রিপোর্ট দিতে বলেছেন তিনি। আর এ নিয়েই শুরু হয়েছে চাপানউতোর। 


২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে ৫০ হাজারের বেশি ভোটে জেতা সাগরদিঘি আসনটি উপনির্বাচনে প্রায় ২৩ হাজার ভোটে হারতে হয়েছে তৃণমূলকে! কিন্তু এই হারের কারণ কী?বিরোধীরা একজোট হওয়াতেই কি হারতে হল তৃণমূলকে?


হারের নেপথ্যে স্থানীয় স্তরে কোনও অন্তর্ঘাত নেই তো? এইসব প্রশ্নের উত্তর পেতে এবার সাগরদিঘির উপনির্বাচনে বিপর্যয় নিয়ে দলীয় স্তরে তদন্তের নির্দেশ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর কয়েকজন মন্ত্রী-বিধায়কদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, সেখানে সাগরদিঘির হার নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই তিনি দলীয় স্তরে হারের কারণ নিয়ে অন্তর্তদন্তের নির্দেশ দেন। 


২০১১ থেকে ২০২১ অবধি সংখ্যালঘুদের ঢালাও সমর্থন পেয়ে এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু, ৬৮ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটার অধ্য়ুষিত সাগরদিঘিতে তৃণমূলের পরাজয়ে প্রশ্ন উঠছে, সংখ্য়ালঘুরা কি তাহলে তৃণমূলের থেকে মুখ ফেরাচ্ছে? সূত্রের খবর, এদিনের ঘরোয়া বৈঠকে, সামগ্রিকভাবে সংখ্যালঘুদের অবস্থান নিয়েও রিপোর্ট দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন তৃণমূলনেত্রী।  বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সরকার গত ১২ বছরে সংখ্যালঘুদের জন্য প্রচুর কাজ করেছে। 


তারপরও কি সংখ্যালঘুরা মুখ ফেরাচ্ছে? তাদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোথাও কি ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে? যদি থাকে, তাহলে সেটা কী? এ নিয়ে রাজ্যের তিন মন্ত্রী, গোলাম রব্বানি, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী, সাবিনা ইয়াসমিন ও বিধায়ক জাকির হোসেন-সহ ৫ জনের একটি কমিটি গড়ে দেন। তাঁদেরই সংখ্যালঘুদের নিয়ে সামগ্রিক রিপোর্ট তৈরি করে তা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সাগরদিঘি উপনির্বাচনে কী কারণে হার? দলীয় স্তরে তদন্তের নির্দেশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। সাগরদিঘি ফলের কাটাছেঁড়া করে কি পঞ্চায়েতে ফাঁকফোকড় বোজাতে পারবে তৃণমূল? সেটাই দেখার।