কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: নেতাজি ইন্ডোরে অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের ছবি থাকা উচিত ছিল। অভিষেক ছাড়া তৃণমূলের সভা অসম্পূর্ণ। মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের সভার পরদিনই কার্যত বিদ্রোহের সুর ধরা পড়ল, তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের গলায়।


কুণাল ঘোষ এ দিন বলেন, অভিষেকের বোধ হয় মঞ্চে দৃশ্যত শারীরিকভাবে না আসতে পারলেও, অভিষেকের একটা ছবি থাকা উচিত ছিল। জুটিটাকেই রাখতে হবে, আমি একবারও বলছি না অভিষেক ছাড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পারবেন না, এটা কথা নয়। আবার অভিষেক তৃণমূল না করলে অভিষেকের চলবে না সেরকমও ব্যাপার নয়।


কার্ল মার্কস , হেগেলের দ্বন্দ্বমূলক ভাববাদের সঙ্গে ফয়েরবাখের বস্তুবাদের মিলন ঘটিয়ে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদে পরিণত করেছেন। মার্কস দেখিয়েছেন, মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুর মধ্য়ে বিরোধের বীজ বর্তমান। তৃণমূলের অন্দরেও কি এখন দ্বন্দ্বের বীজ? একদা দলের রাজ্য়সভার সাংসদ বর্তমানে দলের রাজ্য় সাধারণ সম্পাদক সেইসঙ্গে মুখপাত্র। এহেন কুণাল ঘোষের একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য় এই প্রশ্নই উস্কে দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার, লোকসভা ভোটের আগে নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের মেগা কর্মসূচি ছিল শুধুই মমতাময়। মঞ্চে ছিল না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি।


মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বক্তব্য় রাখার আগে, তৃণমূলের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের লাইভ স্ট্রিমিংয়ে মেরেকেটে বার পাঁচেক, কয়েক সেকেন্ড করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা যায়। নেপথ্য়ে অন্য় কারণ?


এ দিকে অভিষেকের ছবি না থাকা নিয়ে কুণাল ঘোষ বলছেন, 'মমতাদি শেষ কথা, মমতাদি সম্পদ তৃণমূলের মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অভিষেক নিজেকে গ্রুম করে প্রচুর আত্মত্যাগ করে পরিশ্রম করে যে জায়গাটা তৈরি করে ফেলেছে, তাতে ওঁকে বাদ দিয়ে তৃণমূলের মঞ্চটা খানিকটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ভিতরে তাঁর ছবি থাকলে ভাল হত।


আটের দশকে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের রাজনৈতিক পথচলা শুরু। নয়ের দশকে তিনিই অগ্নিকন্য়া। ২০১১-য় তিনিই মুখ্য়মন্ত্রী। আর এখন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায় তৃণমূলের সেনাপতি। 


রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ এ দিন বললেন, 'আমি দিদির কাছে ভাল সাজতে চাইছি যে, দিদি তুমি ধরো ওদিক দিয়ে হচ্ছে না, আবার ওখানে গিয়ে কেউ বলছি যে, তুমি ধরে নাও পুরনোরা ভুল, এই দুজনের মধ্যে কাউকে অস্বীকার করে, এটা ২০২৩ সাল, ২০২৩, এটা সাতের দশক, আটের দশক, নয়ের দশক এগুলো পার হয়ে, ২০০০ থেকে ২০২২ অবধি পার হয়ে ২০২৩, ফলে এই রেষারেষির জল্পনাটাই বাজারে গেলে এটা তৃণমূলের পক্ষে স্বাস্থ্যকর নয়। শীর্ষ নেতৃত্ব যাঁরা আছেন তাঁরা অনেক শক্তিশালী, মমতাদি আছেন, অভিষেক রয়েছেন, তারপর সুব্রত বক্সী, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস এসব দাপুটে সব শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁরা দল চালাচ্ছেন। মমতাদির ছবি তুলতে গেলেই যাঁরা একসঙ্গে ফ্রেমে এসে যায়, তাঁদেরই তো দায়িত্ব গোটা সিস্টেমটাকে ঠিকভাবে চালানোর'।


লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল ঝড় তুলবে, না কি তৃণমূলের অন্দরেও তুফান উঠতে পারে? উত্তর ভবিষ্য়তের গর্ভে।