অমিতাভ রথ, হংসরাজ সিংহ, সন্দীপ সমাদ্দার ও পার্থপ্রতিম ঘোষ, পুরুলিয়া : দিনভর চেষ্টা করেও বিফল বনদফতর। দিন পেরিয়ে রাত, এখনও অধরা বাঘিনী যমুনা। বন দফতর সূত্রে শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী পুরুলিয়ার বান্দোয়ান থানার রাইকা পাহাড়ের কেশরা জঙ্গলে রয়েছে ওই বাঘিনী। জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় গবাদি পশুদের দিয়ে ফাঁদ পেতেও ধরা যায়নি যমুনাকে। মোটেই ওই ফাঁদে পা দেয়নি বাঘিনী। এখনও বাঘিনী বনদফতরের আওতায় না আসায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে। গ্রামে গ্রামে মাইকিংয়ের মাধ্যমে সতর্কতা প্রচার চলছে। গৃহবন্দী হয়ে পড়েছেন মানুষজন। রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। বিভিন্ন জায়গায় মোতায়েন রয়েছেন বনকর্মীরা। পুরুলিয়া বনবিভাগ, উড়িষ্যার সিমলিপাল রিজার্ভ ফরেস্টের বিশেষ দল এবং সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের থেকে আসা বিশেষ টিম একত্রিত হয়ে বাঘিনীকে বাগে আনতে মরিয়া। তবুও অধরা বাঘিনী। 


এখনও বাগে আসেনি বাঘিনী। ওড়িশার সিমলিপাল জঙ্গল থেকে পালিয়ে এসে ঘুরে বেড়াচ্ছে জঙ্গলমহলে। ঝাড়গ্রামের পর এবার পুরুলিয়ায় মিলেছে বাঘিনী যমুনার খোঁজ। তাকে ধরতে হিমশিম খাচ্ছেন বন দফতরের কর্মীরা। কাঁকড়াঝোড়ে বাঘ খুঁজতে নেমেছে আধা সেনাও। স্নিফার ডগ নিয়ে চলছে তল্লাশি। আতঙ্কে ঘুম উড়েছে জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের। জঙ্গলমহলের করিডরে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাঘিনী। রবিবার সকালে কাঁকড়াঝোড়ে বাঘিনীর খোঁজে নামে সিআরপিএফ। জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে চলে রুটমার্চ। যমুনাকে খুঁজতে আনা হয় স্নিফার ডগ ‘গোল্ডি’কে। সে আইইডি খুঁজতে যতটা পারদর্শী, বাঘ-সিংহ-হাতির মতো বন্যজন্তুর সন্ধান দিতে ততটাই পটু। এর মধ্যেই জানা যায়, বাঘিনী পৌঁছে গেছে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে। সেখানে রাইকা-র জঙ্গলে তার খোঁজ মিলেছে। এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। 


প্রায় ২ সপ্তাহ আগে ওড়িশার সিমলিপাল ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্র থেকে উধাও হয় দুই বাঘিনী, জিনাত ও যমুনা। গলায় পরানো রেডিও কলারের মাধ্যমে ঝাড়খণ্ডে জিনাতের খোঁজ মেলে। যমুনা পাড়ি দিয়েছিল বাংলায়। শুক্রবার ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির শিমুলপালে কটাচুয়ার জঙ্গলে তার গতিবিধি টের পান বন দফতরের কর্মীরা। কিন্তু রাতেই অবস্থান বদলে ফেলে বাঘিনী। ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছয় কাঁকড়াঝোড়ের ময়ূরঝর্নার জঙ্গলে। শনিবার জুজুরধারা গ্রামের কাছে বাঘিনীর নড়াচড়া টের পেলেও তাকে দেখা যায়নি। রবিবার সকালে যমুনার সন্ধান মেলে পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে রাইকা-র জঙ্গলে। 


কাঁকড়াঝোড়ে থাকার সময় রাতের ঘুম উড়ে যায় স্থানীয় বাসিন্দাদের। সন্ধে হতেই নিজেদের ঘরবন্দি করে ফেলেন গ্রামবাসীরা। তড়িঘড়ি জঙ্গলের আশপাশে খাঁচা পাতা হয়। বাঘিনীকে টোপ দেওয়ার জন্য আনা হয় গবাদি পশু। বন দফতরের তরফে পুরুলিয়া জেলা পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে। কাছেই দুয়ারসিনি পর্যটন কেন্দ্র। ফলে বাড়তি সতর্ক পুলিশ। বন দফতর জানিয়েছে, পুরুলিয়া থেকে জঙ্গলপথে ১০-১২ কিলোমিটার দূরেই ঝাড়খণ্ড সীমানা। তাই বাঘিনীকে বাগে আনার চেষ্টা চালানোর পাশাপাশি, ঝাড়খণ্ডের বন দফতরের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।