কলকাতা : ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে শেষ শহিদ দিবস। তৃণমূলের সবথেকে বড় মঞ্চও। কাজেই, এই সমাবেশ থেকে যে লোকসভা ভোট নিয়ে বার্তা দেবেন তৃণমূলনেত্রী, সেকথা বিলক্ষণ জানতেন রাজ্যের রাজনীতি-সচেতন মানুষ। এর পাশাপাশি, পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে যে হিংসা দেখা গেছে এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেস-সিপিএমের স্থানীয় স্তরের নেতৃত্বের তৃণমূলকে নিয়ে চূড়ান্ত ক্ষোভের কথা জানেন মমতা। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি-বিরোধী বৃহত্তর জোটে কোনও প্রভাব পড়বে না তো ? তৃণমূলনেত্রীর ক্ষোভে ভেস্তে যাবে না তো 'INDIA'-র পথচলা। এরকম হাজারো জল্পনার মধ্যে জোটে তৃণমূলের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন নেত্রী। বললেন, "INDIA লড়বে, তৃণমূল কংগ্রেস পাশে সৈনিকের মত ঝান্ডা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। আমি বলে দিয়েছি, আমাদের চাওয়ার কিছু নেই। আমরা একটাই চাই, লেট ইন্ডিয়া উইন, লেট বিজেপি লুজ (ভারত জিতুক, বিজেপি হারুক)।"
পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে চূড়ান্ত হিংসার ছবি দেখা গেছে গোটা রাজ্যে। শুধু তৃণমূল নয়, অন্য রাজনৈতিক দলের বহু কর্মী-সমর্থক খুন হয়েছেন। যা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাম-কংগ্রেস-বিজেপিরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে শাসকদলকে। রাজ্যের বহু জায়গায় সন্ত্রাস চালিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় বলে একযোগে অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, ভোটের নামে কার্যত প্রহসন হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গত ১৭ ও ১৮ জুলাই বিজেপি-বিরোধী দলগুলি বেঙ্গালুরুতে বৈঠকে বসে। সেখান থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধী শিবির। বিরোধীদের নতুন জোটের নাম দেওয়া হয়েছে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স। অর্থাৎ INDIA (Indian National Developmental Inclusive Alliance)। সেই নামের সূত্র ধরেই বেঙ্গালুরুতে বৈঠকের শেষ দিনে সাংবাদিক বৈঠক থেকে NDA-কে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বলেন, 'INDIA-কে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে NDA ? বিজেপি তোমরা কি INDIA-কে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে?'
তৃণমূলনেত্রীর এই কড়া অবস্থানের পরেও, বাংলায় সিপিএম-কংগ্রেস নেতৃত্ব তৃণমূলের সঙ্গে জোট নিয়ে কী অবস্থান নেবে তা নিয়ে জল্পনা ছিল। তাতে অসন্তোষের কালো মেঘ দেখা যায় কংগ্রেসের অন্দরে। রাহুল গাঁধীকে ট্যাগ করে একের পর এক ট্যুইট ও ফেসবুক পোস্টে ক্ষোভ উগরে দেন প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক সুমন রায় চৌধুরী। প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র কৌস্তভ বাগচী বলেন, 'যেখানে পঞ্চায়েতে এত লোক মারা গেল, সেখানে এই বৈঠক। আমাদের বাড়িঘর লুঠ হচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্য নষ্ট হচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের প্রাণের ভয়, সম্ভ্রমের ভয়। সেখানে এক মঞ্চে এভাবে মিটিং না করলেই মনে হয় ভাল হতো।' ক্ষোভের সুর শোনা যায় কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীর গলাতেও। তিনি বলেন, 'আমাদের লড়াই চলবে, যাঁরা বলেছিল কংগ্রেস পচা ডোবা, তাঁরাই এখন কংগ্রেসের পচা ডোবায় ডুব দিচ্ছে।' মুখ খুলেছেন সিপিএমের একের পর এক নেতা-কর্মীও।
এই পরিস্থিতিতে আজ ২১ জুলাইয়ের সমাবেশের দিকে চোখ ছিল রাজনৈতিক মহলের। সেই মঞ্চ থেকে এককাট্টা হয়ে বিজেপি-বিরোধী লড়াইয়ের বার্তাই দিলেন তৃণমূলনেত্রী। বললেন, "ভারত জিতবে, মোদি হারবেন, বিজেপি হারবে। এটাই আমাদের একমাত্র স্লোগান। আর দ্বিতীয় কোনও স্লোগান নেই। ২০২৪-এ জয় বাংলা স্লোগানের সঙ্গে সঙ্গে জয় ইন্ডিয়া স্লোগানও তুলব। সব অনুষ্ঠানে এই স্লোগান জনপ্রিয় করে তুলব। তৃণমূলের তরফে, ২৬টি রাজনৈতিক দলকেই অভিনন্দন জানাচ্ছি, যারা একছাতার তলায় এসেছে।" পাশাপাশি তিনি কর্মী-সমর্থকদের শপথ নিতে বলেন, 'অত্যাচার করব না। অনাচারে মানুষকে মরতে দেব না।' শুধু তা-ই নয়, লোকসভা ভোটের আগে জোটবদ্ধ লড়াইয়ের লক্ষ্যে মণিপুর ইস্যুতেও সুর চড়িয়ে সেখানে প্রতিনিধিদল যাওয়ার কথা বললেন। মমতা বলেন, "আমার সঙ্গে অরবিন্দর (কেজরিওয়াল) কথা হয়েছে। আমরা চাইছি, INDIA থেকে একটা দল মণিপুরে যাই। মুখ্যমন্ত্রীদের দল। সেখানে গিয়ে ক্যাম্পে মিলিত হই। তাদের সঙ্গে দেখা করি। তারাও চাইছে। সব দল যদি এতে সম্মতি দেয়, তাহলে আমরা নিশ্চয়ই যাব।"