কলকাতা: রাজ্যের ছয় আসনে বিধানসভা উপনির্বাচনে ধরাশায়ী বিরোধীরা। ছ'টির মধ্যে তিনটিতে ইতিমধ্যেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। বাকি তিনটি আসনেও এগিয়ে রয়েছেন জোড়াফুল শিবিরের প্রার্থীরা। নৈহাটি, সিতাই এবং মাদারিহাটে জয়যুক্ত হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। এর মধ্যে মাদারিহাটে তৃণমূলে জয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এতদিন মাদারিহাট বিধানসভা আসনটি বিজেপি-র দখলে ছিল। পদ্মশিবিরের থেকে এবার সেটি ছিনিয়ে নিল জোড়াফুল শিবির।(TMC Wins Madarihat)
শনিবার গণনাপর্বের শুরুতেই তৃণমূলের জয়ের ইঙ্গিত মেলে মাদারিহাটে। শেষ পর্যন্ত ১১টার কিছু পরে তৃণমূল প্রার্থী জয়প্রকাশ টোপ্পোকে মাদারিহাটে জয়ী ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ২৮ হাজার ১৬৮ ভোটে জয়ী হয়েছেন জয়প্রকাশ। বিজেপি-র রাহুল লোহার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। নির্দল প্রার্থী বুদ্ধিমান লামা (তামাং) তৃতীয় হয়েছেন সেখানে। RSP-র পদম ওঁরাও চতুর্থ, কংগ্রেসের বিকাশ চম্প্রমারী পঞ্চম স্থানে রয়েছেন। (Madarihat By Elections Result 2024)
অথচ মাদারিহাট এতদিন বিজেপি-র শক্ত ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত ছিল। রাহুলের হয়ে এবারে সেখানে দফায় দফায় প্রচারে যেতে দেখা গিয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকেও। তার পরও গড় রক্ষা করতে পারল না গেরুয়া শিবির।
প্রথমে ২০১৬ এবং পরবর্তীতে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মাদারিহাটে বিজেপি-কে জয় এনে দিয়েছিলেন মনোজ টিগ্গা। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে আলিপুরদুয়ার থেকে প্রার্থী হয়ে জয়ী হন তিনি। সেই কারণেই এবার উপনির্বাচন হয় মাদারিহাট। এবারে এ ছয়টি আসনে উপনির্বাচন হয়, তার মধ্যে একমাত্র মাদারিহাটই বিজেপি-র দখলে ছিল। তাই ওই আসনের দিকে নজর ছিল সকলেরই। তবে শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করল তৃণমূলই।
মাদারিহাটে তৃণমূলের এই জয় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য রাজনীতিতে। কারণ উত্তরবঙ্গে ফের একবার জমি হারাল বিজেপি। এদিন জয়ের পর তাই আবেগ ধরে রাখতে পারেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের এক নেতা বলেন, "মাদারিহাটের জয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপহার দিচ্ছি। যেভাবে তিনি চা বাগানের মানুষের জন্য কাজ করেছেন, আলিপুরদুয়ারকে জেলা করেছেন....দীর্ঘদিন মাদারিহাটে আমরা জিততে পারিনি। এই প্রথমবার সকলে মিলে তৃণমূল যেভাবে ফাইট দিয়েছে, তারউ প্রতিফলন ঘটেছে। এর গোটা কৃতিত্বই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ২০১৬ সাল থেকে বলে আসছিলাম আমরা যে বিজেপি চা বাগানের জব্য কিছু করবে না। সেটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। বার বার মনোজ টিগ্গা জেতার পরও মাদারিহাটকে উপেক্ষা করেছেন। নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন নয়টি চা বাগান কেন্দ্রীয় সরকার অধিগ্রহণ করবেন। সেটাও হয়নি। মানুষ বুঝতে পেরেছেন, দিদি মানুষের জন্য করেন, মোদি করেন না।"
মাদারিহাটে তৃণমূলের এই জয়ের নেপথ্যে বিজেপি-র বিক্ষুব্ধ নেতা জন বার্লার ভূমিকাও তুলে ধরছেন কেউ কেউ। সরাসরি সেকথা স্বীকার না করলেও তৃণমূলের দাবি, জন বার্লা বিক্ষুব্ধ ছিলেন। নিজেই বলেছেন, বিজেপি, মনোজ টিগ্গা কিছু করেননি। বিজেপি-র চেহারা প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। মমতা যেভাবে উত্তরবঙ্গে সময় দিয়েছেন, তারই প্রতিফলন ঘটেছে বলে মত তৃণমূলের। লোকসভা নির্বাচনে মানুষকে ভুল বোঝানো না হলে, সেবারও তৃণমূলই মাদারিহাটে জিতত বলে মত তৃণমূল নেতৃত্বের। অন্য দিকে, বার্লার মতে, অহঙ্কারই ডুবিয়েছে বিজেপি-কে।