কলকাতা: পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (partha chatterjee) পর অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। পর পর দুই হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা গ্রেফতার। কী বলল তৃণমূল (TMC)? সাংবাদিক বৈঠকে (press conference) চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের (Chandrima Bhattacharya) স্পষ্ট বার্তা, 'আমাদের দল থেকে পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছে, কোনও অনৈতিক বা দুর্নীতিযুক্ত কাজ কখনওই সমর্থন করি না। এ নিয়ে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি স্পষ্ট করে দিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলনেত্রী পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, মানুষকে ঠকিয়ে কেউ যদি কিছু করে থাকেন তাঁকে দল সমর্থন করে না।' কিন্তু একই সঙ্গে তদন্তে নিরপেক্ষতা দাবি করে তৃণমূল, জানান চন্দ্রিমা।


কী বললেন?
তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা ও প্রাক্তন বিধায়ক সমীর চক্রবর্তীকে পাশে নিয়ে এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন,'১৯৯৮ সালে মানুষের সমর্থন নিয়ে এই দল তৈরি হয়েছিল। আর মানুষের সমর্থন নিয়েই আমাদের নেত্রী তিন বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তাই অর্থ নয়, মানুষই সবচেয়ে বড় সম্পদ।' দুর্নীতির প্রশ্নে তৃণমূল যে কোনও আপস করবে না, সে কথাও ফের মনে করিয়ে দেন তিনি। কিন্তু এর পরই সুর চড়ান কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে। চন্দ্রিমার কথায়,'আমাদের একেবারে সর্বোচ্চ নেতৃত্বও বলেছেন-- ইডি, সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি নিরপেক্ষ চেহারা হারাচ্ছে। আমরা আশা করি সকলের সঙ্গে সমান ব্যবহার করা হবে।' তাঁর মতে, কেন্দ্রের শাসকদলের লোক নন এমন কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে উঠে পড়ে লাগা হবে। অথচ শাসকদলের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও তাঁদের ডাকা হবে না। এই মনোভাব কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির নিরপেক্ষতা নষ্ট করছে। উদাহরণ হিসেবে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার উদাহরণ দেন চন্দ্রিমা। বলেন,' উনি কংগ্রেসে থাকাকালীন তদন্ত শুরু হয়েছিল। বিজেপিতে আসতেই থেমে গেল। বিজেপি শাসিত রাজ্যে কোনও অপরাধ হলে কেন্দ্রীয় সংস্থা যায় না। কিন্তু অন্য জায়গায় ছোট-বড় কোনও অভিযোগ এলেই চলে আসে।' প্রাক্তন সতীর্থ ও বর্তমানে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রসঙ্গও তুলেছেন এই তৃণমূল বিধায়ক। অভিযোগ, সারদা-কর্তা জানিয়েছিলেন গ্রেফতার হওয়ার আগের দিনও টাকার লেনদেন হয়েছে। কিন্তু তাঁকে একটা জিজ্ঞাসা নেই, ডাকাডাকিও নেই। আসে হালে কাঁথি পুরসভা থেকে উধাও হয়ে যাওয়া কাগজপত্রের প্রসঙ্গও। ওই ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল শুভেন্দু অধিকারীর ভাই সৌমেন্দু অধিকারীর। তাঁকে কেন তলব করা হল না, প্রশ্ন তৃণমূলের। চন্দ্রিমার মতে, 'এই ভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো থাকে না।' তবে একই সঙ্গে তাঁরা যে বিচারবিভাগের উপর আস্থা রাখছেন সে কথাও জানান তৃণমূল বিধায়ক।    


মদন যা বললেন...
তৃণমূল কী অবস্থান নিতে পারে তার মোটামুটি ইঙ্গিত মিলেছিল মদন মিত্রর বক্তব্যেই। কামারহাটির বিধায়ক এবিপি আনন্দকে বলেন, 'দলের সুপ্রিমো ও সেকেন্ড ইন-কমান্ড বলেছিলেন, কোনও দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না। গরু অনেক বড় ব্য়াপার। ওটা কাঁধে তুলে নাকি অন্য কোনও ভাবে পাচার করে, তা নিয়ে আমার কোনও ধারণা নেই। তবে আমাকে সিবিআই, ইডি যত বার ডেকেছে, সাড়া দিয়েছি।' এর পরই সংযোজন, 'দল কিন্তু কখনও কাউকে বলেনি যেও না। যদি দল কাউকে যেতে বারণ করত, তা হলে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে একটা রিপোর্ট সহজেই বের করে দেওয়া যেত যে অনুব্রত মণ্ডল এত অসুস্থ, যেতে পারবেন না। কিন্তু এসএসকেএম তাঁকে স্থিতিশীল বলেছে, পার্থকে স্থিতিশীল বলেছে।' সে না হয় দলের কথা। কিন্তু বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতিকে বার বার তলব করা সত্ত্বেও গেলেন না কেন? প্রশ্ন করা হলে অবশ্য মদনের উত্তর, 'সেটা উনি বলতে পারবেন।' সঙ্গে সংযোজন, 'আমাকে বলা হয়েছিল উনি সুস্থ নন। সংবাদপত্রেও তাই দেখলাম। এখনও গ্রেফতার করা হয়েছে ওঁকে। দেখা যাক।' তার পরই সাংবাদিক বৈঠক চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের। 
কিন্তু অনুব্রতকে দলের যাবতীয় পদ থেকে ছেঁটে ফেলা হবে কি? সে ব্য়াপারে অবশ্য এখনও ধোঁয়াশাই ধরে রেখেছে দল। বিধায়ক বলেন, 'যথাসময়ে সব জানতে পারবেন।' সব মিলিয়ে তৃণমূলের কেষ্টর পরিণতি জানতে এখনও কিছুটা সময়ের অপেক্ষা। 


আরও পড়ুন:গরুপাচার মামলায় CBI-এর হাতে গ্রেফতার অনুব্রত মণ্ডল