পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া : ফের শিক্ষাঙ্গনে তৃণমূল নেতার 'দাদাগিরি'। অধ্যাপককে 'শাসানি' তৃণমূল ব্লক সভাপতির! মালদার হবিবপুুর, নদিয়ার পলাশিপাড়ার পর এবার বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়। কলেজের পরিচালন সমিতির বৈঠকে দুই অধ্যাপককে শাসানোর অভিযোগ। অধ্যাপকদের শাসানোর অভিযোগ তৃণমূলের ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে। ২৬ মার্চের ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল। ৩ এপ্রিল ইমেল মারফত বেলিয়াতোড় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন দুই অধ্যাপক। দুই অধ্যাপককে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। অধ্যাপকদের দাবি, বেলিয়াতোড় থানা প্রথমে অভিযোগ নিতে চায়নি। এরপর পুলিশ সুপারের কাছে জানালে নড়েচড়ে বসে পুলিশ।
এই দুই অধ্যাপকের মধ্যে একজন বাঁকুড়ার বেলিয়েতোড়ের যামিনী রায় কলেজের অধ্যাপক লক্ষ্মীনারায়ণ যাদব। তাঁর অভিযোগ, ভাইরাল ওই ভিডিওতে তাঁকে এবং আরেক অধ্যাপককে উদ্দেশ্য করা বলা হয়েছে স্থানীয় মাতালদের দিয়ে খুন করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক জানিয়েছেন, তিনি এবং আরেক অধ্যাপক এখানে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন। ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোই তাঁদের লক্ষ্য। আর তাঁদেরকেই এভাবে হুমকি দেওয়ার স্বভাবতই আতঙ্কে রয়েছেন তাঁরা। তাঁদের পরিবারের লোকজনও আতঙ্কে রয়েছে। কালী মুখার্জি এবং জয়ন্ত দাস - স্থানীয় শাসকদলের দুই নেতা এই দুই অধ্যাপককে খুনের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন অধ্যাপক যাদব। তাঁর আরও অভিযোগ, প্রথমে তাঁদের লিখিত অভিযোগ পুলিশ নেয়নি। বরং যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁদের থেকেই একপ্রকার অনুমতি নিয়ে এসেছে পুলিশ। এরপর এসপি অফিস এবং আদালতের দ্বারস্থ হওয়ায় পুলিশ এফআইআর দায়ের করে।
কালিদাস মুখোপাধ্যায়, ব্লক সভাপতি বড়জোড়া জানিয়েছেন, 'এই ঘটনা প্রায় ৪ মাস পুরনো। কথাবার্তা হচ্ছিল। এরকম কোনও ঘটনা ঘটেনি। অধ্যাপকের সঙ্গে অনেক ছাত্রছাত্রী ছিল। যাঁরা ভিডিও ভাইরাল করেছে তাঁদের থেকে শেখার কিছু নেই। সিপিএম পার্টি এখন ভাবছে শূন্য থেকে কোনওভাবে প্লাস যদি কিছু করতে পারে। কোথাও প্রমাণ হয়েছে আমরা হুমকি দিচ্ছি? কথাবার্তা হচ্ছিল। তৃণমূল কংগ্রেস অনেক সহনশীল দল। আমরা কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করি না। অধ্যাপকের সঙ্গে তো কথাই নেই।'
পলাশিপাড়ার স্কুলে পঞ্চায়েত প্রধানের 'দাদাগিরি'! শিক্ষকদের সঙ্গে অভব্য আচরণের অভিযোগ পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে। শিক্ষকদের সঙ্গে তৃণমূল নেতার অভব্য আচরণের ভিডিও ভাইরাল। গতকাল তেহট্ট ঘাট-দেবগ্রাম রাজ্য সড়ক অবরোধ-বিক্ষোভ পড়ুয়াদের। তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে পলাশিপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের। 'শিক্ষক-শিক্ষিকারা অসম্মানিত বোধ করেছেন', এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে, প্রতিক্রিয়া প্রধান শিক্ষকের। ঘটনার পর পলাতক তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান।
এর আগে মালদার হবিবপুরের বুলবুলচণ্ডী আর এন রায় বিদ্যানিকেতনেও একই ঘটনা ঘটে। শিক্ষিকাকে ছুটি না দেওয়া ঘিরে, স্কুলে ঢুকে প্রধান শিক্ষিকাকে রীতিমতো শাসান তৃণমূল নেতা তথা ওই স্কুলেরই পরিচালন সমিতির সভাপতি সুবোধ রায়। যদিও দাদাগিরির অভিযোগ উড়িয়ে শাসক নেতার পাল্টা দাবি, মিড ডে মিল দুর্নীতিতে জড়িত প্রধান শিক্ষিকা। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় বিডিও-কে নালিশ করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা।মালদার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই পলাশিপাড়ার স্কুলে প্রায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। তারপর আবার বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ের স্কুলেও দেখা গিয়েছে একই ধরনের চিত্র।