কলকাতা: বারবারই অন্তদ্বন্দ্বের খবর প্রকাশ্যে আসছে। কখনও শাসকদলে প্রবীণ বনাম নবীন। আবার কখনও সেই ছায়া ফিরছে গেরুয়াশিবিরে। যদিও এটা খুব নতুন নয়। মেদিনীপুরে হোর্ডিং বিতর্কে দিলীপ-হিরণের ইস্যু এখনও টাটকা। তবে শুধু জেলাতেই নয়, রাজনীতির অলিতেগলিতেও এই ছবি ফিরেছে বারেবারে। বামেদের সময়ও এছবি কারও চোখ এড়ায়নি। এত গেল গোষ্ঠীকোন্দল ইস্যু। তবে এবার মুদ্রার অপরপিঠে, বিরোধী দলনেতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ তৃণমূলের কুণালের।
একসময় 'বার্ণল নিয়ে বসুন' থেকে শুরু করে, 'নানা ছুঁয়ো ছুঁয়ো না' বলে কটাক্ষ করা কুণালের মুখ থেকেই, এবার শোনা গেল শুভেন্দুর প্রশংসা। এদিকে সেই সাথেই তিনি নাম্বার কমালেন সুকান্তর। 'বিজেপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সুকান্ত মজুমদার নবজাতক। শুভেন্দু অধিকারী সাংগঠনিক কাজ ও প্রশাসনিক দিক থেকে অনেক বেশি অভিজ্ঞ। শুভেন্দু অধিকারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্কুলের ছাত্র। বিজেপির রাজনীতিতে সুকান্ত ৪০-৫০ পেলে শুভেন্দু ৭০-৮০ পাওয়ার যোগ্য'। বিজেপিতে শুভেন্দু বনাম সুকান্ত সংঘাত জল্পনার মধ্যেই শুভেন্দুকে সার্টিফিকেট তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের।
রাজ্য় বিজেপিতে কি বাড়ছে সুকান্ত-শুভেন্দুর দূরত্ব? দলের বিশেষ সাংগঠনিক কর্মশালায় গরহাজির ছিলেন শুভেন্দু । শুভেন্দুর গরহাজিরা নিয়ে সদ্য কটাক্ষ শোনা গিয়েছিল সুকান্ত মজুমদারের মুখে। গত পরশুই সুকান্ত বলেছিলেন, 'শুভেন্দু ব্যস্ততম নেতা, কোনও সাংগঠনিক বৈঠকেই থাকেন না। দীর্ঘ বৈঠকে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না শুভেন্দু, উনি ব্যস্ত।' আর ৪৮ ঘণ্টা পেরোতেই সেই আগুনে পড়ল ঘি ?
মঙ্গলবার দলের বিশেষ সাংগঠনিক কর্মশালায় শুভেন্দু অধিকারীর অনুপস্থিতি ও তা নিয়ে সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্যে বাড়ল জল্পনা। মঙ্গলবার সল্টলেকের এক হোটেলে বিশেষ সাংগঠনিক কর্মশালার আয়োজন করেছিল বিজেপি। জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। ছিলেন সুনীল বনসল এবং অমিত মালব্য। রাজ্য় বিজেপির প্রথম সারির নেতাদের মধ্য়ে একমাত্র উপস্থিত ছিলেন না শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর অনুপস্থিতিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন সুকান্ত মজুমদার।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, 'কোনও সাংগঠনিক বৈঠকেই শুভেন্দু অধিকারী থাকেন না। উনি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না। কারণ বৈঠকগুলো লম্বা হয়। উনি ব্যস্ত।' সুকান্ত মজুমদারের পাল্টা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য়ের মধ্য়েও বিশেষ ইঙ্গিত লক্ষ্য় করা গেছে।বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'বিরোধী দলনেতা হিসেবে আমার কী কাজ আমি জানি। সংগঠনে আমার কোনও দায়িত্ব নেই। আজ সারাদিন মেদিনীপুরে ছিলাম। যিনি এসব বলছেন তিনি এটার ব্যাখ্য়া দিতে পারবেন।'
আরও পড়ুন, মুখে গোঁজা কাপড়, ফের শহরে হাড়হিম করা হত্যাকাণ্ড!
এদিকে, এদিনের বৈঠকে রাজ্যের সংখ্যালঘু এলাকায় দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযান এবং বুথ কমিটি গঠনের ব্যাপারে দলীয় সমস্যার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন অনেকেই। তখন রাজ্য় বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল বলেন, 'সেই সব এলাকাকে বাদ দিয়েই কাজ করুন। ওগুলো নিয়ে আর ভাবতে হবে না।' বনসলের বার্তা, '৮০ হাজার বুথের মধ্যে অন্তত ৫০ হাজার বুথে কমিটি তৈরি করতেই হবে। তবে, সদস্য সংখ্যায় যাতে কারচুপি না হয়', তা নিয়েও বার্তা দেন তিনি। সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে ঠিক হয়, আগামী ২৫ জানুয়ারির মধ্যে বুথ কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে হবে। ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সমস্ত মণ্ডল এবং ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সমস্ত জেলা কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে হবে।