কলকাতা : তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে ৩ প্রধানের কর্তা। যা নিয়ে এবার তৃণমূলেই ভিন্ন সুর সোনা গেল ! 'কেউ ক্রীড়া সংগঠক হলে, তাঁর হয়ে বললে, কী আছে...', বিজেপির কল্যাণ চৌবের প্রসঙ্গ টেনে সওয়াল ফিরহাদ হাকিমের। অন্যদিকে, অতীন ঘোষ বলছেন, 'যেহেতু দলমত নির্বিশেষে সকলে ক্লাবকে সমর্থন করেন, ভালবাসার জায়গাটা রাজনীতির ঊর্ধ্বে।'


মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, 'যদি কেউ ক্রীড়া সংগঠক হন, তাঁর হয়ে যদি খেলোয়াড় বা খেলার অনুগামীরা বলেন যে ভাল ক্রীড়া সংগঠক, এর মধ্যে কী আছে ? AIFA-র কল্যাণ চৌবে দাঁড়ালে কোনো অসুবিধা নেই, তাহলে তাঁকে তো আগে সাসপেন্ড করে দেওয়া উচিত AIFA থেকে।'


অন্যদিকে, তৃণমূল নেতা তথা ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেন, "তাঁরা ব্যক্তিগতভাবেই সমর্থন করেছেন। যেহেতু ফুটবল জগতের লোক, ফুটবল জগতে সহযোগিতা করেন, ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে অনেক সময় সহযোগিতা করতে হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা বলেছেন। কখনোই মোহনবাগান ক্লাবের সম্পাদক ক্লাবের পক্ষ থেকে সমর্থন করছেন, একথা বলতে পারেন না। বলেননি বলে মনে করি। যেহেতু দলমত নির্বিশেষে সকলে ক্লাবকে সমর্থন করেন, ভালবাসার জায়গাটা রাজনীতির ঊর্ধ্বে। সেখানে কখনোই ক্লাব থেকে সমর্থন হতে পারে না। "


তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, ক্লাব থেকে কি সমর্থন হতে পারে কোনো রাজনৈতিক দলকে ? তার উত্তরে অতীন বলেন, 'না।'


প্রসঙ্গ 


আর জি করকাণ্ডের প্রতিবাদে নজিরবিহীনভাবে এককাট্টা হয়েছিল ময়দানের তিনপ্রধানের সমর্থকরা। এবার নৈহাটির তৃণমূল প্রার্থীকে সমর্থন করতে গিয়ে একজোট হলেন, ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান-মহামেডানের কর্তারা! যা বাংলার ফুটবল ইতিহাসে নজিরবিহীন। নৈহাটি বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী সনৎ দে-র প্রচারে ভিডিও বার্তা দিলেন তিন প্রধানের তিন অন্যতম শীর্ষকর্তা। আর সেই বার্তা, সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করল তৃণমূল। ময়দানের তিনপ্রধানের পাশাপাশি, শাসক দলের প্রার্থীর পক্ষে বার্তা দিয়েছেন রাজ্য় ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা IFA-র প্রধানও!


শতবর্ষেরও প্রাচীন ঐতিহ্য়বাদী বাংলার ফুটবলের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। ভোটের রাজনীতিতে প্রথম সরাসরি নেমে পড়ল ময়দানের তিন ক্লাব ! বিধানসভা উপ নির্বাচনের আগে নৈহাটির তৃণমূল প্রার্থী সনৎ দে-কে ভূয়সী প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ও মহামেডানের শীর্ষ কর্তারা। নৈহাটির তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে বার্তা দিল রাজ্য ফুটবলের নিয়ামক সংস্থাও। 


১৩ তারিখ বিধানসভা উপ নির্বাচন। তার আগে দলীয় প্রার্থীর হয়ে ৩ ফুটবল প্রধানের কর্তাদের বক্তব্য এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করল তৃণমূল। 


ইস্টবেঙ্গল-এর কার্যকরী কমিটির সদস্য দেবব্রত সরকার বলেন, সনৎ দে একজন দক্ষ সংগঠক। আমরা যখন যেভাবে ওঁর কাছ থেকে মাঠ সংক্রান্ত বিষয়ে সাহায্য় চেয়েছি, অনুশীলন, কিংবা ম্য়াচের বিষয়, সব সময় সহযোগিতা করেছেন।


মোহনবাগানের সচিব দেবাশিস দত্ত বলেন,  'আমরা যতবার মোহনবাগান নৈহাটিতে খেলতে গেছি, নৈহাটি স্টেডিয়ামে ওঁর প্রচন্ড রকম সাহায্য় পেয়েছি এবং উনি একজন দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক। যেভাবে উনি নৈহাটি স্টেডিয়ামটাকে রক্ষণাবেক্ষণ করেন, সেটা দেখার মতো। '


ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান-মহামেডানের তাঁবুতে একাধিকবার দেখা গেছে মুখ্য়মন্ত্রীকে। মুখ্য়মন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসাও শোনা গেছে তিন প্রধানের গলায়। কিন্তু, তাই বলে ভোটের মুখে তৃণমূল প্রার্থীর এমন প্রশংসা তিন প্রধানের শীর্ষ কর্তাদের মুখে! 


মহমেডান ক্লাবের কার্যকরী সভাপতি কামারুদ্দিন বলেন, 'সনৎ দে নিজেই পুরো আয়োজন করে দিয়েছিলেন। এটা একটা অনেক বড় ব্য়াপার আছে। যে একটা লোক আমরা এত দূর থেকে ওখানে গেছি, স্টেডিয়ামের ভিতরে কতরকম সহযোগিতা চেয়েছি, কতরকম সাহায্য় চেয়েছি, সব সময় দাঁড়িয়েছিল।'


বাংলা হোক বা দিল্লি, ক্রীড়া প্রশাসনে রাজনীতিবিদ কিংবা তাঁদের ভাই-ছেলেদের ঢোকা নতুন কিছু নয়। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও যেমন জড়িয়ে পড়েছিলেন সিএবি নির্বাচনে। জগমোহন ডালমিয়াকে হারাতে প্রকাশ্যেই কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের পক্ষ নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এভাবে ভোটের মুখে প্রার্থীর হয়ে ক্লাব কর্তাদের কার্যত প্রচার কি আগে কখনও হয়েছে! তিন ক্লাবের কর্তাদের এই পদক্ষেপ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী মনসুখ মান্ডব্যকে চিঠি লিখেছেন শুভেন্দু অধিকারী। 


এনিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, যাঁর সঙ্গে ময়দানের সম্পর্ক আছে, খেলার সম্পর্ক আছে, তাঁর জন্য যদি তিন প্রধান কোনো একটা সিদ্ধান্ত নেন, তার সঙ্গে অন্য জিনিস মেলানোর কী কারণ আছে ? ময়দানের সঙ্গে যোগাযোগ আছে বলেই তো তাঁরা তাঁর স্বপক্ষে-সমর্থনে প্রচার করবেন। ফলে, এটা নিয়ে অন্য বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই।