ঘাটাল: শিশুমেলাকে কেন্দ্র করে ঘাটালে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ। হাতাহাতি, মারামারি থেকে রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটে গেল। সেই নিয়ে এবার তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে শাস্তির মুখে ঘাটালের প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর দলুই। তারকা সাংসদ দেবের উপস্থিতিতে আজ দুই পক্ষের অনুগামীদের মধ্যে যে সংঘর্ষ ঘটে, তা নিয়ে রিপোর্ট চেয়ে পাঠালেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি আশিস হুদাইত ও জেলার মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার কাছে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পর দল ব্যবস্থা নেবে। যে বা যাঁরা আজকের ঘটনার জন্য দায়ী, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে বার্তাও দেওয়া হয়েছে। (Ghatal News)
সংবাদমাধ্যমে আজ মানস বলেন, "আমরা দলীয় স্তরে খোঁজখবর নিচ্ছি। আশিসবাবুকে বলা হয়েছে, বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করুন। পুলিশ-প্রশাসনকে শান্তি বজায় রাখতে বলা হয়েছে। যদি কেউ কথা না শোনেন, অনুচিত কাজ করার জন্য এগিয়ে আসেন। পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।"
ঘাটালে দেব বনাম শঙ্করের এই সংঘাত নতুন ঘটনা নয়। কিন্তু রবিবার সেই সংঘাত চরমে ওঠে। শিশুমেলার আয়োজনকে ঘিরে ধুন্ধুমার বাধে। গতবছর পর্যন্ত যে শিশুমেলায় যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন দেব ও শঙ্কর, এবার একতরফা বৈঠক করে দেবকে মেলা কমিটি থেকে শঙ্কর বাদ দেন বলে অভিযোগ। এর পাল্টা রবিবার মেলার নয়া কমিটি নিয়ে বৈঠক ডাকেন দেব। কিন্তু অরবিন্দ স্টেডিয়ামে তিনি ঢুকতেই উত্তেজনা ছড়ায়। হাতাহাতি, মারামারিতে রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেন দেব এবং শঙ্করের অনুগামীরা। দুই পক্ষকে থামাতে গেলেও বিফল হন দেব। (Dev in Ghatal)
এই ঘটনায় শঙ্করের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিতে চলেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতেে বলা হয়েছে পুলিশকে। গোটা ঘটনায় রিপোর্ট তলব করা হয়েছে জেলা নেতৃত্বের কাছ থেকে। এদিনের ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি দেব। তবে তৃণমূলের স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, শিশুমেলার রাশ কার হাতে থাকবে, সেই নিয়েই নতুন করে সংঘাত শুরু হয়েছে। নতুন ভাবে মেলা সাজাতে চেয়েছিলেন দেব। কিন্তু তার আগেই দেবকে না জানিয়ে একতরফা বৈঠক করে নেন শঙ্কর। মেলার কমিটি থেকে বাদ দেন দেব, সরকারি অধিকারিকদের। এদিন দেব মেলা নিয়ে বৈঠক করতে গেলে শঙ্করের অনুগামীরা এসে গন্ডগোল পাকান বলে দাবি স্থানীয় তৃণমূলের একাংশের।
দেব এবং শঙ্করের মধ্যে বরাবরই সংঘাত বলে খবর। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে দেব যখন প্রার্থী হওয়া নিয়ে বেঁকে বসেন, সেই সময়ও নেপথ্য় কারণ শঙ্কর ছিলেন বলে খবর উঠে আসে। সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মধ্যস্থতা করে দেবকে প্রার্থী হতে রাজি করান। এমনকি ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়েও দেওয়া হয় শঙ্করকে। সেই সময় কালীঘাটের বৈঠকেও দেবের পক্ষ নেন মমতা। জানিয়ে দেন, দেব শিল্পী। ভাল ছেলে। ভাল কাজ করছেন। তাঁকে যেন কেউ বিরক্ত না করেন। নাম না করে মমতা শঙ্করকেই ওই বার্তা দেন বলে সেই সময় মনে করা হয়। কিন্তু তার পরও যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি, তা বোঝা গেল রবিবারের ঘটনাতেই।