সমীরণ পাল ও সুদীপ্ত আচার্য, কলকাতা : হিংসাবিহীন পঞ্চায়েত নির্বাচনের (Panchayat Election) ডাক দিল তৃণমূল নেতৃত্ব। কামারহাটিতে (Kamarhati) তৃণমূলের (TMC) মিলন উৎসবে নেতাদের বক্তব্যে ঘুরে ফিরে এল দুর্নীতির প্রসঙ্গও। এ’নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা।
তৃণমূলের ৪ বিধায়ক, এক সাংসদ ! একমঞ্চে দাঁড়িয়ে তাঁরা পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে দলীয় কর্মীদের বার্তা দিলেন। আহ্বান জানালেন হিংসাবিহীন পঞ্চায়েত নির্বাচনের। প্রত্যেকের বক্তব্যে ঘুরে ফিরে এল দুর্নীতির প্রসঙ্গও। খড়দার তৃণমূল বিধায়ক ও পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, পেশি শক্তি দেখিয়ে, গুলি খেলে, রিভলভার দেখিয়ে...এসব বলছি না। আমাদের সমস্ত শ্রম দিয়ে, রাজনীতিকে আঁকড়ে ধরে, আমরা নিশ্চয়ই পঞ্চায়েত ভোটে আবার জয়লাভ করব।
পঞ্চায়েত ভোট যত এগিয়ে আসছে নেতাদের গরমা-গরম কথায় তেতে উঠছে রাজনীতির ময়দান। লাঠি থেকে বাঁশ, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, দাড়ি-গোঁফ উপড়ে নেওয়া থেকে হাত খসিয়ে নেওয়ার হুমকি - কিছুই বাদ যাচ্ছে না ! এই পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ পঞ্চায়েত ভোটের আহ্বান শোনা গেল তৃণমূল নেতাদের গলায় ! কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র বললেন, একটাই অনুরোধ, ওই মেরে পঞ্চায়েত নিয়ে নেব, এই চিন্তা থেকে সরে যাবেন। মেরে পঞ্চায়েত নিতে চাই না। নেতার অন্যায় হলে, নেতাকেও বলতে হবে। কিন্তু, দয়া করে এমন কিছু করবেন না, আমার পাপের জন্য তৃণমূলের কোনও ক্ষতি হয়।
স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূলের মন্ত্রী-বিধায়করা। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবীর ফ্ল্যাট থেকে টাকা ও গয়নার পাহাড় উদ্ধার হয়েছে। জেলে রয়েছেন শিক্ষা দফতরের হুজ-হু’রা ! যা নিয়ে বারবার তৃণমূলকে নিশানা করছেন বিরোধীরা। কামারহাটিতে তৃণমূলের মিলন উৎসবের মঞ্চে তা নিয়েও মুখ খোলেন তৃণমূলের মন্ত্রী-বিধায়করা। বরানগরের তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় বলেন, এখানে আমরা যাঁরা উপস্থিত আছি শপথ নিন, কোনও অন্যায় করব না এবং কোনও অন্যায় কাউকে করতে দেব না। দল এবং দিদিমণির অস্বস্তির কারণ হব না। এটা পারি না ? পারি, করি না।
সৌগত রায় বলেন, বোধ হয় এখন একটা সময় এসেছে যে আমরাও দলের মধ্যে ঝাড়াই-বাছাই করি। যাঁরা আর্থিক সুবিধার কারণে দলে এসেছিলেন, তাঁদের বোধহয় দল থেকে সরে যাওয়ার সময় এসেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮’র পঞ্চায়েত ভোটে ৩৪ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু, সেবার রাজ্য জুড়ে ব্যাপক সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। তৃণমূল নেতাদের একাংশের মতে, তার ফল ভুগতে হয়েছিল ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে ! এই অবস্থায়, আরও একটি পঞ্চায়েত ভোটের আগে শান্তির বার্তা শাসক নেতাদের গলায়। কিন্তু সেই বার্তা কি পৌঁছবে নীচুতলা পর্যন্ত ? উত্তর দেবে ভবিষ্যৎ।