কলকাতা: 'এটা তো একটা অ্যাজেন্ডা', সন্দেশখালির (Sandeshkhali ED Raid) ঘটনার পর রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে বঙ্গ বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বললেন নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা (TMC Minister Shashi Panja)। শুক্রবার সকাল থেকে সন্দেশখালির ঘটনায় তপ্ত বঙ্গ-রাজনীতি। অভিযোগ, এদিন রেশন দুর্নীতির তদন্তে গিয়ে আক্রমণের মুখে পড়েন ইডি আধিকারিকরা, মার খান কেন্দ্রীয় জওয়ান। বাদ যাননি সাংবাদিকরাও। ঘটনার প্রেক্ষিতে সুকান্ত বলেন, 'রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির মতো পরিস্থিতি, অমিত শাহকে চিঠি দিয়েছি। তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানকে শায়েস্তা করে ছাড়ব।'


আর কী বললেন?
রাজ্যের মন্ত্রীর পাল্টা যুক্তি, 'বাংলাকে ধমকে-চমকে লাভ নেই।' একুশের বিধানসভা ভোটের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি আরও বললেন, 'সেন্ট্রাল ফোর্স আসবে, নির্বাচন সে ভাবে হবে। তাই তো হয়েছিল। ২০২১ সালে তাই হয়েছিল।' তবে তাতে ফলাফল কী দাঁড়ায়, বাংলার মানুষ কোন দিকে রায় দিয়েছিলেন সেটাও মনে করিয়ে দেন তিনি। এই দিনের ঘটনা নিয়ে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গেও কড়া সুর শোনা যায় মন্ত্রীর গলায়। বলেন, 'মহামান্য রাজ্যপাল কী ভাবে পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গে বানানা রিপাবলিকের অনুষঙ্গ টানলেন কী করে? মণিপুরে ত্রিপুরায় যখন ঘটনা ঘটে, যেখানে বিজেপি এত হিংসা ছড়িয়েছিল, তখন পড়শি রাজ্যের মহামান্য রাজ্যপালদেরও পরামর্শ দিয়েছিলেন তো?' 
বৃহস্পতিবার সকালে পর পর যা যা ঘটেছে, তার প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারকে নিজের কর্তব্য পালনের কথা মনে করান রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। সঙ্গে এও জানান, এই পরিস্থিতিতে সংবিধানসম্মত উপায়ে তাঁর পক্ষে যা যা করণীয়, করার চেষ্টা করবেন। পাশাপাশি, বিরোধী শিবির থেকেও সমালোচনার তীক্ষ্ণ তির ধেয়ে এসেছে। 


কী ঘটেছিল?
এদিন সকালে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, শেখ শাহজাহনের বাড়িতে গিয়ে বারবার ডাকাডাকি সত্ত্বে সাড়া মেলেনি কারও। ১ ঘণ্টা অপেক্ষার পর কেন্দ্রীয় বাহিনী তালা ভাঙার চেষ্টা করতেই তৈরি হয় বিপত্তি। সকাল ৮টা ১০ নাগাদ নাগাদ শয়ে শয়ে শাহজাহানের অনুগামী বাড়ির সামনে জড়ো হয়। অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর ওপর চড়াও হয় তারা। এরপর মারতে মারতে এলাকাছাড়া করা হয় ইডি আধিকারিক, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের। খবর করতে গেলে এবিপি আনন্দর চিত্র সাংবাদিককে বেধড়ক মারধর করা হয়, ভাঙচুর করা হয় ক্যামেরা। কেড়ে নেওয়া হয় লাইভ সম্প্রচারের সরঞ্জাম। অন্যদিকে, ওই সময় ইডি-কেন্দ্রীয় বাহিনীর গাড়ি ভাঙচুর করতে থাকে দুষ্কৃতীরা। ভাঙচুর করা হয় চারটি সংবাদমাধ্যমের গাড়িও। প্রাণভয়ে এবিপি আনন্দর গাড়িতে চড়ে বসেন ৪ ইডি আধিকারিক। পালিয়ে যান কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। কোনও ক্রমে ধামাখালি জেটি ঘাটে পৌঁছে তাঁরা বোঝেন, ফেরার পথ নেই। তখন দাঁড়িয়ে থাকা সন্দেশখালি থানার একটি পুলিশের ভ্যানের কাছে সাহায্য চান তাঁরা। সন্দেশখালি থানার ওসির সঙ্গে কথা বলেন ইডি আধিকারিকরা। ১০ টা নাগাদ পুলিশের লঞ্চে চেপে পৌঁছন সন্দেশখালি থানায়। সকাল ১১টা নাগাদ রামপুরের মোড়ে একটি ইটভাটার কাছে ফের আটকানো হয় এবিপি আনন্দর গাড়ি। মারধর করা হয় গাড়ির চালককে। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় গাড়ি। এবিপি আনন্দর সাংবাদিকের মোবাইল ফোন ছিনতাই করা হয় বলে অভিযোগ। পুরো পর্বটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই তুমুল আলোড়ন বঙ্গ রাজনীতিতে।


আরও পড়ুন:ঠান্ডা কমছে দুই মেদিনীপুরে? ফের শীত কবে ফিরবে?