সুদীপ চক্রবর্তী, দীপক ঘোষ ও অয়ন মণ্ডল, কলকাতা : দলের ব্লক সভাপতিকে নিয়ে তৃণমূল বিধায়কের চরম অসন্তোষ ! সরাসরি তৃণমূল নেত্রীকে নিশানা করলেন উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের (Islampur) বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরী (Abdul Karim Chowdhury)। দলের ব্লক সভাপতিকে 'সন্ত্রাসবাদী' বলেও আক্রমণ শানিয়েছেন প্রাক্তন গ্রন্থাগার মন্ত্রী। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।


কী বলছেন আব্দুল করিম চৌধুরী ?


প্রাক্তন মন্ত্রী ও তৃণমূল বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরী বলছেন, "আই অ্যাম দ্য ফাউন্ডার মেম্বার অফ দ্য পার্টি। আজকে আমাকে সরিয়ে দিচ্ছেন এভাবে ? আমার এলাকাটাকে আমার হাত থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছেন ? আমি বলেছিলাম, এই 'সন্ত্রাসবাদী'টাকে নেতা করবেন না মমতাদি। একটা 'সন্ত্রাসবাদী'কে এখানে রাখবেন না। আমি সন্ত্রাস করে ইলেকশন করি না।"


আরও পড়ুন ; ‘নতুন তৃণমূল’, দক্ষিণ কলকাতাজুড়ে অভিষেকের ছবি-সম্বলিত রহস্যময় হোর্ডিং ; শুরু জল্পনা


দুর্নীতির অভিযোগে জেলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নিজাম প্যালেসে অনুব্রত মণ্ডলকে দফায় দফায় জেরা করছে CBI! তৃণমূলের আরও হেভিওয়েটের গ্রেফতারির হুঁশিয়ারি দিচ্ছে বিজেপি। নতুন উদ্যোমে পথে নেমেছে সিপিএম ও কংগ্রেস। আর এই পরিস্থিতিতে এবার তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের অস্বস্তি চরমে তুললেন নিজেদের বিধায়ক। আব্দুল করিম চৌধুরীর বক্তব্য, "সব জায়গায় গিয়েছি আপনার সঙ্গে। আপনার জোর পার্টিটার মধ্যে, ওই রকম আমারও হক আছে। আমারও পার্টির ওপর ওই অধিকার। এই অধিকার আমারও আছে মমতাদি। যে রকম আপনি অধিকার রেখেছেন।"


বিস্ফোরক উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের তৃণমূল বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরী। কোনও রাখঢাক না করেই তিনি সরাসরি নিশানা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ! বললেন, "আজ পর্যন্ত জিতেছি ১১ বার। টাকা-পয়সা দিয়ে ভোট কিনিনি। আমি হিংসার মধ্যে যাইনি। বুথ ক্যাপচার করিনি। মমতা ব্যানার্জির কাছে এটাই অনুরোধ থাকবে, যে আমি এমএলএ, আর আমার বিরুদ্ধে লড়ার জন্য আলাদা লোক দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন, আমি এটা মানব না। যদি, আপনি বলবেন যে না, আপনি যদি মিথ্যা করেন...যে করিম দা আপনি রিজাইন দিন, আমি রিজাইন দিয়ে দেব।"


তৃণমূল বিধায়ক তৃণমূলেরই নেতাকে সন্ত্রাসবাদী বলছেন। আদতে আব্দুল করিম চৌধুরী যাঁকে নিশানা করেছেন, সেই জাকির হোসেন ইসলামপুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি। জেলা সভাপতি কানাইয়ালাল আগরওয়ালের অনুগামী বলে তিনি পরিচিত।


এপ্রসঙ্গে ইসলামপুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি জাকির হোসেন বলছেন, "বিগত দিনে দলের একজন নিষ্ঠাবান কর্মী হিসেবে কাজ করেছি। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি হিসেবে দলের কোনও বিধায়কের সমালোচনা করতে চাই না। যদি কোনও সাংবাদিক বৈঠকে ওরকম কিছু বলে থাকেন, সেটা দল দেখবে, দল বিচার করবে।"


এই ইস্যুতে সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "যদি একজন বিধায়ক সরাসরি তাঁর সভাপতির বিরুদ্ধে ছাপ্পাবাজির অভিযোগ আনেন এবং করানো হয়েছিল যখন বলা হচ্ছে, তখন ভোটে ছাপ্পা হয়েছে। তৃণমূলের জয়, ছাপ্পার জয়। ছাপ্পা ছাড়া তৃণমূল নেই। বিধায়কের কথায় এটাই পরিষ্কার হয়ে গেল।"


দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ তৃণমূলের কাছে এবার দলেরই বিধায়কের এই হুঁশিয়ারি নতুন চ্যালেঞ্জ।