কলকাতা: নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় কেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি রাখা হয়নি, সেই নিয়ে গত কয়েক দিনে কম বিতর্ক হয়নি। তৃণমূলের অন্দর থেকেই এবার সেই বিতর্ক আরও উস্কে দিলেন দলের দুই প্রবীণ নেতা, সাংসদ সৌগত রায় (Saugata Roy) এবং বিধায়ক মদন মিত্র (Madan Mitra)। শুধু মমতার ছবি থাকাই যথেষ্ট বলে যেখানে মন্তব্য করেছেন সৌগত, সেখানে মদনের দাবি, 'যাঁরা অভিষেককে খাটো করে দেখছেন, দলে বিষাক্ত আবহাওয়া তৈরি করছেন তাঁরা'। (Madan on Saugata)


সম্প্রতি, নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের মেগা কর্মসূচি ছিল শুধুই মমতাময়। মঞ্চে ছিল না দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও ছবি। সেই নিয়ে বিতর্ক শুরু হতে সময় লাগেনি। সেই আবহেই একদিন আগে মুখ খুলেছিলেন সৌগত। তাঁর বক্তব্য ছিল, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলনেত্রী। তাঁর ছবি রয়েছে, সেটাই শেষ কথা। অভিষেক নিশ্চয়ই যুব সমাজের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নেতা। বড় ভূমিকা পালন করে। কিন্তু তাঁর ছবি রাখতেই হবে, এমন কোনও কথা নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের ছবি ছিল, এটাই যথেষ্ট।"


সৌগতর এই মন্তব্য নিয়ে পাল্টা সরব হয়েছেন মদন। সোমবার এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হন তিনি। বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে ফারাক খুঁজে লাভ নেই। অনেকে মনে করছেন, মমতা মনোনয়ন দেবেন, তাতে অভিষেকের তেমন ভূমিকা থাকবে না। তাই শুধু মমতা-মমতা করছেন। কিন্তু বলে রাখি, অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ। এর আগেও অনেককে বলতে শুনেছি, মমতা কী জানেন, কী বলেন। রাতারাতি এখন সবাই যদি মমতা-মমতা করেন, তাহলে বুঝতে হবে কোনও অভিসন্ধি রয়েছে।"


আরও পড়ুন: Adhir on Justice Gangopadhyay: বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চান অধীর, বললেন, ‘সবার আগে ভোটের লাইনে দাঁড়াব আমি’


সেখানেই থামেননি মদন। তিনি আরও বলেন, "মমতাই অভিষেকেক সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে বলেছেন। মমতা-অভিষেকের মধ্যে ফারাক খোঁজার অর্থ দলের ক্ষতি করা। যাঁরা অভিষেককে খাটো করে দেখছেন, তাঁদের দলের মধ্যে বিষাক্ত বাতাবরণ তৈরি করছেন। রামায়ণে রামের কথা, মহাভারতে কৃষ্ণের কথা বললেই যেমন বাকিদের কথা বলতে লাগে না, তৃণমূলেও তেমনই মমতার কথা বলা মানেই সব। কিন্তু যুব সমাজে অভিষেক একটা স্পন্দন তৈরি করেছে অভিষেক। মিটিং-মিছিল-দৌড়াদৌড়ি করেছে। অভিষেকের এই গ্রহণযোগ্যতা কিন্তু মমতাই তৈরি করিয়েছেন। তাই ফাঁক খুঁজে লাভ নেই। "


মদন জানিয়েছেন, মুলায়ম সিংহ এবং অখিলেশ যাদবের মধ্যে ফাঁক খোঁজা যায়, লালুপ্রসাদ এবং তেজস্বী যাদবের মধ্যে ফাঁক খোঁজা যায়, কিন্তু মমতা এবং অভিষেকের মধ্যে ফাঁক খোঁজা বোকামি। সৌগতকে তীব্র আক্রমণ করে মদন বলেন, "এই সৌগত রায় শুভেন্দুকে তিন মাস সময় না দিলে, শুভেন্দু এত বড় কেউ নয় যে অম্বেডকর মূর্তির পাদদেশ গঙ্গাজলে ধুতে আসতেন। উনি কী করলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করালেন, অভিষেককে বললেন বাড়িতে যাচ্ছেন, পিকে চলে গেল। বলেছিলেন, 'কেউ একটা কথা বলবে না। তাহলে শুভেন্দু একটা কথা বললেই চলে যাবে'। এমন ভাবে বললেন, যেন শুভেন্দুই তৃণমূল দলটা তৈরি করেছেন। শুভেন্দু যে লক্ষ লক্ষ কর্মীর মধ্যে একজন, তা বুলে গিয়েছিলেন সৌগত। একটা দায়িত্ব দিয়েছিল দল। ছোট্ট শুভেন্দুকে উনি বড় করে পাঠিয়ে দিলেন।" দলের দুই প্রবীণ নেতার এমন প্রকাশ্য বাগযুদ্ধ ঘিরে সরগরম বঙ্গ রাজনীতি।