কলকাতা : একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ। এবার খোদ মদন মিত্র আক্রমণ করলেন IPAC-কে। আরও অস্বস্তিতে তৃণমূল। যদিও দলের কথা দলেই আলোচনা করা উচিত বলে জানালেন ফিরহাদ হাকিম। অন্যদিকে দলে ক্ষমতার রাশ নিয়েও ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন মদন মিত্র।


বিতর্কের সূত্রপাত কীভাবে ?


'তৃণমূলে ব্যাপক টাকার লেনদেন হচ্ছে। কেউ রাতারাতি একশো কোটি টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছেন!' দলের একাংশকে নিশানা করে বিস্ফোরক মন্তব্য় করেছেন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। দলীয় পদ পেতেও টাকার খেলা চলছে বলে অভিযোগ কামারহাটির বিধায়কের। পাশাপাশি, কল্য়াণ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের সুরেই মন্ত্রীদের একাংশকে আক্রমণ করেছেন মদন মিত্র।


'তৃণমূলে টাকা ছাড়া কোনও কাজ হয় না!' বিরোধীরা দীর্ঘদিন ধরে বারবার এই অভিযোগ করে আসছে। কিন্তু দিনকয়েক আগে খোদ মদন মিত্র যা বলেন, তা বিস্ফোরক! তিনি বলেন, "দলের মধ্যে একটা ব্যাপক টাকার লেনদেন হচ্ছে। আমি মদন মিত্র একটা MLA ছিলাম, আমার কোনও ক্ষমতাই ছিল না। রাতারাতি আমি এখন ১০০ কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছি। তা এখন আমার পদ চাই। তা আমি বললাম ভাই আমায় একটা মন্ত্রী করে দে। না ভাই, মন্ত্রী হতে গেলে, ভাল মন্ত্রী হতে গেলে ১০ কোটি লাগবে, আমি ১০ কোটি দিয়ে দিলাম। মন্ত্রী হল কী হল না পরের কথা। যদি হয়ে গেলাম তাহলে ১০ কোটি থেকে ২০ কোটি বানালাম, আর যদি না হলাম ১০ কোটি চলে গেল। এফআইআর করা যায় না। কারণ, এর মধ্যে এর কোনও ডকুমেন্টস নেই।"


তাঁর বক্তব্য, "শুধুই মন্ত্রী পদের জন্য়ই নয়, তৃণমূলে সাংগঠনিক পদের নেপথ্য়েও সেই টাকার খেলাই চলছে বলে অকপটে জানিয়েছেন মদন মিত্র। তাঁর বক্তব্য, একেবারে নীচের তলার পদ, ব্লকের পদ, সমিতির পদ, পঞ্চায়েতের পদ, জেলা পরিষদের পদ, জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ, জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের পদ, একেকটা সেল ধরুন, ডালহৌসি এলাকার অমুক সেল, তার প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য ১০ লাখ, উঠে যাচ্ছে তো। ভাল বিনিয়োগ তো।"


সম্প্রতি এবিপি আনন্দে তৃণমূলের মন্ত্রীদের একাংশের আচরণ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন কল্য়াণ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। তার থেকে বহু ধাপ এগিয়ে গেলেন মদন মিত্র। তৃণমূলের শীর্ষ মহলে ক্ষমতার রাশ নিয়ে টানাপোড়েনের জল্পনার মধ্য়েই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য় করেছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের দীর্ঘদিনের সঙ্গী মদন মিত্র। তৃণমূল বিধায়ক ও প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রীর বক্তব্য, "পার্টির লোকেরা বলছেন, বাইরের লোকেরা বলছেন । তুমি কি অভিষেকের? তুমি কি মমতার?অভিষেক অনেক বয়সে ছোট। দলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছে, মাঝে মাঝে ওর ট্যুইট দেখি। অসুস্থ ছিল, বিদেশেই ছিল অনেকদিন। রোডে নেবে কত খানি কি করতে পারবে! মাঝেমধ্যে ফোন করে বলেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিস থেকে বলছি, এটা করতে হবে। রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগড়ার প্রাণ যায়।"


যুব কংগ্রেসে থাকাকালীন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের সঙ্গী মদন মিত্র। সেই তিনিই তৃণমূলের অন্দরের গল্প যেভাবে বাইরে আনলেন তা রাজনৈতিক মহলে ঝড় তোলার জন্য় যথেষ্ট।


এদিন এবিপি আনন্দর প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাতের প্রথমেই কামারহাটির বিধায়ক স্পষ্ট করে দেন, "সবার আগে একটা কথা বলি, আমি যদি ৫ মিনিট বা ৪ মিনিট বক্তব্য রেখে থাকি, তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত কোথাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও নাম ছিল না। আমার সেই ঔদ্ধত্য নেই। অজান্তে, যদি কোনও কথা রূপক অর্থে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্পর্শ করে থাকে আমার ঔদ্ধত্য,  তার জন্য আমি ক্ষমা চাইছি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ-নামীদামি ছেলের কাছেও আমি শুনেছি, কেউ ২৫ লাখ, কেউ ৫০ লাখ টাকা দিয়েছেন। এই এজেন্সির ছেলেদের দিয়েছে।"


মদন মিত্র বলেন, "আমাদের পার্টিতে এসব কিছু ছিল না। টাকা-পয়সা, লেনদেন। এই একটা এজেন্সি আমাদের পার্টিতে ঢুকল। অনেকগুলো এজেন্সি। ভোটকুশলী সংস্থা তারা নাকি জিতিয়ে দেবে। কামারহাটিতে আমাকে শেখানো হচ্ছে, সকালে উঠে কীভাবে ব্রাশ করবে। তারপর ডানদিকে তাকাবে, না বাঁদিকে তাকাবে। এরা শুরু করল। বিভিন্ন জায়গা থেকে নাম সংগ্রহ করে। এরাই গোটাটা করেছে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অজান্তে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ-নামীদামি ছেলের কাছেও আমি শুনেছি, কেউ ২৫ লাখ, কেউ ৫০ লাখ দিয়েছেন। এই এজেন্সির ছেলেদের দিয়েছে। আইপ্যাকই হবে...আইপ্যাকই ছিল। তাঁরা কেউ নমিনেশন পাননি। লজ্জায় কাউকে বলতেও পারছেন না। এত বড় বড় নাম তাঁদের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উল্টে বলেছেন, যে টাকা দিচ্ছেন, যে কাটমানি নিচ্ছেন, যে কেনার চেষ্টা করছেন, তৃণমূলের শিরদাঁড়া বিক্রি হয় না। তৃণমূল টাকার কাছে বিক্রি হয় না। এ তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা।"