কমলকৃষ্ণ দে ও বিজেন্দ্র সিংহ, গাংপুর (পূর্ব বর্ধমান) : এক সেকেন্ডের জন্য গণতন্ত্রের চিন্তা থেকে সরে গেলে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির একটা পতাকাও লাগাতে পারবে না। পূর্ব বর্ধমানে তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে কার্যত হুমকি দিলেন বিধায়ক ও তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সহ-সভাপতি সোহম চক্রবর্তী। পুলিশকে সরিয়ে নিলে তৃণমূলকর্মীদের খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে পাল্টা হুঁশিয়ারির পথে হেঁটেছে বিজেপি।
কয়েক মাস পরেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে যে কোনও মুহূর্তে শুরু হয়ে যেতে পারে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন বা SIR-এর প্রক্রিয়া। তার আগে শাসক ও বিরোধী দলের সংঘাত চরমে উঠেছে। এই অবস্থায় বিজেপির উদ্দেশে কার্যত হুমকি দিয়ে নতুন বিতর্ক বাঁধালেন তৃণমূল যুবর রাজ্য সহ সভাপতি ও চণ্ডীপুরের বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী। বৃহস্পতিবার পূর্ব বর্ধমানের গাংপুরে জেলা তৃণমূল যুবর বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান ছিল। সেই মঞ্চ থেকেই হুমকি দেন তৃণমূল বিধায়ক ! সোহম চক্রবর্তী বলেন, "সবচেয়ে বড় যদি কেউ গণতন্ত্রের পূজারি হয়ে হয়ে থাকেন তাঁর নাম কী ? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আপনারা যে এত বড় বড় এসে কথা বলেন, বাংলাকে দখল করার, আমাদের নেত্রীকে, আমাদের নেতাকে আক্রমণ করেন ব্যক্তিগতভাবে, যদি আমরা এক ইঞ্চি, এক সেকেন্ডের জন্য গণতন্ত্রের চিন্তা থেকে সরে যাই, বলা দূরের কথা, মিটিং করা দূরের কথা, মিছিল করা দূরের কথা, একটা বিজেপির পতাকা আপনারা লাগাতে পারবেন এই বাংলায় ? পারবেন না।"
পাল্টা জবাব দিয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বলেন, "মিটিং, মিছিল, বিজেপিকে করতে গেলে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। বাকি আর কী আছে। বিজেপির একজন সাংসদের এত রক্ত ঝরল। পশ্চিমবঙ্গে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। সোহমবাবুর বোঝা উচিত ভারতবর্ষে সংবিধান আছে, ভারতবর্ষের সংবিধান দেশের মানুষকে ইচ্ছে মতো দল করার অধিকার দিয়েছে। সোহমবাবু বা সোহমবাবুর মালকিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃপা করে দেননি।"
গাংপুরের স্বস্তিপল্লি এলাকায় বৃহস্পতিবার বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করেছিল জেলা তৃণমূল যুবর নেতৃত্ব। এই এলাকার অন্তর্গত ৩টি বুথে ২০২১ সালের বিধানসভা ও ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে লিড রয়েছে বিজেপির। এই অবস্থায় বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিতাড়িত করা হবে বলেও এদিন হুঁশিয়ারি দেন তৃণমূল বিধায়ক। সোহম বলেন, "কাজেই গণতন্ত্র আছে বলেই আপনারা আসছেন, মিটিং করছেন, মিছিল করছেন, আমরা শুনছি...নিজের মনে মনে হাসছি এবং অপেক্ষা করছি, কবে নির্বাচন আসবে, আবার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আপনাদের বাংলা থেকে বিতাড়িত করব।" জবাবে পূর্ব বর্ধমান জেলা বিজেপির মুখপাত্র শান্তরূপ দে বলেন, "আপনাদের যে সি টিম আছে অর্থাৎ উর্দিধারী তৃণমূল কর্মী, ওরফে পুলিশ বাহিনী, তারা যদি না থাকে আপনাদের একটা তৃণমূল কর্মীকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না।"
গত বছরের মে মাসে নিউটাউনের রেস্তোরাঁ মালিককে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল সোহম চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় তাঁকে নিয়ে চরম বিতর্ক হয়। শেষপর্যন্ত ক্ষমা চাইতে হয় তৃণমূল বিধায়ককে। এবার বিজেপিকে হুমকি দিয়ে ফের বিতর্কে জড়ালেন তিনি।