মহেশতলা: সন্দেশখালির পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার লক্ষণ নেই এখনও পর্যন্ত। বরং সরকার এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আছড়ে পড়ছে। কিন্তু ৫২তম দিন পেরোতে চললেও এখও পর্যন্ত হদিশ নেই সন্দেশখালির 'বাঘ' শেখ শাহজাহানের। সেই নিয়েও শাসকদলের দিকে আঙুল উঠছে। এই আবহে সংবাদমাধ্যমে সন্দেশখালি নিয়ে মুখ খুললেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আদালত হাত বেঁধে রেখেছে বলেই শাহজাহানের নাগাল মিলছে না, দাবি করলেন তিনি। (Abhishek Banerjee)


রবিবার নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের মহেশতলায় সভা করেন অভিষেক। তার পর মুখোমুখি হন সংবাদমাধ্যমেরও। সেখানে তৃণমূলই শাহজাহানকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে বলে যে অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা, সেই নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হয়। জবাবে অভিষেক বলেন, "আশ্রয় দেওয়ার কথা বলছেন যাঁরা, তাঁদের কাছে হাতজোড় করে আবেদন...মানবাধিকার সংগঠনের হর্তাকর্তা হয়ে, বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি হয়ে, প্রচারের আলোয় থাকার জন্য যাঁরা রোজ গ্রেফতারির দাবি জানাচ্ছেন... তাঁদের বলব, এই দরবার, অনুরোধ হাইকোর্টে গিয়ে করুন।" (Sandeshkhali Case)


আদালতের জন্যই রাজ্য প্রশাসন সন্দেশখালি নিয়ে পদক্ষেপ করতে পারছে না বলেও দাবি করেন অভিষেক। তাঁর বক্তব্য, "হাইকোর্ট যদি রাজ্য প্রশাসনের হাত বেঁধে দেয়, গ্রেফতার হবে কী করে? ৫ জানুয়ারি যে ঘটনা ঘটে, ED আধিকারিকদের উপর হামলার অভিযোগ ওঠে। ED-ই বিষয়টি নিয়ে FIR দায়ের করে। সেই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের বেঞ্চ নির্দেশ দেয় যে, একটি SIT গঠিত হবে, তাতে রাজ্য পুলিশের এক কর্তা, CBI-এর এক কর্তা  থাকবেন। তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করবে সেই SIT. "


আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee: ‘আমরা যতদিন আছি, কেউ বাংলাকে ভাতে মারতে পারবে না’, বকেয়া নিয়ে কেন্দ্রকে নিশানা অভিষেকের


অভিষেকের জানিয়েছেন, এর ১০-১২ দিন পর ED-ই ওই FIR-এর উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে আবেদন জানায়। আদালত সেই স্থগিতাদেশ মঞ্জুর করে। অর্থাৎ তদন্ত হবে না, গ্রেফতার করা যাবে না কাউকে, নোটিস পাঠিয়ে ডাকাও যাবে না কাউকে। গত ২৬ তারিখ এই নির্দেশ দেয় আদালত। আদালতই যদি স্থগিতাদেশ দেয়, হাত বেঁধে দেয়, তাহলে শাহজাহানকে কী করে গ্রেফতার করা সম্ভব, প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। 


সন্দেশখালি প্রসঙ্গে এদিন আদালতের ভূমিকা নিয়েও সরব হন অভিষেক। তাঁর বক্তব্য, "আদালত ED-কে ১০-১২ বছর সময় দিচ্ছে। অথচ কিছুই  হচ্ছে না! কই তখন তো হাক বাঁধে না? সারদা মামলায় ২০১৪ সালের ৯ মে দেশের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছিলেন। ১০ বছর কেটে গিয়েছে, অথচ এখনও তদন্ত শুরু হয়নি। ED-CBI-কে এত সময় দেবেন, আর পুলিশকে দু'-পাঁচ দিন সময় দেবেন না? কেন এই বৈষম্য? রাজনীতিক বা জনপ্রতিনিধি হিসেবে নয়, ভারতের নাগরিক হিসেবে প্রশ্ন করতে চাই, কেন এই বৈষম্য আদালতের? ED-যে FIR করেছিল এবং রাজ্য পুলিশ যে FIR করেছিল, দু'টোর উপরই স্থগিতাদেশ দিয়েছে আদালত। যাঁরা গ্রেফতারি চাইছেন, তাঁদের বলব, হাইকোর্টে গিয়ে জানতে চান, কেন এই স্থগিতাদেশ। স্থগিতাদেশ দেওয়া হল, যাতে BJP ১৫ দিন ধরে ফুটেজ খেতে পারে।"


শাহজাহানকে আড়াল করার প্রশ্ন ওঠে না বলেও এদিন দাবি করেন অভিষেক। তাঁর দাবি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকদের যেখানে রেয়াত করেনি তাঁর দল, সেখানে শেখ শাহাজাহান কে এমন নেতা? BJP-কে আক্রমণ করতে গিয়ে বলেন, "মুরলিধর সেন স্ট্রিটের দফতর থেকে নারকাণ্ডের ভিডিও বের করে একদিন ওরাই শুভেন্দু অধিকারীকে চোর বলেছিল। আজ তাকেই দলে নিয়েছে। হিমন্তবিশ্ব শর্মার ক্ষেত্রেও একই কাজ করেছে। অর্থাৎ যত চোর, জোচ্চোর, ধাপ্পাবাজ রয়েছে, যা ইচ্ছে করতে পারে। BJP-তে গেলেই সব মাফ। এটাই মোদিজির গ্যারান্টি।" সন্দেশখালিতে শাহাজাহানকে গ্রেফতার না করতে পারা নিয়ে যাঁরা রাজ্য প্রশাসনকে দায়ী করছেন, তাঁদের উদ্দেশে অভিষেকের বার্তা, রাজ্য প্রশাসনের কাছে যে অভিযোগ হয়েছে, যে মহিলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বিবৃতি দিয়েছেন, তার নিরিখে উত্তম সর্দার, শিবু হাজরাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শাহজাহানের ক্ষেত্রে আদালত হাত বেঁধে দেওয়াতেই কিছু করতে পারছে না রাজ্য।


যারা গ্রেফতারি চাইছেন, মিডিয়াকে বলুন, হাইকোর্টে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন কেন স্থগিতাদেশ দিলেন যাতে ১৫ দিন ধরে ফুটেজ খেতে পারে বিজেপি। পুলিশকে সময় দি.য়েছেন! যারা গার্ড করছে বলছে, তৃণূল পার্থ, জ্যোতিপ্রিয়কে রেয়াত করেনি, কে শেখ শাহজাহান! যারা বড় ভাষণ দেন অন্য নেতারা, যে মুরলি ধর সেন লেন থেকে ফুটেজ বের করে শুভেন্দুকে চোর বলেছিল, তাকেই দলে নিয়েছে. হিমন্তকে চোর বলেছিল , তাকে নিয়েছে। এটাই বিজেপি র গ্যারান্টি। মোদিজির। চোর, জোচ্চোর, ধাপ্পাবাজদের যা করার করো, দলে এলেই সব মাফ। এটাই মোদিজির গ্যারান্টি। গ্রেফতার করছেন যারা বলছেন, অভিযোগ রয়েছে, নাম রয়েছে। স্ট্টমেন্ট দিয়েছেন মহিলা. উত্তম শিবু অ্যারেস্টড গয়েছে। অস্বীকার করতে পারবেন! ষড়যন্ত্র করে সন্দেশখালিতে আগুন জ্বালানো হয়েছে বলেও দাবি করেন অভিষেক। পরিস্থিতি একটু শোধরালেই সন্দেশখালি যাবেন বলে জানান।