কলকাতা: কখনও আট ঘণ্টা, কখনও ন'ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার এক ঘণ্টার মধ্যেই সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে এলেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। বার বার তলব করা নিয়ে এদিন কোনও ক্ষোভ প্রকাশ করেননি তিনি। তবে দলের সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে (Mahua Moitra) নিয়ে বিতর্কে মুখ খোলেন। (Abhishek on Mahua)
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা নাগাদ সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরোন অভিষেক। সেখানে মহুয়া প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে বলেন, "নীতি কমিটিতে অনেক অভিযোগ পড়ে রয়েছে। দেড় মাস আগে নতুন সংসদভবনে যখন বিশেষ অধিবেশন বসল, বিজেপি সাংসদ রমেশ বিদুরি সংসদের গরিমায় আঘাত হানেন। বিজেপি-র এমন অনেক সাংসদ রয়েছে, যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে রয়েছে। আজ পর্যন্ত শুনানি হয়নি।"
সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন বলেই মহুয়াকে কোপে পড়তে হচ্ছে বলেও এ দিন মন্তব্য করেন অভিষেক। তিনি বলেন, "যদি কেউ সরকারের বিরুদ্ধে লড়তে চায়, সরকারকে প্রশ্ন করে, আদানিদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হয়, কী উপায়ে তাঁকে সাংসদ পদ থেকে হটানো যায়, সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।"
আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee: 'আইনজীবীরা বারণ করেছিলেন, আমি এসেছি', ED-কে ৬০০০ পাতার নথি অভিষেকের
নীতি কমিটির তকফে মহুয়ার সাংসদ পদ বাতিলের যে সুপারিশ করা হয়েছে, তারও তীব্র সমালোচনা করেন অভিষেক। বলেন, "নীতি কমিটির সুপারিশের যে খসড়া আমার হাতে এসেছে, তাতে দেখলাম, মহুয়ার বিরুদ্ধে কিছু রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, তদন্ত করে দেখতে হবে। যদি কিছু না-ই থাকে, তাহলে বহিষ্কারের সুপারিশ করলেন কী করে? মহুয়া নিজের লড়াই, নিজে লড়ার যোগ্য। আমাকেও চার বছর ধরে ডাকছে, জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এক মামলায় কিছু না পেলে, অন্য মামলায় নাম টানছে। এরা এটাই করে। এটা প্রতিহিংসা ছাড়া কিছু নয়। সাধারণ মানুষ সব বুঝতে পারছেন।"
যদিও বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, "তদন্ত তো করবে অন্য সংস্থা! নীতি কমিটি নিজের এক্তিয়ারের মধ্যে থেকে, যে তথ্য রয়েছে, তার উপর নির্ভর করে বলতে পারেন, ওঁকে সাংসদ রাখা উচিত কিনা, তিনি সংসদের গরিমা নষ্ট করেছেন কিনা। ওইটুকুই বলেছেন তাঁরা। আর মহুয়া মৈত্রের কথাবার্তা শুনুন! সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান সম্পর্কে কী মন্তব্য করেছেন! তাতেই হয়ত ওঁর পদে থাকা উচিত নয় বলে মনে হয়েছে!"
সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী আবার বলেন, "অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এতদিন যাননি। বুঝেই গিয়েছেন যে, গিয়ে ফিরেও আসবেন। দিল্লিতে বন্দোবস্ত হয়ে যাবে। মোদি-শাহ কোনও ভাবেই পিসি-ভাইপোকে বিব্রত করতে রাজি নন। আর দরকারটাই বা কী? আদানিদের বিরুদ্ধে কথা বলায় মহুয়ার বিরুদ্ধে যা হল, গত একমাস ধরে একটি শব্দও খরচ করেননি অভিষেক। এখন এসব বলছেন। আমরা তো প্রথম থেকেই বলে আসছি, মহুয়া তৃণমূল সাংসদ হওয়া সত্ত্বেও। অভিষেক কোথায় বাঁধা পড়ে আছেন, মোদি-আদানির কাছে? "
এত বছর ধরে, এত বার করে ডাকা হলেও, এখনও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ ইডি আদালতে জমা করতে পারেনি বলে এদিন জানান অভিষেক। কোনও প্রমাণ নেই বলেই আদালত তাঁকে রক্ষাকবচ দিয়েছে বলে জানান তিনি। তবে যত বার তাঁকে ডাকা হবে, আসবেন, তদন্তে সহযোগিতা করবেন, তাঁর লুকনোর কিছু নেই বলে এদিন জানান অভিষেক।