নয়াদিল্লি: বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে লাগাতার অনুপ্রবেশের ঘটনা সামনে এসেছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, বাংলাদেশের মহম্মদ ইউনূসের সরকারের সঙ্গে সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে সংঘাতও দেখা দিয়েছে ভারতের। সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে যখন রাজনৈতিক টানাপোড়েন চরমে, সেই সময় দেশের সংসদে বিষয়টি উত্থাপন করলেন তৃণমূলের তারকা সাংসদ দেব ওরফে দীপক অধিকারী। (TMC MP Dev)


বাংলাদেশ সীমান্তের বিস্তীর্ণ এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া লাগানোয় কেন এই ঢিলেমি, সেই নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সামনে একাধিক প্রশ্ন তুলে ধরেন দেব। কেন্দ্রের তরফে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই সেই প্রশ্নের জবাব দেন। (India-Bangladesh Border Fencing)


১) বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের মোট সীমান্ত এলাকা কত, প্রথমেই জানতে চান দেব।


জবাবে কেন্দ্র জানিয়েছে, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে মোট ৪০৯৬.৭০ কিলমিটার সীমান্ত রয়েছে ভারতের।


২) কোন কোন রাজ্যে বাংলাদেশ সীমান্ত পড়ছে, তাও জানতে চেয়েছিলেন দেব।


কেন্দ্র জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ (২২১৬.৭ কিলোমিটার), অসম (২৬৩ কিলোমিটার), মেঘালয় (৪৪৩ কিলোমিটার), ত্রিপুরা (৮৫৬ কিলোমিটার) এবং মিজোরাম (৩১৮ কিলোমিটার)। 


৩) দেবের প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশ সীমান্তের কত কিলোমিটারে কাঁটাতারের বেড়া নেই? 


কেন্দ্র জানিয়েছে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ৮৬৪.৪৮২ কিলোমিটারে কাঁটাতারের বেড়া নেই। এর মধ্যে ১৭৪.৫১৪ কিলোমিটারে বেড়া বসানোর উপায় নেই। 


৪) কেন বাংলাদেশ সীমান্তের সর্বত্র কাঁটাতারের বেড়া বসানো সম্ভব হচ্ছে না, তাও জানতে চান দেব। 


উত্তরে কেন্দ্র জানিয়েছে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত আংশিক ভাবে কাঁটাতারহীন হয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে কেন্দ্রকে। কিছু জায়গায় জলাভূমি রয়েছে। আমার ধস-প্রবণ এলাকাও রয়েছে সীমান্তে। Border Guard Bangladesh-ও কাঁটাতারের বেড়া বসাতে দিচ্ছে না বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। কাঁটাতারের বেড়া বসানো একটি দীর্ঘকালীন কাজ। সেক্ষেত্রে আবহাওয়াজনিত প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। আবার জমি অধিগ্রহণে দেরি হওয়াতেও বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। 



গত বছর বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে এদেশে। কারণ গত কয়েক মাসে বার বার বেআইনি অনুপ্রবেশের ঘটনা সামনে এসেছে। সম্প্রতি মালদা-সহ কিছু জায়গায় সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসাতে গেলেও, ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সঙ্গে সংঘাত বাধে বাংলাদেশ সীমান্ত প্রহরা বাহিনীর। সেকথাই জানিয়েছে কেন্দ্র। 


জমি অধিগ্রহণে সমস্যা হচ্ছে বলে যে যুক্তি দিয়েছে কেন্দ্র, তা শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, অন্য রাজ্যগুলিতেও একই সমস্যা রয়েছে। কেন্দ্রের তরফে BSF-এর সীমানাবৃদ্ধির কথা বলা হলেও,  বেঁকে বসেছে একাধিক রাজ্য। বছর দুয়েক আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটারের বেশি ভিতরে ঢুকতে পারবে না BSF. এর ফলে বেআইনি অনুপ্রবেশ নিয়ে যখনই তরজা দেখা দিয়েছে, বিজেপি রাজ্যের দিকে আঙুল তুলেছে। তাদের অভিযোগ, রাজ্য জমি দেয়নি বলেই অনুপ্রবেশ ঘটছে। অন্য দিকে, রাজ্যের দাবি, সীমান্ত নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে অমিত শাহের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনস্থ BSF. অনুপ্রবেশ রুখতে না পারা তাদেরই ব্যর্থতা। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে একের পর এক অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটতে থাকায় BSF-কে জমি দিতে সম্মত হন মমতা। নদিয়ার করিমপুরে BSF-কে প্রায় ১ একর জমি দিতে রাজি হন তিনি।