কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও বিজেন্দ্র সিংহ, কলকাতা : বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সম্পর্কে তাঁর একটি মন্তব্য় ঘিরে সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছিল রাজ্য় রাজনীতিতে। সেই মন্তব্য় নিয়ে এখন আক্ষেপের সুর শোনা গেল তৃণমূল সাংসদ কল্য়াণ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের গলায়। বললেন, না বললেই ভাল হত। পাশাপাশি, প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রীর প্রশংসা শোনা গিয়েছে শুভেন্দু অধিকারী থেকে তথাগত রায়, বিজেপির একাধিক নেতার গলায়।
অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু, সেই অবস্থাতেও তাঁকে চাঁছাছোলা ভাষায় আক্রমণ করছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। যা নিয়ে নানা মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। আর কুণাল ঘোষ যখন অসুস্থ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে আক্রমণ করেছেন, তখন তাঁর দলের সাংসদ কল্য়াণ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের গলায় শোনা গেছে প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রী সম্পর্কে মন্তব্য়ের জন্য় অনুশোচনা। শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ বলেন, '২০১১-তে কোনও একটা মন্তব্য করেছিলাম বুদ্ধবাবু সম্বন্ধে। সেটা না করলেই ভাল হত।'
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্য়মন্ত্রী থাকাকালীন তাঁকে বেলাগাম আক্রমণ শানিয়েছিলেন কল্য়াণ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। যা নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, 'উনি শিল্প বোঝেন না। শিক্ষা বোঝেন না। কিছু বোঝেন না। শুধু নন্দনে বসে স্কচ-হুইস্কি। আর দু'-চারটে সামনে মহিলা থাকবে, এর বাইরে কিছু বোঝেন না।' এখন অবশ্য বুদ্ধবাবু সম্বন্ধে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, 'একজন রাজনীতিবিদ হিসাবে ওঁর একটা স্বচ্ছ প্রতিমূর্তি তো রয়েছেই। উনি অসুস্থ। ওঁর সুস্থতা কামনা করি।'
কল্য়াণ বন্দ্য়োপাধ্য়ায় যখন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সম্পর্কে পুরনো মন্তব্য়ের জন্য় অনুশোচনা প্রকাশ করছেন, তখন তথাগত রায় থেকে শুভেন্দু অধিকারীর মতো বিজেপি নেতাদের গলায় শোনা গেছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর প্রশংসা। বিজেপি নেতা তথাগত রায় বলেন, 'আমরা প্রায় সমবয়সি। ১৯৬১ সালের হায়ার সেকেন্ডারি। এই বাবদে আমার যতটুকু যোগাযোগ। বুদ্ধবাবুকে আমি সৎ মানুষ বলে জানি। রাজ্যের ভাল চাইতেন তাও জানি। সবাই জানেন, বুদ্ধবাবু কোনও ঘুষ নেন না। বুদ্ধবাবুর সন্তান আছে। কিন্তু, কারও জন্যই তিনি কিছু করেননি।'
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলছেন, 'ভগবানের কাছে সবার প্রার্থনা থাকা উচিত, এইরকম একটা সৎ রাজনীতিবিদ। সকলের শ্রদ্ধাভাজন। তিনি যেন সুস্থ হয়ে আবার বাড়ি ফিরতে পারেন।'
প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। তিনি বলেন, 'খুব খারাপ লাগছে। আমার সঙ্গে বিরোধও ছিল চরম। কখনও একসঙ্গে নির্বাচনও করতে গেছি। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বুদ্ধবাবুর সততা তুলনাহীন। বাংলার রাজনীতিবিদদের কাছে একটা আদর্শ । তাঁর ভাবনার মধ্য়ে বাংলার উন্নয়নের প্রতিফলন ছিল। সিঙ্গুর হলে বাংলার ভাল হত। অস্বীকার করতে পারি না।'
বিরোধী হোক বা শাসক, এই একটা মানুষের জন্য় অন্তত সবার এক সুর। অনেকে বলছেন, এও কি কম পাওয়া ?