আবীর দত্ত, অর্ণব মুখোপাধ্যায়, কলকাতা : হাসপাতালে ভর্তি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buidhhadeb Bhattacharya)। শনিবার থেকেই হাসপাতালের নিচে ঠায় দাঁড়িয়ে তাঁর দীর্ঘদিনের সঙ্গী সেই সাদা অ্যাম্বাসাডর (White Ambassador)। ২০১৯ সালের ব্রিগেডে শেষবার জনসমক্ষেও তিনি এসেছিলেন সেই নিজের সাদা অ্যাম্বাসাডরে চড়েই। যদিও অসুস্থতার জেরে গাড়ি থেকে নামতে পারেননি। ফিরে যেতে হয়েছিল বাড়িতে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। যিনি বাংলাকে দেশের অটো মোবাইল শিল্প মানচিত্রের মাস্ট-ভিজিট ডেস্টিনেশন তৈরি করতে চেয়েছিলেন কিন্তু সেই স্বপ্ন থেকে গেছে অপূর্ণ। আর ইতিহাসের পাতায় ট্র্যাজিক হিরো হিসাবেই রয়ে গেছেন সেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। 


অনেকেই বলেন মুখ্যমন্ত্রী হয়ে তিনি চাননি জ্যোতিবসুর জুতোয় পা গলাতে। উল্টে হাঁটতে চেয়েছিলেন বাংলার রূপকার বিধানচন্দ্র রায়ের পথে। যিনি বুঝতে পেয়েছিলেন শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থানই বাংলার একমাত্র ভবিষ্যত। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও নিজের প্রিয় সংস্কৃতির গন্ডি পেরিয়ে, ঝাঁপিয়েছিলেন রাজ্যে শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থারের লক্ষে। আর, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যখন শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থানের লক্ষ্য়ে, বিধানচন্দ্র রায়ের পথে হেঁটেছেন, তখন কংগ্রেস থেকে উঠে আসা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার সিঙ্গুরে টাটার কারখানার বিরোধিতা করেছেন।


বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর অনেক আগে, বাংলার গাড়ি-শিল্পে সাফল্য় শুরু হয়েছিল বিধান রায়ের আমলে। স্বাধীনতার পর স্বাবলম্বী ভারতের শিল্পযাত্রার অন্যতম উড়ান শুরু হয়েছিল হুগলির উত্তরপাড়ার এই কারখানা থেকে। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় অ্যাম্বাসাডর কারখানা। কারখানা তৈরির জন্য বিকে বিড়লার সঙ্গে কথা বলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়। কারখানা তৈরির জন্য হিন্দুস্তান মোটর্সকে প্রায় ৭৪৪ একর জমি দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হিন্দমোটরের সেই গৌরব চিরস্থায়ী হয়নি। ২০১৪ সালে পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে যায় কারখানা। এখন, কারখানার একাংশে তৈরি হয়েছে টিটাগড় ওয়াগনের কারখানা এবং বহুতল।


আর, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সিঙ্গুরে যে গাড়ির কারখানা তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন, সেটা আক্ষরিক অর্থেই এখন মাটির তলায়। ২০০৬ সালে সপ্তম বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার দিনেই রতন টাটাকে পাশে নিয়ে সিঙ্গুরে ছোট গাড়ি তৈরির কারখানার কথা ঘোষণা করেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেকথা জানিয়েছিলেন তিনি। ২০০৭ সালে সিঙ্গুরে টাটার কারখানা তৈরির কাজ শুরু হয়। 
আর সেই সময়েই জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন কৃষকদের একাংশ। শেষমেশ ২০০৮ সালের ৩ অক্টোবর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর সঙ্গে বৈঠকের পর সিঙ্গুর থেকে সরে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেন রতন টাটা। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর, সিঙ্গুরে গিয়ে জমি ফিরিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভেঙে ফেলা হয় টাটার কারখানার কাঠামো। অনিচ্ছুক কৃষকরা জমি ফেরত পেলেও, এখনও তা পুরোপুরি চাষযোগ্য হয়নি। আর ইতিহাসে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রয়ে গেছেন ট্র্য়াজিক হিরো হয়ে।


যদিও রাজনীতিবিদ হিসেবে তাঁর ব্যপ্তি কার্যত সর্বজনবিদিত। আর তাই হাসপাতালে ভর্তি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর জীবনের যুদ্ধজয়ের প্রার্থনা সবমহলে। সঙ্গে অপেক্ষা ফের একবার তাঁর সেই সাদা অ্যাম্বাসাডরে চাপার। 


আরও পড়ুন- অসুস্থ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, ৩ দিন ট্রাই-সাইকেল চালিয়ে হাসপাতালে হাজির বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন গুণমুগ্ধ


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন


https://t.me/abpanandaofficial