অর্ণব মুখোপাধ্যায় ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: দলের অন্দরে চলছে নবীন-প্রবীণ বিতর্ক। এবার তা নিয়েই মুখ খুললেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Kalyan Banerjee)। বয়স নয়, কোয়ালিটিই ফ্যাক্টর, মত কল্যাণের। বয়স বাড়লেও যে কর্মক্ষমতা কমে না তা বোঝানোর জন্য টেনে আনলেন একাধিক উদাহরণও। 


কী উদাহরণ দিলেন সাংসদ?
তৃণমূলের অন্দরের নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে, এবার বিস্ফোরক মন্তব্য শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদের। তাঁর মতে, 'নবীনদের মধ্যে যে ইট-বালি-পাথর নিয়ে আসছে, সেই তাহলে সব থেকে বেশি যোগ্য হয়ে যায়।' বয়সের ঊর্ধ্বসীমার প্রসঙ্গেই এদিন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেছেন, 'একটা জিনিস রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে ম্য়াচিওরিটির দরকার আছে। তুমি যদি বলো, যে না চলবে না, তাহলে ম্য়াচিওর লোক থাকবে না। নেব না।' তাহলে কি বিশেষ কাউকে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করলেন বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ কল্য়াণ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়?


তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) বলেছিলেন, 'রাজনীতি হোক বা যে কোনও ফিল্ডে হোক, আমি মনে করি একটা ঊর্ধ্বসীমা থাকা দরকার।' তিনি বলেছিলেন, 'আমি মনে করি অনেক কিছু হওয়া উচিত। সময়সীমা থাকা উচিত রাজনীতির ক্ষেত্রে। ৬৫ বছর হোক, ৬০ বছর হোক, ৭০ বছর হোক। এর ওপর রাজনীতি করা উচিত নয়, আমি মনে করি।' তৃণমূলে ভোটে দাঁড়ানোর বয়সের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়ার জল্পনার মধ্য়েই সম্প্রতি ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee)। তিনি বলেছিলেন, 'সৌগতদা মাঝে মাঝে বলেন, আমার তো বয়স হয়ে গেল! আরে কীসের বয়স! মানুষের মনের কি কোনও বয়স আছে? যাঁরা নতুন এসেছেন, পুরনোদের সম্মান দিয়ে মাথায় রাখবেন।' এরপরই কার্যত দলনেত্রীর ভিন্নমত শোনা যায় কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) মুখে। তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্রের মত ছিল, রাজনীতি করলে দলের সংগঠনও করা যায়, বিধায়ক বা সাংসদ পদ ধরে রেখে তবেই রাজনীতিতে থাকতে হবে এমন কোনও মানে নেই। বলেছিলেন, 'পার্টিটা যেন সিপিএমে পরিণত না হয়, যে যতক্ষণ না কেউ দেহত্যাগ করবে, ততক্ষণ পদত্যাগ করবে না।' সেইসঙ্গে বয়স বেধে দেওয়া প্রসঙ্গে নিজের অনড় অবস্থানের কথা স্পষ্ট করে দেন খোদ অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। তিনি বলেছিলেন, 'প্রবীণ যাঁরা আছেন, তাঁদের অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু, আমি প্রোডাক্টিভিটি যদি দেখি, আজকে প্রোডাক্টিভিটি কিছুটা হলেও কমে। সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উনি হয়তো বলে থাকতে পারেন। আমি মনে করি যে সর্বত্র একটা ঊর্ধ্বসীমা থাকা দরকার। নতুন তৃণমূল মানে, যারা নতুন দলে এসেছে, তাঁরা দল করবে, আর পুরনোরা করবে না, তা তো নয়।'


'প্রোডাক্টিভিটি'র প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কল্য়াণ বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, '৯০ বছর বয়স শক্তিনাথ মুখোপাধ্যায়ের, তাঁর কি প্রোডাক্টিভিটি কমেছে আজকে কোর্টে? অনিন্দ্য মিত্র ব্যারিস্টার, ৮৭ বছর বয়স, প্রোডাক্টিভিটি কমেছে? কমেছে? ঠিক আছে? আমারও তো দেখতে দেখতে বয়স হল, ৬৭ পেরোচ্ছি। আমি এখনও রাজনীতি করছি, প্র্যাকটিসও করছি। বয়স ফ্যাক্টর নয়, ফ্যাক্টর হচ্ছে তোমার কোয়ালিটি ওফ এ ম্যান। কতটা সেই বয়সে তুমি, শারীরিকভাবে ফিট, মানসিকভাবে অ্য়ালার্ট। এটা গাইডলাইন হওয়া উচিত।'


সিপিএমের কটাক্ষ:
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর (Sujan Chakraborty) কটাক্ষ, 'তৃণমূলের অন্দরে নবীন-প্রবীণের দ্বন্দ্ব বলে যেটা বলা হচ্ছে সেটা আসলে ভাগাভাগির দ্বন্দ্ব। প্রবীণের অভিজ্ঞতা এবং নবীনের কর্মক্ষমতা ও চাঞ্চল্য এটা নিয়েই এগোতে হয়।'


আরও পড়ুন: 'বাটুল দি গ্রেট'-র স্রষ্টার নামে চালু 'ষষ্ঠী-নারায়ণ ইকো পার্ক', কত দাম টিকিটের ?