কলকাতা: নদিয়ায় মোদির সভায় যাওয়ার আগে লোকাল ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হল তিন বিজেপি কর্মীর। মৃতরা প্রত্যেকেই মুর্শিদাবাদের বড়ঞার বাসিন্দা। আর এই মৃত্যু নিয়েই শুরু হয়েছে রাজনীতি। বাংলার মানুষের মৃতদেহের ওপর দাঁড়িয়ে মোদির সভা, তীব্র আক্রমণ করে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছে তৃণমূল। তাহেরপুর দুর্ঘটনা নিয়ে এবার এক্স পোস্ট তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রর (Mahua Moitra)।

Continues below advertisement

Continues below advertisement

আরও পড়ুন, 'তৃণমূলের সৌজন্যে লজ্জায় মুখ ঢাকতে হয়েছে ফুটবলপ্রেমী রাজ্যকে..', যুবভারতীকাণ্ডে প্রতিক্রিয়া প্রধানমন্ত্রীর 

 এক্স পোস্টে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র লিখেছেন,'মোদির অহংয়ের কাছে চাপা পড়ে গেল ভয়াবহ দুর্ঘটনার ট্র্যাজেডি। রানাঘাটে প্রধানমন্ত্রীর সভার জন্য সমর্থকদের নিয়ে আসা হচ্ছিল মুর্শিদাবাদ থেকে। তাঁদের মধ্যে চারজন উঠে এসেছিলেন রেললাইনে। রেললাইনে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু সমর্থকদের। পুরো ঘটনাটি এড়িয়ে গেল বিজেপি, ধামাচাপা দিল বিজেপি। মিছিল নিয়ে এগিয়ে গেল বিজেপি।' 

 খারাপ আবহাওয়ার কারণে শনিবার তাহেরপুরের সভায় সশরীরে আসতে পারেননি নরেন্দ্র মোদি! এদিনই ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় প্রধানমন্ত্রীর সভায় যোগ দিতে আসা ৩ বিজেপি কর্মীর। যা নিয়ে দিনভর চলল রাজনীতি। শনিবার ভোর ৫টা ২০ নাগাদ। ডাউন কৃষ্ণনগর-শিয়ালদা লোকালের ধাক্কায় ছিটকে যান কয়েকজন বিজেপি কর্মী সমর্থক। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তিন জনের।বাকি ২ বিজেপি কর্মী গুরুতর জখম হন।  বিজেপি কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শী নীলমাধব ঘোষ বলেন,  হঠাৎ শুনতে পেলাম ট্রেনে কিছু মানুষ কাটা পড়েছে।  প্রচণ্ড কুয়াশা এবং অন্ধকার থাকার জন্য ট্রেনটার হয়তো সঠিক অবস্থানটা বুঝতে পারেনি সেই কারণে, ধাক্কা লাগার কারণে ৩ জনে ওখানেই মারা যান। 

নিহত গোপীনাথ দাসের স্ত্রী  ফাল্গুনী দাস বলেন, মিটিং করতে গেছিল। কী চাইব, আমার যা যাবার সেটা তো চলেই গেল। এবার এই ছেলেটার কোনও একটা সুরাহা তো করতে হবে। পরে অডিও বার্তার শুরুতেই ট্রেনের ধাক্কায় নিহত বিজেপি কর্মীদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী  নরেন্দ্র মোদি বলেন, আমি জানতে পেরেছি, রেল লাইনে পৌঁছনোর সময়ে, খারাপ আবহাওয়ার জন্য, বিজেপি পরিবারের কয়েকজন কর্মী রেল দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন, যে বিজেপি কর্মীদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রয়েছে, যাঁরা এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন, তাঁদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি, এই দুঃখের সময়ে আমরা তাঁদের পরিবারের পাশে রয়েছি। 

অন্য়দিকে, এই ঘটনা সামনে আসার পরই তৃণমূলের তরফে X হ্যান্ডলে এই পোস্ট করা হয়। যার ওপরেই লেখা ছিল বাংলার মানুষের মৃতদেহের ওপর দাঁড়িয়ে মোদির সভা। মোদির সভায় অব্যবস্থার অভিযোগ তুলে তাতে আরও লেখা হয়, অন্যান্য জেলা থেকে ভেড়া-গরুর পালের মতো করে মানুষকে নরেন্দ্র মোদির সভায় আনা হয়েছিল। কোনও নিরাপত্তা বিধি ছিল না। ভিড় নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থা ছিল না। মানুষের জীবনের প্রতি কোনও ভ্রুক্ষেপ ছিল না। তাই যা হওয়ার তাই ঘটল। একেবারে শেষে মোদিকে আক্রমণ করে তৃণমূল লেখে, যদি 'প্রধান সেবক' একটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা করতে না পারেন, তাহলে জাতির কাছে ন্যূনতম পাওনা হল ক্ষমা চাওয়া এবং পদত্যাগ। 

শনিবার মুর্শিদাবাদের বড়ঞার মসোড্ডায় নিহত বিজেপি কর্মী গোপীনাথ দাসের বাড়িতে পৌঁছে যান তৃণমূলের স্থানীয় ব্লক সভাপতি। বড়ঞা উত্তর তৃণমূল ব্লক সভাপতি মুর্শেদ জজ বলেন, 'একজন উপার্জনকারী এই সংসারে। আমরা দলমত নির্বিশেষে, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে আমাদের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সর্বভারতীয় নেতৃত্ব এবং ডেভিডদার নির্দেশে আমরা এখানে এসেছি। আমরা মানুষের পাশে থাকব। আমরা সবরকম সহযোগিতা করব। '

 শক্তিনগর জেল হাসপাতালে ভর্তি আহত বিজেপি কর্মীকে দেখতে যান বিরোধী দলনেতা শুভেনদু অধিকারী, বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য ও কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। সেইসময় হাসপাতালের গেটের সামনে 'জয় বাংলা' স্লোগান দেন যুব তৃণমূল কর্মীরা। পাল্টা বিজেপির কর্মীরাও তেড়ে যান। দু'পক্ষের মধ্যে কার্যত হাতাহাতির পরিস্থিতি তৈরি হয়।এদিন হাসপাতালে নিহত বিজেপি কর্মীদের শেষশ্রদ্ধা জানান বিজেপি নেতারা।সূত্রের খবর, রেল দুর্ঘটনার পর পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজারকে ফোন করেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, তা জানতে চান তিনি। এই ঘটনা নিয়ে GM-এর কাছে রিপোর্টও চেয়েছেন রেলমন্ত্রী।