সমীরণ পাল, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী: সোনার দোকানে শ্যুটআউটে প্রাণ গিয়েছে তরতাজা যুবক (Barrackpore Shootout)। কী কারণে এমন ঘটনা, তা স্পষ্ট হয়নি এখনও। তার মধ্যেই এই ঘটনা নিয়ে জল গড়িয়েছে রাজনীতির ময়দানে। পাশাপাশি, লোকসভার দুই সাংসদ। একজন, তৃণমূলের (TMC) সৌগত রায় (Saugata Roy)। অন্যজন, অর্জুন সিংহ (Arjun Singh), যিনি বিজেপি-র টিকিটে জিতে সাংসদ হয়ে, পরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে ফিরে আসেন।

এবার, ব্যারাকপুরে সোনার দোকানে শ্যুটআউটে তরতাজা যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় বাগযুদ্ধে জড়ালেন সৌগত এবং অর্জুন। একদিকে, তির ছুড়লেন অর্জুন, তার পাল্টা শক্তিশেল ছুড়লেন সৌগতও। একই দলের দুই নেতার এমন বাগযুদ্ধে তপ্ত রাজনীতি। 


ব্যারাকপুরের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অর্জুন। তাঁর বক্তব্য, "একজন সাংসদ হিসেবে কাল লজ্জা বোধ হচ্ছিল। আমি এত নিরাপত্তা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি, আর আমার এলাকার মধ্যে একজন ২৭ বছরের ছেলে খুন হয়ে গেল! খুন করে দেওয়া হল। আজকাল ডাকাতি থেকে তোলাবাজি, ভাল ব্যবসা। কারণ ডাকাতি একটা দোকানে হবে, এক জায়গায় একজনকে ডাকাতির নাম করে খুন করে দেওয়ার পরে, তার নামে তোলাবাজি বেড়ে যাবে। ভয়ে লোকে টাকা দিয়ে দেবে।"


অর্জুনের এই মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সৌগত বলেন, "অর্জুন সিংহের এমনটা বলা ঠিক হয়নি। পার্টির কাছে বলতে পারতেন! মুখ্যমন্ত্রীকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে বলতেন! ওঁর বক্তব্যের কোনও বেসিস আছে বলে আমি মনে করি না। অর্জুন আগে আমাদের সঙ্গে ছিলেন না, বিজেপি-র সাংসদ। এখন এসেছেন। আমরা চাই উনি থাকুন।"


আরও পড়ুন: Saugata Roy: ‘খরচ-খরচা তো দরকার নাকি’! ব্যারাকপুর শ্যুটআউট নিয়েও আজব তত্ত্ব সৌগতর


রাজ্য রাজনীতিতে বাহুবলী নেতা হিসেবেই পরিচিত অর্জুন। বাবা সত্যনারায়ণ সিংহ ছিলেন ভাটপাড়ার তিন বারের কংগ্রেস বিধায়ক। নৈহাটির ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র কলেজে পড়তে পড়তেই সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন ছেলে অর্জুন। ১৯৯৯-র লোকসভা নির্বাচনে প্রথমবার তৃণমূলের টিকিটে ভোটে লড়েন। তবে, সে বার সিপিএম-এর দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা তড়িৎবরণ তোপদারের কাছে ৪০ হাজার ৭৭৫ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান অর্জুন।

এর পরবর্তীকালে ২০০১ থেকে ২০১৬, পরপর ৪ বার তৃণমূলের টিকিটে বিধায়ক নির্বাচিত হন অর্জুন। ২০১৯-এ ব্যরাকপুর থেকে বিজেপি-র প্রার্থী হিসেবে জিতে সাংসদ হন। এর পরই, গত বছরের মে মাসে পাট নিয়ে বিবাদের জেরে সাঙ্গ হয় অর্জুনের বিজেপি-র পাট। অভিষেকের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে গিয়ে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরেন অর্জুন।

এই প্রেক্ষাপটে, আনন্দপুরী শ্যুটআউটের ঘটনায়, পুলিশের সমালোচনা প্রসঙ্গে, বৃহস্পতিবারই অর্জুনের পাশে দাঁড়ান তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। পুলিশি নজরদারি থাকলে ডাকাতি হতই না বলে জানিয়ে দেন মদন। অর্জুনের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, "অর্জুন সাংসদ, এমএলএ ছিল, ওর কথা গুরুত্বপূর্ণ। আগে তো ওখানে বিজেপি ছিল। এখন তো সব আমাদের দলের। অর্জুনও তো আমাদের দলের।"


যদিও মদনের মন্তব্যে গুরুত্ব দিতে নারাজ সৌগত। তাঁর বক্তব্য, "কিছুদিন আগে অর্জুন মদনের ঝগড়া হয়েছিল। এখন আবার মদন পাশে দাঁড়াচ্ছে। ওদের বক্তব্যের কোন গুরুত্ব নেই।"


এ নিয়ে ব্যারাকপুরের তৃণমূল বিধায়ক রাজ চক্রবর্তীর প্রশ্ন, "আমি বিধায়ক হওয়ার পর থেকে ব্য়ারাকপুরে বারবার কেন এমন হচ্ছে? কিছু উদ্দেশ্য়ে নয় তো?" সব মিলিয়ে, ব্যারকপুর শ্যুটআউটকাণ্ডের কারণ স্পষ্ট না হলেও, এই ঘটনার পর তৃণমূলের অন্দরের দ্বন্দ্ব ফের একবার প্রকাশ্যে চলে এল।