কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎ-জল্পনা। 'দার্জিলিঙে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ২ ঘণ্টার বৈঠক কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়রের', তাহলে কি কালীপুজোর পরেই ঘাসফুলে ঘর ওয়াপসি কাননের? সেই প্রশ্নই উঠছে রাজনৈতিক মহলে।
যদিও এ নিয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ শোভন চট্টোপাধ্যায়। গতকাল সাতসকালে উত্তরবঙ্গের ফ্লাইট ধরে দার্জিলিং পৌঁছন শোভন-বৈশাখী। গতকাল বিকেলে রিচমন্ড হিলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়, খবর শোভন-ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে ।
এর আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছে তৃণমূলে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি। এবিপি আনন্দকে জানিয়েছিলেন শোভন চট্যোপাধ্যায়। তাহলে কি এবার পাকাপাকিভাবে তৃণমূলে ফিরতে চলেছেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র? উৎসবের আবহে মাথাচাড়া দিল এই জল্পনা।
কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের দাবি ছিল, এদিনই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি এবং বৈশাখী বন্দোপাধ্যায়। তৃণমূলে ফেরার আর্জিও জানিয়েছেন। প্রাক্তন মেয়রের কথায়, 'অভিষেকের সঙ্গে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার হয়েছে। আমি নিজে খুব মুগ্ধ। আমরা তিনজনে ছিলাম। দল যখন যেভাবে কাজে লাগাবে সেই কাজ করতে আমি আগ্রহী, অভিষেককে জানিয়েছি।'
একসময়ে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কিচেন ক্যাবিনেটের সদস্য ছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। কলকাতার মেয়র এবং মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ সব দফতরের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৯ সালে দিল্লি গিয়ে, জুটিতে বিজেপিতে নাম লেখান শোভন-বৈশাখী।২০২১ সালে বিজেপির হয়ে প্রচারে নেমে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে আক্রমণও করেন।
একুশের ভোটে বিজেপি রাজ্যে দাগ কাটতে পারেনি। তারপর বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে শোভন-বৈশাখীর। ফের তৃণমূলের কাছাকাছি আসতে শুরু করেন তাঁরা। কখনও ভাইফোঁটার দিনে মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে দেখা যায় এই জুটিকে।কখনও আবার নবান্নে। এদিনের আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করলেন শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দোপাধ্যায়।
সেবার শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'আমি নিজে অভিভূত। আমিও বলছি বয়স কোনও বিষয় নয়, এটা থেকে আজকে অনেক জিনিস উপলব্ধি করেছি! যা আলোচনা হয়েছে তাতে মনে করি, ওই মেঘ থেকে জল আসবে। অভিষেকের উষ্ণতাও উপলব্ধি করেছি। মমতাদি, তাঁর নিশ্চয়ই অভিষেককের সঙ্গে কথা হবে, আমাকেও ডাকবেন। সেই অনুযায়ী যা ভাল বুঝবেন, সিদ্ধান্ত নেবেন। যেভাবে অ্যাডজাস্ট করা দরকার, আমি নিজেকে প্রস্তুত রাখছি। আজকের নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেটা আমার বড় পাওনা।'
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'আমার কাছে শ্রেষ্ঠ শারদ উপহার। আমি কখনও শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন আলাপচারিতা শুনিনি। যে আন্তরিকতা অভিষেক, শোভনের প্রতি বর্ষণ করেছে, আমার মনে হয়েছে, এই দিনটা এ বছরের স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকল। কিছু অভিমানের মেঘ জমে ছিল। ভুল ধারণা, ইচ্ছে করে নানা রটানো ছিল, সেই গুলো কেটে গেছে। ওর সক্রিয়তা সময়ের অপেক্ষা।'
বৈঠক তো হল। ঘাসফুলের বাগানে শোভনের প্রত্যাবর্তন কি তাহলে সময়ের অপেক্ষা?
এ প্রসঙ্গে আগে কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, 'আমি তো অনেক আগেই বলেছি যে শোভন, তিনি রাজনৈতিক মানুষ এবং বৈশাখী যথেষ্ট... তারা যদি তৃণমূলে সক্রিয় হতে চান। শোভনদার সঙ্গে তো আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল, সেটা যদি এক দলের আনুষ্ঠানিক সম্পর্কে পরিণত হয়, তাহলে সেটা আরও ভাল। সিদ্ধান্ত নেবেন মমতা ও অভিষেক। কিন্তু অভিষেকের সঙ্গে যে সৌজন্যের বৈঠক হয়েছে, সেটা তো আরও ভাল কথা।'
সামনে ছাব্বিশের বিধানসভা ভোট। তার আগে কি ফের রাজ্য রাজনীতিতে দেখা যাবে ঘরে ফেরার ছবি?