কলকাতা: পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের (Arpita Mukherjee) বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া কোটি কোটি টাকার সঙ্গে তৃণমূলের (TMC) কোনও যোগাযোগ নেই, এ কথা গতকালই জানিয়েছিলেন কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। শনিবার দলের তরফে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ফের এই বক্তব্যই স্পষ্ট করল তৃণমূল। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, কুণাল ঘোষ, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস। সেখানেই তাঁরা একযোগে জানিয়েছেন, 'এই টাকার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই, যার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় তাঁর সঙ্গেও দলের কোনও সম্পর্ক নেই। যে বা যাঁদের নাম উঠে আসছে তার উত্তর তাঁদের আইনজীবীরা দেবে। দল নয়'।
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির তদন্তে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছে ইডি। তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে ২১ কোটিরও বেশি টাকা! লরি বোঝাই ট্রাঙ্কে ভর্তি করে, সেই টাকা নিয়ে যেতে হয়েছে কিন্তু, তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ কার্যত পরিষ্কার করে দিয়েছেন, যে তাঁরা দল হিসেবে, এই ঘটনায় কোনও দায় নিচ্ছেন না।
শনিবার দলের তরফে মুখপত্র কুণাল ঘোষ বলেন, 'তৃণমূল আইন এবং আদালতের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখে। এই বিষয়টি আদালতে গিয়েছে। গল্প না ছড়িয়ে তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট জানাতে হবে। নোটবন্দির চলছিল সেখানে এত টাকা এল কীভাবে। তদন্ত করে দেথা হন। বিচারে যদি পার্থর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হয় দল তার বিরুদ্ধে যা ব্যবস্থা নেওয়া নেবে। তৃণমূল অটুট ছিল অটুট থাকবে'। এ দিন বিজেপি যোগ টেনে কুণাল বলেন, '২১ জুলাই-এর পর ঐতিহাসিক সমাবেশের পর সবাই ভয় পেয়েছে। বিজেপি চক্রান্তের রাজনীতি চালাচ্ছে। কুৎসা করছে। পার্থ যদি বিজেপির ওয়াশিং মেশিনে ঢুকে যেত কোনও তদন্ত হত না, তৃণমূলে আছে বলে এসব হচ্ছে'।
কী বললেন কুণাল, রইল এক নজরে
- এখনই পার্থর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নয় দল এবং সরকারের
- বিচারে যদি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়
- তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে দল ও সরকার
- মন্তব্য তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের
- টাকা উদ্ধার হয়েছে, এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই
- যাঁর বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছে, তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক নেই
- যাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে, তাঁর আইনজীবীরা এর উত্তর দিতে পারবেন
- আইনে আস্থা আছে তৃণমূল
- বিষয়টি এখন রয়েছে আইন-আদালতে
- এই টাকার উত্স কী? এর পিছনে কী আছে?
- শুধুমাত্র একটা গল্প না ছড়িয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তদন্ত শেষ করুক
- তদন্ত দ্রুত শেষ করে আদালতে জানাক ইডি
- বেআইনি টাকা, কালো টাকা এল কী করে, সেটাও তদন্ত করে দেখা দরকার
- আইন-বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা রাখছি
- বিচারে যদি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়
- তাহলে তৃণমূল কংগ্রেস দলগতভাবে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে
- বাংলার মানুষকে বলছি, তৃণমূল অটুট ছিল, অটুট থাকবে
- একুশে জুলাইয়ের ঐতিহাসিক সমাবেশকে ভয় পাওয়ার পর বিজেপি চক্রান্তের রাজনীতি চালাচ্ছে
- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল তার সাফল্য রাখবে
এই একই সুর শোনা গিয়েছে অরূপ বিশ্বাস এবং ফিরহাদ হাকিমের গলাতেও। তাঁরাও বারবার বিজেপির চক্রান্ত প্রসঙ্গ টেনেছেন আজ। ফিরহাদ হাকিমের কথায়, ‘২ মাসের মধ্যে পার্থদা ওয়াশিং মেশিনে ঢুকে গেলে ইডির তদন্ত হত না। তৃণমূল কংগ্রেসে ছিলেন পার্থদা, তাই তাঁর বিরুদ্ধে কুত্সা, ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমাকে জেলে যেতে হয়েছিল কিন্তু, একই মামলায় একজন ওয়াশিং মেশিনে ঢুকে যাওয়ায় কিছু হয়নি। অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হলে দল ব্যবস্থা নেবে কিন্তু কোনও ষড়যন্ত্রের শিকার হলে আমরা প্রতিবাদ করব।’
শুক্রবার রাতে পার্থ ঘনিষ্ঠর বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ টাকার এই পাহাড় উদ্ধারের পরই ইডি বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল, যে বস্তা বস্তা এই টাকা উদ্ধার হয়েছে পার্থ চট্টোরপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট থেকে।
কিন্তু, উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, টাকা উদ্ধারের পর থেকেই তৃণমূল এই ঘটনা থেকে দায় ঝেড়ে ফেলেছে। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে, তৃণমূল কি সত্যি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের থেকে নিজেদের আলাদা করতে পারে? কারণ, পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখনও তৃণমূলের মহাসচিব। শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি, পরিষদীয় দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দায়িত্ব তাঁর হাতে।
তৃণমূলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সদস্যও পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
মাত্র মাত্র দু’দিন আগে, তৃণমূলের ২১ জুলাই সমাবেশেও সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন তিনিই! শুক্রবার ইডি যখন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তখনও বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ সাংবাদিক বৈঠক করে ইডিকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়েছিল তৃণমূল। ইডির অভিযান শুরু হতেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ শোনা যায় ফিরহাদ হাকিমের মুখেও।
তবে গ্রেফতারির পর তৃণমূল নেতৃত্বের সুর বদলে যায়। কুণাল ঘোষই তখন ট্যুইট করে বলেন, ইডি যে টাকা উদ্ধার করেছে, তার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। এই তদন্তে যাদের নাম আসছে, এসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দেওয়ার দায়িত্ব তাঁদের বা তাঁদের আইনজীবীদের। তৃণমূলের এই অবস্থান বদল নিয়েই কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে বিরোধীরা। সব মিলিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি ঘিরে বঙ্গ রাজনীতিতে ঝড় উঠেছে।