কলকাতা: গরুপাচার মামলায় বেশ কয়েক মাস ধরে টানাপোড়েন চলছে অনুব্রত মণ্ডলকে (Anubrata Mondal) নিয়ে। কিন্তু আগাগোড়া তাঁর পাশেই থাকতে দেখা যাচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্বকে (TMC)। দলের অন্য নেতা-নেত্রীরা তো বটেই, খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) অনুব্রতর পাশে দাঁড়িয়েছেন। ফলে বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি পদেও এখনও বহাল রয়েছেন তিনি। কিন্তু নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়ার দেড় মাস পর যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষকে (Kuntal Ghosh) দল থেকে বহিষ্কার করল তৃণমূল। আবার হুগলিতে দলের নেতা, জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Santanu Banerjee) দল থেকে বহিষ্কার করা হল মাত্র পাঁচ দিনের মাথায়।


শুধুমাত্র সাসপেন্ড করা হয় পার্থকে, দল থেকে বহিষ্কৃত হননি তিনি


নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সর্বপ্রথম গ্রেফতার হন তৃণমূলের প্রাক্তন মহাসচিব তথা রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার টাকার পাহাড়, কাঁড়ি কাঁড়ি গহনায় সাড়া পড়ে যায় গোটা বাংলায়। তার জেরে কার্যত মুখরক্ষা করতেই পার্থকে পদ থেকে সরানো হয়। তবে দল থেকে আজও বহিষ্কার করা হয়নি পার্থকে। শুধুমাত্র সাসপেন্ড করা হয় তাঁকে। এমনকি নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত, পলাশীপাড়ার বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকেও এখনও পর্যন্ত সরানো হয়নি।


কিন্তু কুন্তল এবং শান্তনুর ক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ করতে দেরি করল না তৃণমূল। কুন্তলের ক্ষেত্রে যাও বা ৫২ দিনের সময় নেওয়া হল, শান্তনুকে গ্রেফতারির পাঁচ দিনের মাথায় দল থেকে বহিষ্কার করল দল। মঙ্গলবার দু'জনকে বহিষ্কার করা হল তৃণমূল থেকে। রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং ব্রাত্য বসু এ দিন সাংবাদিক বৈঠক করে সিদ্ধান্ত জানান। 


আরও পড়ুন: Shantanu Banerjee : শান্তনুর মোবাইল ফোন সোনার খনি ! কী এমন তথ্য পেল ED, যা 'আদালতেও যায় না বলা'?


এ দিন শশী বলেন, "তৃণমূল কোনও দুর্নীতিকে বরদাস্ত করবে না। কোনও রকম আপস করা হবে না। আমাদের পদাধিকারী, নির্বাচিত প্রতিনিধি বা তাঁর আত্মীয় দি যুক্ত থাকেন,, তাঁর বিরুদ্ধে আমরা কড়া ব্যবস্থা নিয়েছি আমরা বিগত দিনে, আপনারা দেখেছেন। সে মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় হোন বা যুব নেতা কুন্তল ঘোষ অথবা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় হোন। পার্থ সাসপেন্ড রয়েছেন। শান্তনু এবং কুন্তলকে অপসারিত করা হল।"


কিন্তু পার্থ, মানিক এবং অনুব্রতকে নিয়ে তৃণমূলের এক অবস্থান, আর শান্তনু এবং কুন্তলকে নিয়ে অন্য অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধী দলের নেতারা। বিজেপি নেতা রাহুল সিনহার কথায়, "শান্তনু-কুন্তলকে নিয়ে কালীঘাটের কোনও বিপদ নেই, এটা বুঝতে পেরেছে। দেড় মাস সময় লাগল কুন্তলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। এই দেড় মাসে ভাল করে দেখা হল, কুন্তলের মাধ্যমে কালীঘাটে টাকা এসেছিল কিনা। যখন বুঝতে পারল, ওদের খেলাটা নিচুস্তরে ছিল, বহিষ্কার করা হল কুন্তল-শান্তনুকে। আর যাঁর কাছ থেকে ৫০ কোটির বেশি পাওয়া গেল, তিনি শুধুমাত্র সাসপেন্ড হলেন। এতেি বোঝা যায় দলের দৃষ্টিকোণটা কেমন। মানিকের গোটা পরিবার জেল খাটছে, এত বড় দুর্নীতির মাথা, অনুব্রত জেলে, মাছওয়ালা থেকে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি বানিয়েছেন, গরুপাচার করে দেশদ্রোহিতা করেছেন। এত বড় অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা হল না। কারণ তাতে কালীঘাটে বিপদ নামবে। চুনোপুটিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হল।"


পার্থ-মানিকে নরব, কুন্তল-শান্তনুর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ! প্রশ্ন বিরোধীদের


একই সুর ধরা পড়ে সিপিএম নেতা শমীক লাহিড়ির গলায়। তিনি বলেন, "প্রশ্ন তো স্বাভাবিক! দুর্নীতির দায়ে বহিষ্কার করতে হলে, তৃণমূলের গোটা দলটিকেই বহিষ্কার করতে হবে। এমন কোনও নেতা নেই দলে, যাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নেই। যাঁরা ধরে ধরে লুটেরা বানিয়েছে, তাদের কী হবে? একসঙ্গে ওঠা বসা, বাডি়তে যাতায়াত, পাড়া থেকে তুলে এনে যুব তৃণমূলের নেতা বানানো হয়েছে, তাদের কী হবে। আর এই বহিষ্কারের কোনও মূল্য আছে! আরাবুল ইসলামকেও বহিষ্কার করেছিল। তার পর আবার বিধায়ক হওয়ার টিকিট দিল। যাদের বহিষ্কার করল না, তাদের নাম বললে বিপদ হয়ে যাবে। যদিও নাম বললেও সিবিআই ব্যবস্থা নিতে পারছে না। কারণ দিল্লিতে বোঝাপড়া হয়ে রয়েছে।" আগামী দিনে বাংলার মানুষ তৃণমূলকে রাজ্য থেকে বহিষ্কার করবেন বলেও মন্তব্য করেন শমীক।


প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীর বক্তব্য, "এইগুলো কিছু নয়, বাংলার মানুষের মধ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে মুক্তি পেতে ছোটখাটো কিছু রাজনৈতিক ঘুষ দেওয়া হচ্ছে। দেখানো হচ্ছে যে, দিদি কত সৎ। কিন্তু কারও যদি ক্যান্সার হয়, তার ক্ষতে ব্যান্ডএইড লাগিয়ে লাভ হয় না। দিদির দল দুর্নীতির ক্যান্সারে আক্রান্ত। সেখানে এদের তাড়িয়ে লাভ হবে না। দিদির খোকাবাবুকে তাড়ানো উচিত আগে। এখনও তদন্তে কিছুই হয়নি। আমরা সিবিআই-ইডি-র তদন্তে সন্তুষ্ট নই। রুই, কাতলা-রাঘব বোয়াল কোথায় গেল।"  রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে তৃণমূলের বড় বড় নাম বেরিয়ে আসবে বলে দাবি অধীরের।