সৌমিত্র রায়, বিজেন্দ্র সিংহ ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: কেন্দ্রে নিজের দলের সরকার। আর কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থার বিরুদ্ধেই সরব হয়েছেন। তাতে বিজেপি-র অন্দরেই দিলীপ ঘোষকে নিয়ে অস্বস্তি বেড়েছে। সেই পরিস্থিতিতে দিলীপের প্রতি সহানুভূতির সুর তৃণমূলের। দলের নেতারা তো বটেই, তৃণমূলের মুখপত্রেও দিলীপের প্রতি সহমর্মিতা দেখানো হয়েছে।
সিবিআই-এর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিজেপি-র অস্বস্তি বাড়ায়েছেন দিলীপ
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি থেকে গরুপাচার মামলা, রাজ্যে তৎপরতা বেড়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (CBI) এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ED)। শাসকদলের একের পর এক নেতা-মন্ত্রীর নাম জড়িয়েছে তাতে। তা নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে যখন ধারাল আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি, সেই সময় সিবিআই-এর নিরপে৭ক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ।
সম্প্রতি সিবিআই-এর সঙ্গে ইডি-র তুলনা করতে শোনা যায় দিলীপকে। তৃণমূলের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের সেটিং ছিল, তার জন্যই কেন্দ্রীয় সরকার ইডি-কে রাজ্যে পাঠিয়েছে বলে মন্তব্য় করেন তিনি। সেই নিয়ে দলের অন্দরে সমালোচনার মুখে পড়লেও, নিদের অবস্থানে অনড় থেকেছেন দিলীপ। বরং আরও একধাপ এগিয়ে তাঁকে বলতে শোনা যায়, "কার CBI আমার দেখার দরকার নেই। পাবলিকের টাকায় চলছে। আমাদের দেশের একটা সংস্থা আছে, তার ওপর আমাদের ভরসা আছে। যখন ভরসা থাকে না, তখন আমরা প্রশ্ন তুলি।"
দিলীপ আরও বলেন, "আমরা কাউকে খুশি করার জন্য রাজনীতি করছি না। বাংলার সাধারণ মানুষের জন্য, বাংলার পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করছি। CBI যদি না করে সেই কাজ, আমি যদি জাস্টিস না পাই, আমি সে কথা বলব না? কার CBI আমার দেখার দরকার নেই।"
এ নিয়ে দিলীপের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে দেখা যায় রাজ্য বিজেপি-র নেতাদের। অনুপম হাজরা বলেন, "সিবিআই ভাল কাজ করছে। দিলীপ ঘোষের মতামত ব্যক্তিগত।"
এই আবহে দিলীপের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়েছে তৃণমূল। দলের মুখপত্র 'জাগো বাংলা'র সম্পাদকীয়তে ‘খালি কলসি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, 'দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি, বর্তমান সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি এবং ভোটের লড়াইয়ে সফল দিলীপ ঘোষকে কোণঠাসা করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।'
তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র বলেন, "দিলীপ ঘোষকে বিজেপিতে কোণঠাসা করার চেষ্টা অনেকদিন ধরেই চলেন। কিন্তু এই রাজ্যে বিজেপি বলতে দিলীপ ঘোষ। অন্য কেউ না। যখন বিজেপি-র একটা পতাকা লাগানোর লোক ছিল না তখন দিলীপ বিধানসভার ভোটে জিতে প্রমাণ করেছিলেন, বিজেপি যা পারে না দিলীপ তাই পারে। আজকে যারা বিজেপি করছে এরা সবাই দিলীপের লোক।"
তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, "দিলীপের উচিত পদত্যাগ করে বিজেপিকে ধাক্কা দেওয়া।" তাহলে তৃণমূল কি দিলীপকে নেবে? সৌগতর জবাব, "আগে পদত্যাগ করুন, আমরা তারপর ভেবে দেখব।"
দিলীপের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছে তৃণমূল
যদিও বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা জানিয়েছেন, দিলীপের মতামত, দলের মতামত নয়। তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া নিয়ে তিনি বলেন, "তৃণমূলের আহ্লাদ কেন? সিবিআই এখন ভাল কাজ করছে। ওনার ব্যক্তিগত মতামত, দলের মত বলে মনে করি না। দিলীপদার উচিত তৃণমূলের বক্তব্যের প্রতিবাদ করা।" কিন্তু এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেনননি দিলীপ। বরং মঙ্গলবার বিজেপি-র দফতরে কোর কমিটির বৈঠক থাকলেও, তিনি যোগ দেননি বলে শোনা গিয়েছে। তাতে তাঁকে নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে।