বিজেন্দ্র সিংহ, দীপক ঘোষ ও কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: পুরভোটের (Municipal Election) জেলাভিত্তিক নজরদারি কমিটির মাথায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abhishek Banerjee) না রাখা, তৃণমূলের সঙ্গে প্রশান্ত কিশোরের (Prashant Kishor) সংস্থার সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার জল্পনা, এসব ঘিরে তৃণমূলের (TMC) অন্দরের রাজনীতিতে এখন জোর শোরগোল। আর এই আবহেই এবিপি আনন্দে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় (Saugata Roy)। তাঁর মন্তব্য, ‘আইপ্যাকের (I-PAC) সঙ্গে কী চুক্তি ছিল, সে আমি জানি না। সেই চুক্তি ভেঙে গেছে। ক্ষতি না হলেও অসুবিধা তো হবেই। পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) এবার তৃণমূলের জয়ের জন্য উল্লেখযোগ্য অবদান আইপ্যাকের।’


আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) অগোচরে তৃণমূলের অফিশিয়াল পেজে যেভাবে একটি প্রার্থী তালিকা বেরিয়ে গেল এবং দলকে সেই তালিকা আসল নয় বলে জানাতে হল, তার জন্য প্রশান্ত কিশোরের সংস্থাকেই দায়ী বলে মনে করছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা। জানা গিয়েছে, তৃণমূল নেত্রীও একই মত পোষণ করেন। বিষয়টি এত দূর গড়িয়েছে যে ক’দিন আগে প্রশান্ত কিশোর টেক্সট মেসেজ পাঠিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানান, তৃণমূলের সঙ্গে বাংলা, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে তাঁরা আর কাজ করতে চান না। সূত্রের খবর, তৃণমূলনেত্রী এই বার্তাকে কার্যত হুঁশিয়ারি বলে মনে করেন এবং তৎক্ষণাৎ প্রশান্ত কিশোরকে জবাব দেন ‘থ্যাঙ্ক ইউ’। 


আরও পড়ুন মদন মিত্রর আক্রমণের জবাব সৌগত রায়ের


যদিও, এরই মধ্যে প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার হয়ে ব্যাট ধরেছেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়। তাঁর বক্তব্য, ‘আইপ্যাকের কাজ দেখেছি। অসাধারণ। আমি ভারতের রাজনীতি ৬০ বছর ধরে লক্ষ্য করছি, এত অর্গানাইজড সেট আপ আগে দেখিনি। যারা আইপ্যাকের হয়ে কাজ করে, সবাই উচ্চযোগ্যতা সম্পন্ন। আইআইটি, আইআইএম, ন্যাশনাল ল স্কুলের গ্র্যাজুয়েট, দিল্লি স্কুল অফ ইকনমিকসের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট, এরা সব এসেছে রাজনীতিতে। পয়সা কামানোর জন্য নয়, এরা এমনিই ৫ লক্ষ টাকা মাইনে পাবে। পাবলিক স্পেসে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে এসেছে। এরা খুব ভাল কাজ করেছে। এদের সার্ভে সিস্টেম, বিধানসভার প্রার্থীদের ব্যাপারে যা রিপোর্ট দিয়েছিল, সেই সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে ভাল ক্যান্ডিডেট হয়েছে। বিধানসভায় লিস্ট নিয়ে তো কোনও প্রবলেম হয়নি।’


কামারহাটির প্রার্থী বিক্ষোভের জন্য সরাসরি সৌগত রায়কে কাঠগড়ায় তুলেছেন সেখানকার তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। তিনি বলেন, ‘পিকে-কে সরিয়ে উত্তর ২৪ পরগনায় সৌগত রায়কে দেখতে দিল। উনি কোনটা দেখবেন? কোথাও যাবার নেই, অর্জুনের মাছের চোখের মতো টার্গেট কামারহাটি। কেন কামারহাটি? কারণ, কামারহাটি হচ্ছে মাখন। দইয়ের ওপরে মাখনের মতো। ওটাকে নষ্ট করতে হবে।’


এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে অবশ্য সৌগত রায় বলেছেন, ‘আমি আই প্যাককে লিস্ট পাঠিয়েছিলাম। পরে জেলা সভাপতি পার্থ ভৌমিককে পাঠিয়েছিলাম। আমি এই নিয়ে একবারই পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সীর সঙ্গে কথা বলি। ওরা বলে, লিস্ট ফাইনাল হয়ে গেছে। আমি বললাম, তাহলে আমার সাজেশনের আর দরকার নেই। পরে বিভিন্ন বিধায়কের অনুরোধে আমি দু-চারটে এসএমএস করেছি প্রার্থী বদলের ব্যাপারে। এছাড়া তালিকা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। আমার নাকি উত্তর ২৪ পরগনার দায়িত্ব ছিল। আগেও ছিল না, এখনও নেই।’


পুরভোটের আগে প্রার্থীতালিকা নিয়ে অসন্তোষের আবহে সৌগত রায়ের বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার ঘিরে তপ্ত রাজ্য রাজনীতি।